টি-২০ বিশ্বকাপের শুরু থেকেই মাঠের তারকা! আজও সমান দাপটে খেলছেন যে ক্রিকেটাররা
T20 World Cup: ছিলেন ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে, রয়েছেন ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও! তালিকায় ভারতের দুই।
আন্তর্জাতিক স্তরে ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট সংস্করণ হলো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। কুড়ি ওভারের খেলা হওয়ায় এই খেলার উত্তেজনা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনেক বেশি। ফলত মাঠে দর্শক টেনে আনাই হোক বা টেলিভিশনের সামনে দর্শককে আটকে রাখাই হোক, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জুড়ি মেলা ভার। ২০০৩ সালে কাউন্টি ক্রিকেটে প্রথম টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট আনা হয়। দর্শক সাদরে গ্রহণ করেছিল ক্রিকেটের এই ক্ষুদ্র সংস্করণটিকে। অল্প সময়ের খেলা হওয়ায় অফিস-ফেরতা লোকজন সন্ধেবেলা মাঠে ঢুকে খেলা দেখে রাত্রিবেলার মধ্যে বাড়ি যেতে পারতেন। ইংল্যান্ডে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। এরপর প্রথম টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হয় ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের মধ্যে। ইংল্যান্ডের সমাদর পেলেও আন্তর্জাতিক স্তরে কিন্তু প্রথমে অনেক কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়েছিল এই ফরম্যাটকে। অনেকেই বলেছিলেন, এইভাবে ক্রিকেটের আভিজাত্য নষ্ট করা হচ্ছে। তবে যে যাই বলুক, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট অনেক ঝড়ঝাপটা সামলে এগোতে থেকেছে। এরপর ২০০৬ সালে জোহানেসবার্গে ভারত প্রথম টি-টোয়েন্টি ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচ খেলে সাউথ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বীরেন্দ্র শেহবাগ।
আইসিসি-র অন্তর্ভুক্ত সব দেশই কয়েকটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে নেওয়ার পর আইসিসির তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করার। ঠিক হল ২০০৭-এ সাউথ আফ্রিকাতে অনুষ্ঠিত হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন অনেকে। এমনকী, সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা হয়েছিল ভারতের তরফ থেকে। আইসিসি-তে যখন ভোটাভুটি হয় তখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল বিসিসিআই। মজার বিষয় দেখুন, বর্তমানে ভারতের টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ অর্থাৎ আইপিএল বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ। যাই হোক, সেই ভোটাভুটিতে টি-টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপের সিদ্ধান্ত পাশ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে দল নামাতে হয় ভারতকে। শোনা যায়, সেই টুর্নামেন্টে সচিন, সৌরভ, রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষ্মণ, অনিল কুম্বলে, জাহির খানদের মতো তারকাদের অংশগ্রহণ করতে নিষেধ করেছিল বোর্ড। পরিবর্তে মহেন্দ্র সিং ধোনি, যুবরাজ সিং, গৌতম গম্ভীর, রবিন উথাপ্পা, রোহিত শর্মা, ইরফান পাঠান, শ্রীসন্থ, দীনেশ কার্তিক সম্বলিত একটি তরুণ দলকে তারা জোহানেসবার্গ পাঠায়। ভারত টি-টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপে অংশগ্রহণ করে এবং বাকিটা ইতিহাস। সেই প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে কেটে গিয়েছে ১৫ বছর। এই সুদীর্ঘ সময়ে অধিকাংশ খেলারই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। কিন্তু এমন হাতে গোনা কয়েকজন ক্রিকেটার আছেন, যাঁরা সেই ১৫ বছর আগে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন এবং এই বছর অনুষ্ঠিত হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও নিজেদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। আসুন চিনে নেওয়া যাক এমন কয়েকজন ক্রিকেটারকে।
আরও পড়ুন: ফাইনালে জয় থেকে শুরুতেই বিদায়! কেমন ছিল ভারতীয় দলের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সফর
রোহিত শর্মা (ভারত)
২০০৭ সালে মহেন্দ্র সিং ধোনি-র নেতৃত্বে ভারত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জিতেছিল। সেই দলের অন্যতম তরুণ ব্যাটসম্যান ছিলেন রোহিত শর্মা। বর্তমানে বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম বড় ব্যাটার রোহিত শর্মা। আইপিএল এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অত্যন্ত সফল এই ওপেনার ব্যাটার। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিনটি শতরান আছে রোহিতের। রোহিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মোট ৩৩টি ম্যাচ খেলেছেন এবং ৩৮.৫০ গড়ে ৮৪৭ রান করেছেন। এর থেকেই বোঝাই যায় এই ফরম্যাটে কতটা ভয়ংকর হতে পারেন তিনি। এছাড়াও ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হল অধিনায়ক হিসেবে রোহিত শর্মার প্রথম বড় এবং আইসিসি টুর্নামেন্ট।
