ট্যাটু করালে সত্যিই ক্যান্সার হতে পারে? যা বলছে নতুন গবেষণা
Tattoos Cancer: লিম্ফ নোডগুলিতে জমা হওয়ার আগে ট্যাটুর কালি ত্বক থেকে রক্তে স্থানান্তরিত হওয়ার কারণেই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে।
ছোট্ট, বড়, সারা শরীর জোড়া, রঙিন — ট্যাটু এই মুহূর্তে অত্যন্ত সাধারণ একটি বিষয়। ট্যাটু নিয়ে নানা ভুল ধারণা, যেমন রক্ত দেওয়া, ইতিমধ্যেই ভেঙেছেন বিজ্ঞানীরা। তবে একটি নতুন গবেষণায় বেশ চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বিজ্ঞানী, চিকিৎসকদের কপালে। ওই নতুন গবেষণা বলছে, ট্যাটু করলে পরবর্তী জীবনে ত্বকের ক্যান্সার বা লিম্ফোমা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। যমজ সন্তানদের মধ্যে এই গবেষণা করে দেখা গেছে ট্যাটু করা ভাইবোনদের মধ্যে এই অসুস্থতার হার বেশি।
গবেষক জ্যাকব ভন বোর্নম্যান হেজেলবর্গ বলছেন, "আমাদের গবেষণা পদ্ধতির অনন্য একটি দিক হলো যে আমরা যমজের মধ্যে তুলনা করতে পারি যেখানে একজনের ক্যান্সার আছে, তবে তাদের দু'জনের অনেক সাধারণ জেনেটিক এবং পরিবেশগত কারণও রয়েছে।"
ড্যানিশ টুইন ট্যাটু কোহর্টের তথ্য ব্যবহার করে, গবেষকরা ২,৩৬৭ জন যমজদের মধ্যে ক্যান্সার নির্ণয় শুরু করেছিলেন। দেখা গেছে, ট্যাটু করা ব্যক্তিদের তাদের ট্যাটু করা না করা যমজদের তুলনায় ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ৩.৯১ গুণ বেশি। গবেষকরা তারপরে ১৯৬০ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণকারী ৩১৬ জন ড্যানিশ যমজ সন্তানের তথ্য ব্যবহার করে আরেকটি বিশ্লেষণ করেন, যেখানে অন্ততপক্ষে একজন ভাই বা বোন আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এই দলটির মধ্যেও দেখা যায়, ট্যাটু করা ব্যক্তিদের মধ্যে ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ১.৬২ গুণ বেশি ছিল। পাশাপাশি, ট্যাটুর আকারও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে বলে মত গবেষকদের। যমজ সন্তানদের মধ্যে যাদের ট্যাটুর আকার হাতের তালুর চেয়ে বড়, তাদের ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ২.৩৭ গুণ বেশি এবং লিম্ফোমা ধরা পড়ার আশঙ্কাও ২.৭৩ গুণ বেশি।
গবেষকদের বিশ্বাস, লিম্ফ নোডগুলিতে জমা হওয়ার আগে ট্যাটুর কালি ত্বক থেকে রক্তে স্থানান্তরিত হওয়ার কারণেই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে। এই লিম্ফনোডগুলি আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি মূল উপাদান যা শরীরকে ক্ষতিকারক পদার্থ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন- ট্যাটু বলে দেবে আপনার রক্তচাপ! অভাবনীয় আবিষ্কার এবার হাতের মুঠোয়
"আমরা দেখতে পাচ্ছি যে কালির কণাগুলি লিম্ফ নোডগুলিতে জমা হয় এবং আমাদের সন্দেহ, শরীর এই কালির কণাগুলিকে বহিরাগত পদার্থ বা ফরেন বডি মনে করে,” বলছেন আরেক গবেষক হেনরিক ফ্রেডেরিকসেন। এর মানে হচ্ছে, দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থ ক্রমাগত কালির প্রতি সাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে। গবেষকরা বলছেন, এই যে ক্রমাগত সাড়া দেওয়ার চাপ, তা লিম্ফ নোডগুলির কার্যকারিতাকে দুর্বল করতে পারে বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা ঘটাতে পারে কিনা এখনও তাঁরা তা জানেন না।"
অনেক সময় যাঁরা ব্রেস্ট ইমপ্লান্ট করান, তাঁদের মধ্যেও বিরল ধরনের লিম্ফোমা সৃষ্টি হতে পারে। গবেষকরা মনে করেন, ট্যাটুর কালি লিম্ফ নোডগুলিতে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে। গবেষক সাইন বেডস্টেড ক্লেমেনসেন বলেছেন, "ট্যাটু যত বড় এবং ট্যাটু যত বেশি সময় ধরে থাকে দেহে, লিম্ফ নোডগুলিতে তত বেশি কালি জমা হয়। আমাদের গবেষণায়, আমরা ক্যান্সারের ঘটনা এবং নির্দিষ্ট কালির রঙের মধ্যে একটি স্পষ্ট যোগসূত্র দেখতে পাইনি ঠিকই, তবে এর মানে এই নয় যে রঙের ভূমিকা নেই।" তিনি আরও জানাচ্ছেন, অন্যান্য গবেষণা থেকে আগেই জানা গেছে যে কালিতে ক্ষতিকারক পদার্থ থাকতে পারে, যেমন লাল কালি হামেশাই অ্যালার্জির সৃষ্টি করে। তবে গবেষকরা আরও বলছেন, ট্যাটু মানেই ক্যান্সার কিনা তা প্রমাণ করতে, বা নিশ্চিত হতে আরও গবেষণার প্রয়োজন। তা বলে দেহে রাসায়নিক রঙ বাইরে থেকে প্রবেশ করানোর কোনও বিরূপ প্রভাব নেই দেহে তা বলা যায় না।