কোনওদিন ডোবেইনি আসল টাইটানিক! আড়ালে ছিল কোন ষড়যন্ত্র?
Titanic: বিশেষজ্ঞরা বলেন, আকার এবং আয়তনের প্রায় প্রায় সমান হওয়ার কারণে কেউ ধরতেই পারেনি, বেলফাস্ট বন্দর থেকে অলিম্পিক বেরোয়নি বরং বেরিয়েছিল নাকি টাইটানিক।
টাইটানিক, জেমস ক্যামেরনের এই অসাধারণ কীর্তি বিষয়ে জানেন না এরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না বললেই চলে। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়ার পরে ২০১০ সাল পর্যন্ত একটানা হলিউডের সবথেকে বেশি জনপ্রিয় সিনেমার তকমা বহন করতে সক্ষম হয়েছিল পরিচালক জেমস ক্যামেরনের এই এপিক সিনেমাটি। ২০১০ সালে অবতার এবং তারপর ২০১৯ সালে অ্যাভেঞ্জার্স এন্ডগেম এই ছবিটিকে টেক্কা দিয়ে এগিয়ে গেলেও এখনও মানুষের মনে টাইটানিকের একটা আলাদা জায়গা আছে। আইকনিক জ্যাক এবং রোজের চরিত্রে আজও সারা বিশ্বের মানুষের কাছে জনপ্রিয় লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও এবং কেট উইন্সলেট। হাজার প্রশ্ন, হাজার বিতর্ক সত্বেও জেমস ক্যামেরনের এই অমর সৃষ্টি আজও সকলের মনে এক আলাদা স্থানে দাঁড়িয়ে আছে।
তবে টাইটানিক সিনেমায় শুধু যে জ্যাকের মৃত্যু রহস্য নিয়ে বিতর্ক রয়েছে তা কিন্তু নয়। এই আনসিংকেবল জাহাজ ডুবলো কী করে সেটিই আদতে বিশাল বড় ষড়যন্ত্র ইতিহাসের পাতায়। ১১০ বছরেরও আগে ১৯১২ সালে সত্যিই কি ডুবেছিল 'শিপ অফ ড্রিমস' টাইটানিক? নাকি এই টাইটানিক ডোবার পিছনে ছিল বিশাল ষড়যন্ত্র, এখনও পর্যন্ত এ বিষয়টি মানুষের অধরা। টাইটানিকের মতো এক বিশাল বড় জাহাজ ডোবার একমাত্র কারণ ছিল হিমশৈলের ধাক্কা। অনেকে আবার মনে করেন শীতের রাতে অরোরা বোরিয়ালিস বা সুমেরু প্রভার কারণে সম্পূর্ণ দিকভ্রষ্ট হয়ে পড়েছিল টাইটানিক। তবে অনেকেই মনে করেন, টাইটানিক নয় বরং সেদিন ডুবেছিল টাইটানিকের মতোই দেখতে আরও একটি জাহাজ। কিন্তু সকলের নাকের ডগা দিয়ে এরকম এক বিশাল বড় ষড়যন্ত্র ঘটে গেল কীভাবে? এই ষড়যন্ত্রের তত্ত্বই আজকের মূল আলোচ্য।
১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল, টাইটানিকের ক্যাপ্টেন বুঝতে পারলেন কোনও একটা অঘটন ঘটে গেছে। সাউদাম্পটন বন্দর থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশে যাওয়ার পথে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে হিমশৈলের ধাক্কা লাগল শিপ অফ ড্রিমসের গায়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সম্পূর্ণ সলিল সমাধি হলো এই বিশাল বড় জাহাজের। কিন্তু, বিশেষজ্ঞদের মতে যে জাহাজটি ডুবেছিল সেটা আদতে টাইটানিক নয়, বরং সেটা ছিল টাইটানিকের আদলে তৈরি করা অলিম্পিক জাহাজ। যে জাহাজটি কখনও ডুববে না, সেরকম একটা জাহাজ হঠাৎ করে ডুবে গেল! ভোজবাজি নাকি? অনেকেই মনে করেন পুরোটাই নাকি এই জাহাজ কোম্পানির বীমার অর্থ তোলার কায়দা। কিন্তু কীভাবে? একটা জাহাজের পরিবর্তে অন্য একটা জাহাজ ডুবিয়ে কিভাবে বীমার অর্থ আদায় সম্ভব?