ভারতীয় দল বিশ্বকাপ জিতেছে ১১ বছর হয়ে গেল। শেষবার আইসিসি ট্রফি জেতার পর ৯ বছর কেটে গিয়েছে। টিম ইন্ডিয়া ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিল। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছে যাওয়া টিম ইন্ডিয়ার কাছে তাই সমর্থকদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। রোহিত কি পারবেন ২০০৭ সালের পুনরাবৃত্তি করতে? এই প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে।
দীনেশ কার্তিক (ভারত)
এভাবেও যে ফিরে আসা যায়, দীনেশ কার্তিককে না দেখলে বোঝা যেত না। ৩৭ বছর বয়সেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কামব্যাক করা যায়, একথা কেউ ভাবতেও পারে না। এবছর আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর-এর হয়ে দারুণ পারফর্ম করে ভারতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ধারাভাষ্য দিয়েছিলেন কার্তিক। কিন্তু কে ভেবেছিল, পরের বছর অনুষ্ঠিত হতে চলা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলবেন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। ২০০৭ সালের সেই বিশ্বজয়ী দলে ছিলেন দীনেশ কার্তিক-ও। ধোনির সঙ্গে সেকেন্ড কিপার হিসেবে গিয়েছিলেন সেবার। এবার ধোনি না থাকলেও রয়েছেন ঋষভ পন্থ। তবে বিগত কয়েক মাসে আইপিএল এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যেরকম পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন দীনেশ কার্তিক, আশা করাই যায়, বিশ্বকাপে প্রথম থেকেই দলে খেলবেন তিনি।
শাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)
সাম্প্রতিক সময়ে দেশ বিভিন্ন বিতর্কের কেন্দ্রে থাকলেও এই কথা অস্বীকার করার জো নেই যে, তিনি বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ফর্মে থাকলে ব্যাট এবং বল দুই হাতেই তাণ্ডব করতে পারেন শাকিব। এর জলজ্যান্ত উদাহরণ আমরা পেয়েছিলাম ২০১৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে। তাই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে বিরোধিতা করা সত্ত্বেও শাকিবের ওপর ভরসা রেখেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। এই বছর বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি। সেই ২০০৭ সাল থেকেই টানা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলছেন বাংলাদেশের শাকিব আল হাসান। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অন্যতম সফল অলরাউন্ডার তিনি। শাকিব টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৩১টি ম্যাচ খেলে ২৬.৮৪ গড়ে ৬৯৮ রান করেছেন উইকেট নিয়েছেন এবং ৪১টি।
মার্টিন গাপ্টিল (নিউজিল্যান্ড)
২০০৭ টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নিউজিল্যান্ড স্কোয়াডে থাকলেও খেলার সুযোগ পাননি মার্টিন গাপ্টিল। বর্তমানে ৩৬ বছর বয়সে এসেও নিউজিল্যান্ড দলের অন্যতম ভরসাযোগ্য ব্যাটসম্যান তিনি। শাকিবের মত তিনিও এই নিয়ে টানা ৭টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলছেন। সাম্প্রতিককালে ফর্ম অতটা ভালো না থাকলেও, গাপ্টিলের পরিসংখ্যান ঈর্ষণীয়। এছাড়াও বিশ্বকাপের মঞ্চে তিনি বরাবরই ভাল খেলে এসেছেন। বিশ্বকাপের মঞ্চে তিনিই প্রথম ডবল সেঞ্চুরি মেরেছিলেন। এত ম্যাচ খেলার পরেও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার গড় ৩২। এর থেকেই বোঝা যায় দরকারে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন তিনি।
শন উইলিয়ামস (জিম্বাবোয়ে)
জিম্বাবোয়ে ক্রিকেটের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অলরাউন্ডারদের মধ্যে শন উইলিয়ামসের নাম অগ্রগণ্য। ২০০৭ বিশ্বকাপে প্রসপার উৎসেয়ার জিম্বাবোয়ে দলে ব্রেন্ডন টেলর, এলটন চিগুম্বুরা, হ্যামিল্টন মাসাকাদজাদের পাশাপাশি শন উইলিয়ামসও ছিলেন। কিন্তু খেলার সুযোগ পাননি। তবে পরবর্তী সময়ে যখনই দেশের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছেন নিজের সেরাটা উজাড় করে দিয়েছেন। শুধুমাত্র জিম্বাবোয়ে নয়, সমগ্র আফ্রিকা মহাদেশের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে বিবেচিত হন ইনি। নির্বাসনের কারণে এই বিশ্বকাপে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন না ব্রেন্ডন টেলর। অবসর গ্রহণ করেছেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা, দলে নেই ডোনাল্ড তিরিপানোর মতো বোলার-ও। এহেন অবস্থায় দেখার বিষয় এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলের জন্য কতটা অবদান রাখতে পারেন শন উইলিয়ামস।