সামান্য ধুলো লাগলেই শরীর কাহিল, এই খাবারগুলি সুস্থ রাখবে আপনাকে
বারবার ধুলোর কারণে ঠান্ডা লাগা, হাঁচি ও কাশির অর্থ, শরীর খুব দুর্বল। তাই সঠিক খাবার, সুস্থ জীবনযাপন এবং ব্যায়ামই পারে আপনাকে সবল করতে।
শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, বারো মাসই একটু ধুলো লাগলেই নাক থেকে জল পড়ছে। শীতে শুষ্ক মরশুমে বায়ুদূষণের পরিমাণ বাড়লে সমস্যা আরও বাড়ে। আজকাল অনেকেই অ্যালার্জির সমস্যায় ভোগেন। এর মধ্যে বেশিরভাগ মানুষেরই ধুলো থেকে অ্যালার্জি হয়। যাকে বলা হয় ডাস্ট অ্যালার্জি।
প্রতিদিন চলতে-ফিরতে, সবসময়ই আমরা ধুলোর মুখোমুখি পড়ে থাকি। অনেকেরই ধুলোর কারণে শরীরে কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায় না। কিন্তু বারবার ধুলোর কারণে ঠান্ডা লাগা, হাঁচি ও কাশির অর্থ, শরীর খুব দুর্বল। তাই সঠিক খাবার, সুস্থ জীবনযাপন এবং ব্যায়ামই পারে আপনাকে সবল করতে। তবে সাধারণ ঠান্ডা লাগার সঙ্গে ডাস্ট অ্যালার্জির পার্থক্য রয়েছে। জেনে নেওয়া যাক, ডাস্ট অ্যালার্জির লক্ষণ, চিকিৎসা-সংক্রান্ত নানা খুঁটিনাটি।
ডাস্ট অ্যালার্জির লক্ষণ
• অনবরত হাঁচি হতে থাকে ডাস্ট অ্যালার্জির সমস্যায় ভুগলে। তাছাড়া নাক থেকে জল পড়া, চোখ চুলকানি এবং লাল হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয় ডাস্ট অ্যালার্জিতে।
আরও পড়ুন: রোজ নিয়ম করে হাঁটাহাঁটি মৃত্যুকে ঠেলে দেবে দূরে, প্রমাণ মিলছে গবেষণায়
• নাক থেকে জল পড়ার পাশাপাশি নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, মুখ, নাক, গলায় চুলকানি হতে পারে এই অ্যালার্জির জন্য। এমনকী, মুখের ভেতরও চুলকানি হয় ডাস্ট অ্যালার্জি থেকে।
• ডাস্ট অ্যালার্জি থেকে খুশখুশে কাশিও হতে পারে। এমনকী, অ্যালার্জি থেকে চোখের নিচে ফোলা ভাব থাকে। তাই এইসব লক্ষণ দেখলে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। নিজে থেকে ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
যে খাবার খেলে আপনি সুস্থ থাকবেন
১. গ্রিন টি: গ্রিন টি শরীরের মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। অ্যালার্জির কারণে নাকের অস্বস্তি কমাতেও সাহায্য করে এটি।
২. হলুদ: হলুদ ক্ষত নিরাময়ে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে মারাত্মক উপকারী। তাই প্রতিদিন অল্প পরিমাণে কাঁচা হলুদ খেতে পারেন। আবার গরম দুধের সঙ্গে অল্প হলুদ মিশিয়ে খেলেও শরীর রোগ ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকে।
৩. মধু: একাধিক উপকারিতা-সহ মধু শরীরের জন্য জাদুর মতো কাজ করে। এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ অ্যালার্জির লক্ষণগুলির উপশম হিসেবে কাজ করে।
