অভিনেত্রীর উপস্থিতিতেই মর্মান্তিক পরিণতি! এই অভিনেতার মৃত্যু আজও রহস্যই...

Actor Kunal Singh Death Mystery: প্রথম সিনেমাতেই সেই সময়ের জনপ্রিয় বলিউড অভিনেত্রী সোনালি বেন্দ্রের বিপরীতে তাঁর অভিনয়।

মুম্বইয়ের সুদৃশ্য অ্যাপার্টমেন্ট। অভিনেতার বাড়ি। বন্ধু, সহকর্মীরা এসেছেন। জোরদার মিটিং চলছে কস্টিউম ডিজাইনার, স্ক্রিপ্ট রাইটারদের সঙ্গে। রয়েছেন অভিনেত্রীও। মিটিং ফুরোয়, একে একে বন্ধুরা চলে যান সকলেই নিজ নিজ ঠিকানায়। থেকে যান অভিনেত্রী। এর আরও ঘণ্টাখানেক পর সেই অভিনেতার দেহ ঝুলতে দেখা যায় সিলিং থেকে। সিনেমায় তেমন খাতা খুলতে পারেননি কোনওদিনই। তবে একটি সিনেমা বেশ নজর টেনেছিল, এদিক সেদিক থেকে কাজও যে একেবারে জুটছিল না তা নয়। এমনকী সেই সময় একটি সিনেমার শ্যুটিংও করছিলেন। তবু, জ্যোৎস্নায় সে দেখিল কোন ভূত? মাত্র ৩১ বছরেই শেষ জীবন। বলিউডের অভিনেতা কুণাল সিং নেই আজ ১৫ বছর হয়ে গেল। তবু রহস্য মিটল না।

মুম্বইয়ের লোখন্ডওয়ালা কমপ্লেক্সে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন কুণাল। সেই বাড়িতে, নিজেরই ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় মেলে তাঁর দেহ। দেহ প্রথম দেখেন তাঁর বাড়িতে সেই সময় উপস্থিত একমাত্র চরিত্রটি। অভিনেত্রী লাভিনা ভাটিয়া। নতুন একটি সিনেমায় লাভিনার সঙ্গেই কাজ করার কথা ছিল কুণালের। পুলিশ আসে, তদন্ত হয়। সব দেখে শুনে ওশিওয়ারা পুলিশ জানিয়ে দেয়, কুণাল আত্মহত্যাই করেছেন, নিজেই নিজের গলায় ফাঁস দিয়েছেন। একটু আগেই যে মানুষটি মিটিং করেছেন, নতুন সিনেমার পোশাক ভেবেছেন, এমনকী শ্যুটিং চলছে একটি সিনেমার, তিনি হঠাৎ আত্মহত্যা করলেন কেন?

আরও পড়ুন- ৩ দিন ধরে পচেছিল দেহ, লাশ নিতে আসেননি কেউ! ঠিক কী ঘটেছিল পারভীন বাবির সঙ্গে?

কুণালের বাবা রাজেন্দ্র সিং অভিযোগ করেছিলেন, যখন হাসপাতাল থেকে তাঁর ছেলের মৃতদেহ নিয়ে আসতে যান তিনি, তখন তিনি কুণালের বাহুতে এবং বুকে বেশ কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, ছেলেকে কেউ শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং পরে লাশটি ফ্যান থেকে ঝুলিয়ে দেয় যাতে বিষয়টি আত্মহত্যার মতোই দেখায়। পুলিশ এসব উড়িয়ে দেয়। দেহ নামাতে গিয়েই নাকি ওই সামান্য কিছু আঘাত লেগে গিয়েছে বলে জানিয়ে দেয়। কিন্তু বাবা লেগে থাকেন, একের পর এক অভিযোগ ও সন্দেহের কথা প্রকাশ্যে আনতে থাকেন। বলেন, কুণালের হত্যার পিছনে রয়েছে জমি মাফিয়ারা। কুণাল কারজাতে একটি জমির চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছিলেন, হতেও পারে এই জমি ঘিরেই খুন!

