৩০-এর পরেও বাধা নেই মাতৃত্বে, যে নিয়মগুলি মেনে চলতেই হবে

মানবশরীরে হরমোনের বৃদ্ধি এবং হ্রাস নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ফলে মহিলাদের বয়স ৩৫ পেরনোর পর থেকেই দেহে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা কিংবা সমস্যা অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়।

ভারতের বড় অংশের মহিলারা ২২-২৩-এ বিয়ে করলেও তৎক্ষণাৎ মাতৃত্বের স্বাদ অনুভব করতে চান না। কয়েকবছর সময় নিয়ে ধীরে-সুস্থে মাতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করার পথেই হাঁটে তারা। এক্ষেত্রে প্রধান যে সমস্যাটি দেখা দেয়, তা হলো মাতৃত্বের সঠিক বয়স। যদিও চিকিৎসাশাস্ত্রে মা হওয়ার জন্য কোনওরকম নির্দিষ্ট বয়সের উল্লেখ নেই, তবে কয়েকটি বিষয় নজরে রাখা প্রয়োজন।

বর্তমানে অনেকেই ৩০ পেরনোর আগেই পরিবারে নতুন সদস্য নিয়ে আসার কথা ভাবতে পারেন না। অনেকে বিয়েই করেন ৩০ পেরনোর পর, এবং তারপর সন্তানধারণের কথা চিন্তাভাবনায় নিয়ে আসেন। আবার অনেকে বিয়ের পর কিছুটা সময় দাম্পত্যজীবনকে দিতে পছন্দ করেন। কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন, শরীর সব সময় আমাদের এইসব সিদ্ধান্তের সঙ্গে যে মানিয়ে চলতে পারবে, তার কোনও মানে নেই। এক্ষেত্রে কিন্তু মানবশরীরে হরমোনের বৃদ্ধি এবং হ্রাস নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ফলে মহিলাদের বয়স ৩৫ পেরনোর পর থেকেই দেহে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা কিংবা সমস্যা অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়।

একথা মনে রাখতে হবে, মা হওয়ার জন্য কোনও নির্দিষ্ট সময় হয় না। মন তৈরি থাকলে এবং দু'জনের সম্মতি থাকলেই মা হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া যায়। কিন্তু যদি আপনি ৩০ পেরনোর পর প্রথমবার মাতৃত্বের স্বাদ নিতে চান, তবে কয়েকটি কথা মাথায় রাখতে হবে।

আরও পড়ুন: যৌনসুখে বাধা নয় কন্ডোম, চরম মুহূর্ত দীর্ঘ করতে কী টোটকা লুকোনো নিরোধে?

প্রথমত, আসা যাক স্ত্রীরোগ চিকিৎসকদের বক্তব্যের প্রসঙ্গে। এক্ষেত্রে কিছুটা আলোকপাত প্রয়োজন। স্ত্রীরোগ চিকিৎসকদের মতে, বয়স ৩০ পেরিয়ে যাওয়ার পরমুহূর্তে মা হতে চাইলে কিছু জটিলতা দেখা দেবে। কারণ, ৩০-এর পর থেকে মহিলাদের সন্তানধারণের ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। বহু ক্ষেত্রে কোনও মহিলা অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঠিক পরেই ভ্রুণ নষ্ট হয়ে যেতেও দেখা যায়। তাই আমাদের কিছু বিষয়ে সাবধান হতে হবে। মনে রাখতে হবে, মধ্য বয়সেও মা হওয়া সম্ভব। তবে তার জন্য মেনে চলতে হবে বেশ কয়েকটি নিয়ম; যাতে আমাদের শিশু সুস্থ এবং স্বাভাবিকভাবে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করতে পারে।

কয়েকটি নিয়ম দেখে নেওয়া যাক:

১) ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন
আপনি যদি ভেবে থাকেন যে, আপনার ওজনের সঙ্গে অন্তঃসত্ত্বা হওয়া কিংবা মাতৃত্বের সরাসরি কোনও সম্পর্ক রয়েছে, তাহলে তা সত্য নয়। ওজনের প্রত্যক্ষ কোনও প্রভাব অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ওপর পড়ে না। তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে বাড়তি ওজন সর্বদাই শরীরের জন্য ডেকে আনতে পারে বহু রোগব্যাধি। বাড়তি ওজনের জন্য অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় যদি মহিলাদের শরীরে ডায়াবিটিস ও হাই প্রেশারের মতো ভয়ংকর ও দীর্ঘমেয়াদি রোগ থাবা বসায়, তবে কিন্তু আপনার ভ্রুণের ক্ষতি হতে পারে। তবে আপনি যদি এই সমস্যার সম্মুখীন হন, তবে ভয় না পেয়ে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এক্ষেত্রে মা হওয়ার পরিকল্পনা যদি থাকে, তবে কয়েক মাস আগে থেকে ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন।

২) মাত্রাতিরিক্ত শরীরচর্চা করবেন না
অপরদিকে, ওজন বেশি হওয়ার কারণে অনেক মহিলাই চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং চিকিৎসকদের পরামর্শ ছাড়াই নিজে থেকে ওজন ঝরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে ভারী শরীরচর্চা কিংবা জিমে ভারী ওজন তোলার অভ্যাস রপ্ত করতে উদ্যত হন। তবে বলে রাখা ভালো, অতিরিক্ত শরীরচর্চা গর্ভধারণের ক্ষেত্রে কিন্তু বহু সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত শরীরচর্চা যেমন মহিলাদের ঋতুচক্রের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে, আবার এর প্রভাবে মহিলাদের প্রোজেস্টেরন হরমোনের ক্ষরণ অতিরিক্ত মাত্রায় হ্রাস পায়। সব মিলিয়ে শরীরে হরমোনের লেভেলের পরিবর্তন ঘটতে পারে, যা আপনার গর্ভধারণে সমস্যা সৃষ্টি করে।

৩) ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করুন
এই অভ্যাস বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ধূমপানের ফলে মহিলাদের ডিম্বাশয়ের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ে, বহু সময় তা ডিম্বাণুর ক্ষতিও করে। ফলে আপনি যদি মাতৃত্বের পরিকল্পনা করেন, তবে এখনই ত্যাগ করুন ধূমপানের অভ্যাস। মদ্যপানও কিন্তু এক্ষেত্রে শরীরে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। এসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে।

৪) মাতৃত্বের পূর্বে গর্ভনিয়ন্ত্রণের ওষুধ বন্ধ
৩০-এর পূর্বে অনেকেই নিয়মিত গর্ভনিয়ন্ত্রণের ওষুধ খেয়ে থাকেন। তবে তা কিন্তু আপনার মাতৃত্বের জন্য উপযোগী নয়। মনে রাখতে হবে, গর্ভনিয়ন্ত্রণের ওষুধ বন্ধ করার পরবর্তী সময়েও কিন্তু আপনার শরীরে ঋতুচক্র স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে সময় লাগবে। এক্ষেত্রে অন্তত তিন মাস সময় লাগতে পারে। ফলে পরিবার বড় করার পরিকল্পনা থাকলে কিন্তু আগে থেকেই কয়েকটি জিনিস মাথায় রাখুন। গর্ভনিয়ন্ত্রণের ওষুধ কিন্তু আপনাকে অনেক আগেই ত্যাগ করা উচিত, যাতে মাতৃত্বের সময় তা আপনার শরীরে কোনওরকম সমস্যা সৃষ্টি না করে।

৫) সঙ্গমের সময় মেনে চলা কয়েকটি পদ্ধতি
শুনতে অবাক লাগলেও সঙ্গমের পদ্ধতিও কিন্তু এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। সঙ্গম নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে থাকেন। তবে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার মুহূর্তে এসব কাজ না করাই শ্রেয়। এছাড়া কোনওরকম সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

More Articles