আরও পড়ুন- ভারতের এই গ্রামে বিচার হয় স্বয়ং দেবতাদের! কড়া শাস্তি পান দেবদেবীরা
চলুন, আরও ৫ বছর পিছনে যাই। সময়টা ১৯০৭ সালের মাঝামাঝি কোনও একটা সময়। প্রতিযোগী জাহাজ কোম্পানিকে টেক্কা দিতে তিনটি বিশালাকৃতির জাহাজ তৈরি করার পরিকল্পনা করল জেপি মরগানের হোয়াইট স্টার লাইন কোম্পানি। তিনটি জাহাজের নাম প্রায় একইরকম - টাইটানিক, অলিম্পিক এবং ব্রিটানিক। এই জাহাজগুলি আদতে খুব একটা দ্রুত ছিল না। কিন্তু আকারে এতটাই বড় ছিল যে সকলের চোখে একেবারে ধাঁধা লাগিয়ে দিয়েছিল। সেই যুগে এত বড় জাহাজ যে সম্ভব, তা মানুষ কল্পনাও করতে পারত না। তার মধ্যে, তখনকার দিনের জাহাজগুলির থেকে বিলাসিতাতেও এই জাহাজ ছিল এক কাঠি উপরে।
জাহাজ তৈরি হয়ে গেল খুব তাড়াতাড়ি। ১৯১১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর, জলযাত্রায় নামল সিরিজের দ্বিতীয় বৃহত্তম জাহাজ অলিম্পিক। কিন্তু, সেখানেই হয়ে গেল একটা ছোট্ট গণ্ডগোল। পঞ্চম যাত্রায় ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ হকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে জাহাজটির প্রায় যায় যায় অবস্থা। কোনও ভাবে, বিশাল বড় বড় দু'খানা ছিদ্র নিয়ে সাউদাম্পটন বন্দরে ফিরল এই অলিম্পিক জাহাজ। দু'টো ছিদ্র নিয়ে তো আর জাহাজ নামানো যায় না। তাই খরচ তোলা আবশ্যক হয়ে পড়ল জেপি মরগানের কাছে। কিন্তু বীমা কোম্পানি টাকা দিতে নারাজ, কারণ তারা মনে করলেন, সমস্ত দোষটাই সেই কোম্পানির, তাই বীমার অর্থ তারা দেবে না। এইবারে চাপে পড়লেন জেপি মরগান। টাইটানিক তৈরির কাজ প্রায় শেষ, প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করা হয়ে গিয়েছে। অনেকে বুকিং করে ফেলেছেন। এই পরিস্থিতিতে শুরু হলো এক নতুন ফন্দি ফিকির।
পরিকল্পনা হলো পৃথিবীর অন্যতম বড় জাহাজ ষড়যন্ত্রের। ঠিক হলো, টাইটানিক নয় বরং সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা দেবে আহত অলিম্পিক। ১৯১২ সালের ৭ মার্চ, হোয়াইট স্টারলাইন দাবি করল, বেলফাস্ট বন্দর থেকে সারাই হয়ে যাওয়ার পরে সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়েছে অলিম্পিক। সন্দেহের শুরু এখান থেকেই। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আকার এবং আয়তনের প্রায় প্রায় সমান হওয়ার কারণে কেউ ধরতেই পারেনি, বেলফাস্ট বন্দর থেকে অলিম্পিক বেরোয়নি বরং বেরিয়েছিল নাকি টাইটানিক। টাইটানিক এবং অলিম্পিকের এই হেরাফেরি ইতিহাসের পাতায় কোথাও একটা চাপা পড়ে গেলেও সমসাময়িক ব্রিটিশ সাংবাদিক এবং সাহিত্যিকদের চোখ এড়ায়নি এই জাহাজবদল।
আরও পড়ুন- রাজকুমারী ডায়নার হত্যায় হাত ছিল স্বয়ং রানি এলিজাবেথের? আজও যে প্রশ্নে তোলপাড় বিশ্ব
