ভাঙছে আফ্রিকা, তৈরি হচ্ছে নতুন মহাসাগর! পৃথিবীর মানচিত্র বদলে যেতে পারে যে ঘটনায়

New Ocean Forming Africa : বেশ কয়েকবছর ধরে গঠনগত পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। অশান্ত হয়ে আছে গোটা এলাকা। যার প্রভাবই পড়তে শুরু করে দিয়েছে।

সাতটা মহাদেশ আর পাঁচটা মহাসাগর –পৃথিবীর মানচিত্র বলতে আমরা মোটামুটি এটাই বুঝি। তার সঙ্গেই জুড়ে আছে নদী, দেশ, রাজ্য, সেখানকার মানুষজন, জীবজগত আরও কত কি! হঠাৎ যদি চিরপরিচিত এই মানচিত্রটাই বদলে যায়? একটা অংশ আড়াআড়ি ভেঙে গিয়ে যদি পৃথিবীর নতুন কোনও চেহারা সামনে চলে আসে? বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, ঠিক এই জিনিসটাই হতে চলেছে। বদলে যেতে চলেছে পৃথিবীর ম্যাপ। আর সেই সবকিছুর মূলে রয়েছে একটি জায়গা – আফ্রিকা।

পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশ এই আফ্রিকা। একটা সময় এখানকার অনেক অংশই ছিল অজানা। নীল নদের তীরে নগর সভ্যতাও রয়েছে, আবার রয়েছে উত্তরে সাহারা মরুভূমিও। তিনদিক ঘিরে আছে সমুদ্র। এমন আফ্রিকা মহাদেশই নাকি ভেঙে দু’খণ্ড হয়ে যাবে! আর তার প্রক্রিয়া এখনই শুরু হয়ে গিয়েছে! আন্তর্জাতিক জার্নাল জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটারসে সম্প্রতি এনিয়ে বিশেষ গবেষণা প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সমুদ্রের তলায় ও আফ্রিকার মূল ভূখণ্ডে বেশ কয়েকবছর ধরে গঠনগত পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। অশান্ত হয়ে আছে গোটা এলাকা। যার প্রভাবই পড়তে শুরু করে দিয়েছে।

africa

এই পুরো কর্মকাণ্ডে বিজ্ঞানীরা বিশেষ করে নজর রেখেছেন ইথিওপিয়ার দিকে। কেন? তার জন্য ফিরে যেতে হবে ২০০৫ সালে। ইথিওপিয়ার মাউন্ট দাবাহু ওই অঞ্চলের অন্যতম সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। ওই বছরই ভয়ংকর অগ্ন্যুৎপাত হয় ওই অঞ্চলে। কেবল অগ্ন্যুৎপাতই নয়, ভূমিকম্পও হয় সেখানে। তারপরই দেখা যায়, সেখানে বিশাল বড় আর গভীর একটি গর্ত তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুন : সিপাহি বিদ্রোহে ব্রিটিশদের নাকানিচোবানি খাইয়েছিলেন এই আফ্রিকান নারী

বাইরে থেকে দেখলে, অত্যন্ত সাধারণ একটি ফাটল। কিন্তু গবেষণার পর দেখা গেল, ওই ফাটলের ভেতরেই লুকিয়ে আছে আসল রহস্য। এই মুহূর্তে ইথিওপিয়ার ওই মরু অঞ্চল জুড়ে ৩৫ মাইল লম্বা ফাটলটি বিস্তৃত রয়েছে। যত দিন যাচ্ছে, সেটি বাড়ছে। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, প্রতি বছর প্রায় সাত মিলিমিটার করে বাড়ছে ফাটলের দূরত্ব। বিজ্ঞানীরা এখানেই আসল জায়গায় নির্দেশ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, এটা কেবল একটি অঞ্চলের ব্যাপার নয়। ইথিওপিয়া ও আফ্রিকার উত্তরের বেশকিছু জায়গায় এমন ফাটল দেখা যাচ্ছে। এর ফলে এই গোটা অঞ্চলটি দু’ভাগে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। আফ্রিকা মহাদেশ যে দু’ভাগে ভেঙে যাচ্ছে, সেটা নিয়ে প্রায় নিশ্চিত বিজ্ঞানীরা। যদি এমনটা হয়, তাহলে সমুদ্রের জল এই দুই ভূখণ্ডের মাঝে এসে ঢুকবে। তৈরি হবে নতুন একটি সমুদ্র। বদলে যাবে পৃথিবীর মানচিত্রটাই।

অবশ্য পৃথিবীর এমন ভাঙা গড়ার খেলা চলতেই থাকে। ভূ-বিজ্ঞানীরা বারবার উল্লেখ করেছেন প্যানজিয়া আর প্যানথালাসার কথা। বলেছেন, কীভাবে একটা সমগ্র ভূখণ্ড থেকে আলাদা আলাদা মহাদেশ, দেশ তৈরি হল। সেরকমই বদলের মধ্যে দিয়ে যাবে পৃথিবী। যেখানে আফ্রিকা ভেঙে দু’টুকরো হয়ে যাবে। সেইসঙ্গে তৈরি হবে নতুন একটি সমুদ্র।

split ethiopia

গবেষকরা ওই রিপোর্টে জানিয়েছেন, ২০০৫-এর অগ্ন্যুৎপাত আর ভূমিকম্পের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিচের টেকটনিক প্লেটও। চিড় ধরে যাওয়ায় সেই প্লেটও একটি একটু করে পরস্পরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তার জন্যই এই ‘বিচ্ছেদ’। তবে কেবল ইথিওপিয়াই নয়, লোহিত সাগর বা রেড সি-র ভেতরেও চলছে এমন টালমাটাল অবস্থা। আপাতত ওই জায়গার আশেপাশের এলাকা থেকে সবাইকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে এখনও ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। আফ্রিকা মহাদেশের সম্পূর্ণভাবে দু’ভাগ হতে এখনও কয়েক লক্ষ বছর সময় লাগবে।

More Articles