তবে সবচেয়ে কঠিন খটকাটি ছিল, লাভিনার উপস্থিতি। ঘটনার সময় বাড়িতে একমাত্র ছিলেন কুণালের বন্ধু এবং সহ-অভিনেত্রী লাভিনা ভাটিয়া। পুলিশকে লাভিনা বলেছিলেন, কুণাল যখন আত্মহত্যা করেন তখন তিনি বাথরুমে ছিলেন। সকলেই যখন মিটিং সেরে চলে যান, কেন রয়ে গিয়েছিলেন লাভিনা? লাভিনার বাথরুমে যাওয়ার পরে আত্মহত্যা করেন কুণাল। ১০ মিনিট ধরে বাথরুমেই বা কী করছিলেন লাভিনা? মাত্র ১০ মিনিটে একজন সমস্ত আয়োজন করে নিজেকে শেষ করে দিল, লাভিনা দেখতে বা শুনতেও পেলেন না? সে সময় কুণালের স্ত্রী দুই সন্তানকে নিয়ে নিজের বাবা মায়ের কাছে গিয়েছিলেন। কুণালের স্ত্রী অনুরাধার অভিযোগ ছিল, লাভিনার সঙ্গে সম্পর্কের জেরেই তিনি বাড়ি ছেড়ে সন্তানদের নিয়ে চলে গিয়েছিলেন। যাওয়ার আগে তাঁর সঙ্গে কুণালের ঝামেলাও হয়েছিল। কিন্তু লাভিনার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ প্রমাণ করা যায়নি। অথচ কুণলারে ফ্ল্যাটে তৃতীয় কোনও ব্যক্তি উপস্থিত থাকার প্রমাণও মেলেনি। কয়েক মাস আগেও নাকি কুণাল একবার হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন।

লাভিনা আসলে কে? বহুদিন থেকেই কুণাল আর লাভিনার সম্পর্ক নিয়ে হিন্দি সিনেমার অন্দরে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল। কুণাল বিবাহিত, দুই কন্যাও রয়েছে তাঁর। তবু লাভিনার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা বাড়ে, যত বাড়ে পরিবার থেকে, স্ত্রীর থেকে দূরত্ব বাড়তে থাকে। যদিও পরিবার সবটা এড়িয়ে যায় পরে। জন্ম ১৯৭৬ সালে, হরিয়ানায়। ২০০৩ সালে বলিউডে পা রাখেন কুণাল। তার আগে দক্ষিণ ভারতের সিনেমায় অভিষেক হয়ে গিয়েছে তাঁর। ১৯৯৯ সালের রোমান্টিক তামিল সিনেমা কাধলার ধিনাম তাঁর প্র্যহম সিনেমা। প্রথম সিনেমাতেই সেই সময়ের জনপ্রিয় বলিউড অভিনেত্রী সোনালি বেন্দ্রের বিপরীতে তাঁর অভিনয়। সদ্য যৌবনে পা দেওয়া এক ছাত্রের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন কুণাল। ইন্টারনেট মারফৎ সোনালি বেন্দ্রের চরিত্রের প্রেমে পড়েন তিনি। ২০০০ সালে মুক্তি পায় এই সিনেমাটির বলিউড রিমেক দিল হি দিল মে। কাধলার ধিনামের সাফল্যের পর, কুণাল পরভাই ওন্দ্রে পোথুমে (২০০১) এবং পুন্নাগাই দেশম (২০০২)-এর মতো তামিল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। সেসব সিনেমাই তুলনামূলকভাবে সফল হয়েছিল।

আরও পড়ুন- এখনও নজর সুশান্ত মামলায়? কোন উত্তর খুঁজছে সিবিআই

তারপর একের পর এক ফ্লপ! পেসাধা কান্নুম পেসুমে, এঙ্গে এনাধু কবিতাই এবং আনর্চিগালের মতো অনেকগুলি ফ্লপ ছবির পর বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র শুরু হলেও তা পরে স্থগিত করে দেওয়া হয়। অভিনয়ে বাজার খারা দেখে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের সহকারী সম্পাদক হিসাবে কাজ করেন কুণাল এবং প্রযোজনার দিকেই মন দেন। তামিল ভাষায় তাঁর সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ছিল নানবানিন কাধালি, ২০০৭ সালে মুক্তি পায় সেটি।

বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আত্মহত্য! কুণাল তাঁর মৃত্যুর এক ঘণ্টা আগে সঙ্গীত পরিচালক ডাবু মল্লিককে একটি টেক্সট মেসেজ পাঠান। জানতে চেয়েছিলেন, তাঁর সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনার গতি কেমন, কোনদিকে এগোচ্ছে? কবে শুনবেন সেই সুর? যিনি এতটা এগিয়ে রয়েছেন নিজের কাজকর্ম নিয়ে, মাত্র ১০ মিনিটে কীভাবে নিজেকে শেষ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন? প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁর বাবা, প্রশ্ন উঠেছিল বলিউডেও। তবু, অধরাই রয়ে গেল রহস্য। অভিনেত্রী লাভিনা ভাটিয়াও ধীরে ধীরে আলো থেকে সরে আসেন। থেকে যায় কেবল এক অন্ধকার, যেখানে তলিয়ে গিয়েছেন কুণাল, কোনওদিন সেই অন্ধকারের রহস্য উদ্ধার হলো না আর।

More Articles