খবরের কাগজে বেশ কিছু জায়গায় লেখালেখি হলেও খুব একটা প্রভাব পড়েনি। তারপরেই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ১৯১২ সালের এপ্রিল, সাউদাম্পটন বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করল টাইটানিক, থুড়ি অলিম্পিক। কিন্তু সেই সময় থেকেই জাহাজের বহু কর্মী নাকি জানতে পেরে গিয়েছিলেন, এই জাহাজটি টাইটানিক নয়, অলিম্পিক। একে একে ইস্তফা দিতে শুরু করলেন জাহাজের বহু কর্মী। অনেকে বলেন, তারা নাকি এই জাহাজ ডুবির ব্যাপারটি জানতে পেরে গিয়েছিলেন আগে থেকেই। টাইটানিক জাহাজের প্রথম সফরে সফরসঙ্গী হওয়ার কথা ছিল জেপি মরগানের। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে শেষ মুহূর্তে তিনি পিছিয়ে এলেন। বেশ কিছু ভিভিআইপি নিজেদের বুকিং ক্যানসেল করে ফেললেন। ভিতরের খবর আস্তে আস্তে রটে যাচ্ছিল। কিন্তু তাহলে কী করে হবে, সাংবাদিক থেকে শুরু করে সবাই তো একেবারে ছিঁড়ে খাবে!
ব্যাক আপ প্ল্যান তৈরি করলেন জেপি মরগান। কয়লা ধর্মঘটের কারণে তাদের পণ্যবাহী জাহাজ লন্ডন বন্দরে আটকে ছিল। তিন হাজার কম্বল এবং শীতবস্ত্র নিয়ে হঠাৎ করেই আটলান্টিক মহাসাগরের উদ্দেশ্যে রওনা দিল ওই জাহাজ। খুব অদ্ভুত ভাবে ১৪ এপ্রিল আটলান্টিক মহাসাগরের ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় বন্ধ করে দেওয়া হলো ওই কয়লাবাহী জাহাজের ইঞ্জিন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে কেন? তাহলে কি জেপি মরগান আগে থেকেই জানতেন অলিম্পিক ডুবছে? আরও কিছু প্রশ্ন রয়েছে। শোনা যায়, টাইটানিকের সেকেন্ড অফিসার নাকি দেখতে পেয়েছিলেন সামনে হিমশৈল রয়েছে। যারা জাহাজের ক্যাপ্টেন তারা এটা জানেন না, হিমশৈলের ১০ ভাগের ৯ ভাগ জলের নিচে থাকে, এটা তো মানা সম্ভব নয়! ক্যাপ্টেন কী করছিলেন তবে? দুর্ঘটনার ৩৫ মিনিট পরে উদ্ধারের জন্য রেডিও বার্তা পাঠিয়ে ছিল টাইটানিক।
এছাড়াও, লাইফবোট নামাতেও দেরি করা হয়েছিল বলে জানা যায়। উদ্ধারকারী যে ক্যালিফোর্নিয়ান জাহাজটি টাইটানিকের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছিল, সেটা খুব একটা বেশি মানুষকে বাঁচাতে পারেনি। বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয় ব্রিটেন। জেপি মরগান টাইটানিক ডোবার মাত্র দু'বছরের মাথায় নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করলেন এবং সমস্ত দোষ নিজের ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেললেন! সঠিক তদন্ত হলো না এই ঘটনার। শোনা যায়, অলিম্পিক নামধারী টাইটানিক ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত সমুদ্রের বুকে দুর্ধর্ষ সার্ভিস দিয়েছিল। লেখা হলো প্রচুর আর্টিকেল, টাইটানিকের এই দুর্নীতির লেখা নিয়ে রীতিমতো ছয়লাপ হয়ে গেল ব্রিটেন। তৈরি হল সিনেমা। কিন্তু শেষমেশ, হলো না কিছুই। সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে চোখ মুছতে মুছতে 'এভরি নাইট ইন মাই ড্রিমস' সুর গুনগুন করতে করতে নিজের জীবনে ফিরে গেলেন অগুণতি দর্শক। সলিল সমাধি হলো লাখো লাখো জ্যাকের!