৪. দারুচিনি: আলার্জির বিভিন্ন লক্ষণগুলি কম করতে চাইলে মধুর মতোই দারুচিনিও মারাত্মক কার্যকরী।পাশাপাশি দারুচিনি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে তোলে।
৫. আদা: আদার উপশমকারী বৈশিষ্ট্য আমাদের সকলেরই জানা। এতে অ্যালার্জির কারণে যে অস্বস্তি বোধ হয়, তা অনেকখানি কম হয়।
৬. পেঁয়াজ: পেঁয়াজে কোয়ারসেটিন নামক উপাদান রয়েছে, যা শরীরে হিস্টামিন উৎপাদন হ্রাস পায়। হিস্টামিনের কারণে অ্যালার্জির সময় শরীরে প্রদাহ এবং অন্যান্য উপসর্গগুলি দেখা দেয়।
৭. রসুন: আদার মতোই রসুন ভারতীয় রান্নায় ব্যবহৃত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
৮. চিকেন: উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ এক বাটি চিকেন স্যুপ আপনাকে শক্তিশালী ও কাজ করার এনার্জি দেবে।
৯. টমেটো: টমেটোতে লাইকোপিন থাকে, যার ফলে উজ্জ্বল দেখতে হয় টমেটো। এই লাইকোপিন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে কোষকে রক্ষা করে এবং এর ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে।
১০. বাদাম: আমন্ড, কাজু বাদাম উচ্চ প্রোটিনসম্পন্ন হওয়ায় এগুলি শরীরকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি অ্যালার্জির অস্বস্তিও দূর করে।
ডাস্ট অ্যালার্জির প্রতিকার
ডাস্ট অ্যালার্জি প্রতিরোধ করতে প্রাথমিক কিছু নিয়ম মেনে চলা আবশ্যক। প্রথমত, ঘর থেকে বেরনোর সময় মাস্ক ব্যবহার করুন। ধুলো থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করুন।
অনেক সময় আসবাবপত্রে জমে থাকা ধুলো থেকে ডাস্ট অ্যালার্জি হতে পারে। তাই বাড়ির ফার্নিচারে ধুলো জমতে দেবেন না। নিয়মিত ফার্নিচার পরিষ্কার করুন। নিজে ধুলো ঘাঁটবেন না। এতে সমস্যা কিন্তু আরও বাড়বে।
খাটে জমে থাকা ধুলো থেকেও অ্যালার্জির সমস্যা বাড়তে পারে। তাই ঘুম থেকে ওঠার পর ও ঘুমোতে যাওয়ার আগে বিছানা ভালোভাবে ঝেড়ে নিন। এই সময় অবশ্যই মুখ ঢেকে রাখবেন। নাহলে খাটে জমে থাকা নোংরা লেগে বাড়তে পারে অ্যালার্জির সমস্যা। এছাড়া মাঝে মাঝে বিছানা রোদে দিন। এতে ধুলো জমবে না।
যাদের ডাস্ট অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তাঁরা শোওয়ার ঘর সাজানোর সময় বিশেষ গুরুত্ব দিন। শোওয়ার ঘরে বইয়ের তাক বা খবরের কাগজ জমিয়ে রাখবেন না। এতে সহজে ধুলো জমে যায়। এই ধুলো থেকে আপনার অ্যালার্জির সমস্যা আরও বাড়বে।
ডাস্ট অ্যালার্জি থাকলে ঘরে কার্পেট না রাখাই ভালো। কার্পেটে সহজেই ধুলো জমে যায় এবং সেই ধুলো পরিষ্কার করাও যথেষ্ট কঠিন কাজ। একান্তই যদি কার্পেট রাখতে চান, তবে নিয়মিত পরিষ্কার করা যায়, এমন কার্পেট ব্যবহার করুন।
রোজকার খাদ্যতালিকায় কিছু খাবার যোগ করে এবং জীবনযাত্রায় বদল ঘটিয়ে সহজেই সুস্থ থাকতে পারবেন ডাস্ট অ্যালার্জির থেকে। তাই দেরি না করে আজ থেকেই শুরু করুন সতর্কতা অবলম্বন করা।