পাঁচ ছক্কার নেপথ্যে রয়েছে অন্য রহস্য! গুজরাটের বিরুদ্ধে সেদিন কার ব্যাটে খেলেছিলেন রিঙ্কু?

Rinku Singh : শেষ ৫ বলে ৫ ছয়, ব্যাটে বলে ম্যাজিক করলেন রিঙ্কু সিং! কিন্তু জানেন কি এর পিছনেও রয়েছে রহস্য?

পরপর পাঁচটা বল, পাঁচটাতেই ছয়! হারতে বসা ম্যাচটা যেন মুহূর্তের মধ্যে ঘুরে গেল এক বাজিগরের হাতের নিশানায়। দীর্ঘদিন ধরে জমাট বাঁধা টিটকিরি সপাট জীবন সেদিন দিয়েছিলেন কেকেআর-এর রিঙ্কু সিং। উত্তর প্রদেশের একটা ছাপোষা নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে যে লড়াইটা একদিন শুরু হয়েছিল, তা অবশ্য স্বপ্নের মতো আকাশে উড়িয়ে দিয়েছিলেন আগেই। এবার সেই স্বপ্নের স্বীকৃতি মিলল কেবল। শান্ত, ধীর স্থির ছেলেটাই ব্যটে বলে ম্যাজিক দেখালেন আচমকা। পাঁচ বলেই ঘায়েল প্রতিপক্ষের দুঁদে বোলার যশ দয়াল। কিন্তু এই যে ম্যাজিককে ঘিরে মুহূর্তের মধ্যে নায়ক হয়ে উঠলেন রিঙ্কু সিং, জানেন কি সেই ম্যাজিকের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে অন্য এক রহস্য?

অবশেষে ফাঁস হল এক চাঞ্চল্যকর তথ্য, সেদিন পাঁচ বলে পাঁচ ছয় মারার সময় মোটেই নিজের ব্যাটে খেলেননি রিঙ্কু সিং। জানেন সেদিনের ওই ম্যাজিক ব্যাটের মালিক আসলে কে? শুনলে অবাক হবেন এই ব্যাটটি আসলে আর কারোর নয়, খোদ কেকেআর এর অধিনায়ক নীতিশ রানার। ম্যাচ জেতার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে ভাইরাল সেদিনের পাঁচ ছয়ের দৃশ্য, সেই সঙ্গে শুভেচ্ছা বার্তায় ভরপুর রিঙ্কু সিংয়ের প্রোফাইলও। এরই মধ্যে সম্প্রতি কেকেআর -এর তরফে সামনে আনা হয় একটি ভিডিও। যেখানে বলা হয়, ব্যাটটি স্বয়ং নীতিশ রানার। এমনকী এই ব্যাটেই তিনি আগের দুটি ম্যাচে খেলেছেন। শুধু তাই নয়, ঘরোয়া ক্রিকেটে সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতেও খেলেছেন এই ম্যাজিক ব্যাটটি দিয়েই।

এখানেই শেষ নয়, আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য তিনি সামনে এনেছেন ভিডিওতে। রিঙ্কু সিং নাকি আগেই ব্যাটটা নীতিশ রানার কাছে চেয়েছিলেন। যদিও নিজের লাকি ব্যাট মোটেই হাতছাড়া করতে চাননি কেকেআর-এর অধিনায়ক। রিঙ্কুও হয়তো সেদিন মনে মনে চেয়েছিলেন ওই ব্যাটেই খেলতে তাই ম্যাচে ব্যাট করতে নামার আগে কেউ ব্যাটটা রিঙ্কুকে এনে দেয়। তারপরের ঘটনা তো সবারই জানা। অচিরেই সেই ব্যাটটি নিজেই যেন তারকা হয়ে উঠল। আর ব্যাটের মালিক কে সেই বিশ্লেষণ তো সেখানে নেহাতই তুচ্ছ মাত্র।

আরও পড়ুন - এক ওভারে পাঁচটা ছয়, রিঙ্কু সিংয়েই মজে কেকেআর! কেন তাঁকে তিনমাস ব্যান করেছিল BCCI?

সেদিন গ্যালারি ভর্তি ছিল দর্শকের ভিড়, টানটান উত্তেজনা। যদিও পাল্লাটা বেশ ভারী গুজরাট দলের দিকেই। ম্যাচের আগাম সমীক্ষাও প্রায় ঘোষণা করে দিয়েছে ফলাফল। শেষ ওভার, জয়ের জন্য তখনও বাকি ২৯টা রান। দলের সবাই হাল ছেড়ে দিয়েছেন। বলা ভালো, হেরে যাওয়ার শেষ প্রমোদ গুনছেন। এমনকী ধারা ভাষ্যকারও ধরে নিয়েছিলেন গুজরাট দলের জয় আসন্ন। তবুও নিয়মমাফিক শুরু হল শেষ ওভার। প্রথম বলে উমেশ যাদব এক রান নিয়ে স্ট্রাইক ছেড়ে দিলেন রিঙ্কু সিংকে। গুজরাট টাইটান্স দল অবশ্য ততক্ষণে ধরে নিয়েছিল জয় শুধু আর ৫ বলের অপেক্ষা। কিন্তু এই এত টালমাটাল পরিস্থিতি, এত উত্তেজনার মধ্যেও একমাত্র স্থির ছিলেন একজনই। তখন অবশ্য কেউই বুঝতে পারেননি এই স্থির চোখের আড়ালেই ছিল গনগনে আঁচ। এক্কেবারে চুপিসাড়ে মরণ কামড় দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন কেকেআর-এর রিঙ্কু সিং। যশ দয়াল নিজেও ভাবতে পারেননি তাঁর করা পরবর্তী পাঁচটি বলের ফলাফল এমনটা হবে শেষমেশ!

প্রসঙ্গত, ছোট থেকেই অভাব ইন্তন ছিল রিঙ্কুর সঙ্গী। একেবারেই নিম্নবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা। বাবা গ্যাস সিলিন্ডার ডেলিভারির কাজ করতেন। এমনকী অভাবের তাড়নায় রিঙ্কুকেও একসময় ঝাড়ুদারের কাজ করতে হয়েছে। কিন্তু তাতে ২২ গিজের স্বপ্নে ভাটা পড়েনি এক রত্তিও। লড়াইটা তাই জারি ছিলই। কেবল অপেক্ষা ছিল একটা এরকম চমকে দেওয়া স্বীকৃতির, যার হাত ধরে আগামীতে আরও স্বপ্ন পূরণের পথে ছুটতে পারবেন রিঙ্কু সিং।

More Articles