এই প্রথম নয়, আগেও চেষ্টা হয়েছে হত্যার, কীভাবে বারবার সব জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে এসেছেন পুতিন?

Vladimir Putin: এই প্রথম নয়, আগেও বেশ কয়েকবার হামলার মুখে পড়েছেন পুতিন, জেনে নেওয়া যাক, কবে কোথায় কী কী হামলা নেমে এসেছিল...

ছয় নাকি আরও বেশিবার? সঠিক হিসেব কষার আগেই ফের একবার হামলার মুখে পড়লেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। হত্যার চেষ্টায় দুটি ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে মস্কো। কাঠগড়ায় ইউক্রেন। যদিও বড়ো কোনও বিপদের আগেই রুশ প্রতিরক্ষা বাহিনী সেই ড্রোন দু'টি গুলি করে নামিয়ে আনে বলেই ক্রেমলিনের তরফে বিবৃতি জারি করে জানানো হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, এর পাল্টা প্রতিশোধ স্বরূপ রাশিয়াও যে প্রতিঘাত হানতে যে কোনও সীমা পেরোতে পারে বলে এমন আশঙ্কার মেঘ ঘনিয়েছে ইতিমধ্যেই।

যদিও রাশিয়ার বিভিন্ন সংস্থার খবরে বলা হয়েছে, এই ঘটনার সময় প্রেসিডেন্ট পুতিন ক্রেমলিনে ছিলেন না। এমনকী এ হামলায় ক্রেমলিন প্রাঙ্গণের কোনও ভবনের ক্ষয়ক্ষতিও হয়নি। তবে রাশিয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ফুটেজে মস্কোর কেন্দ্রস্থল থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। প্রসঙ্গত, রাশিয়া বনাম ইউক্রেন যুদ্ধের অবসর এখনও হয়নি। ধিকিধিকি যে আগুন প্রতিনিয়ত জ্বলছে তার ফলস্বরূপ এ হামলা কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আরও পড়ুন - এতদিনে যুদ্ধের ইতি! গ্রেফতার করা হবে ভ্লাদিমির পুতিনকে?

যদিও এই ঘটনার শুরু খুব আকস্মিক কিছু নয়। বিগত এক বছরেও বেশি সময় ধরে এই হামলা এবং পাল্টা হামলা চলছেই। গত সোমবার ভোর হওয়ার খানিক আগে ইউক্রেনের শহরগুলোতে ধারাবাহিক ক্ষেপণাস্ত্র ও কামান হামলা শুরু করে রাশিয়া। জানা গিয়েছে, তিন দিনের মধ্যে চালানো দ্বিতীয়বারের হামলায় খেরসন অঞ্চলে একজন নিহতও হয়েছে। শুধু তাই নয়, ডিনিপ্রোতে তিন শিশুসহ ২৫ জন আহত হয়েছেন বলেও সূত্রের খবর। ফলে রাশিয়াতে নেমে আসা এই হামলা যে তারই প্রত্যুত্তর নয়, এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

কিন্তু পুতিনকে মারার হামলা কি এই প্রথমবার হল? মোটেই নয়। জানা যাচ্ছে, এর আগেও অন্তত পাঁচটি গুপ্ত হত্যার হামলা চালানো হয় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর। গত বছরই বার দুয়েক হামলা চালানো হয়েছিল তাঁর ওপর। প্রথমটা ফেব্রুয়ারি মাসে এবং দ্বিতীয়টা মে মাসে।

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার ঠিক পরপরই কৃষ্ণ সাগর ও কাস্পিয়ান সাগরের মধ্যবর্তী ককেশাস অঞ্চলে পুতিনের ওপর হামলার চেষ্টা চালানো হয়েছিল বলে জানা যায়। এরপর মে মাসে ফের একবার হামলা নেমে আসে তাঁর ওপর, এমনটা জানান ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা প্রধান মেজর জেনারেল কিরিলো বুদানভ। ফলে হামলা যে চালানো হয়েছিল তা নিশ্চিত।

এর আগের হামলা বলতে ফিরে যেতে হবে সেই ২০১২ সালে। সেই বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক আগে পুতিনকে হত্যার একটি ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেয় রুশ নিরাপত্তা সংস্থা। এই ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সেই সময়। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন কৃষ্ণ সাগর তীরবর্তী ওডেসা বন্দর এলাকার বাসিন্দা। প্রথমজনকে গ্রেপ্তারের এক মাস পর আন্তর্জাতিক ওয়ান্টেড তালিকায় থাকা দ্বিতীয় ব্যক্তিকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

তবে এরও প্রায় এক দশক আগে হামলা চালানো হয়েছিল বলেও জানা যায়। ২০০২ এবং ২০০৩ সালে পরপর একাধিকবার নেমে আসে পুতিনের পর হামলা। ২০০২ সালে আজারবাইজানে রাষ্ট্রীয় সফরের সময় পুতিনকে হত্যার ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত সন্দেহে ইরাকি এক নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও হামলা চালানো আগেই সন্দেহভাজন হিসেবে নেমে আসে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। যদিও ওই ইরাকি নাগরিকের যে আফগানিস্তান ও চেচেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে সম্পর্ক ছিল সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিল পুলিশ। পাশাপাশি তিনি যে হামলার ছক কষেছিলেন সে কথাও স্বীকার করেন গ্রেপ্তারের পর।

আরও পড়ুন - ইউক্রেনে থেমে থাকবে না রাশিয়ার আগ্রাসন? পুতিনের হুমকিতে নয়া আশঙ্কা বিশ্বজুড়ে

ওই বছরেরই শেষের দিকে রুশ কর্মকর্তারা পুতিনের গাড়িকে নিশানা বানিয়ে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে গোপন তথ্য জানতে পারেন। যে রাস্তা দিয়ে পুতিনের যাওয়ার কথা ছিল, সেই রাস্তাতেই মেরামতকারীদের ছদ্মবেশে এসে একদল পুতিন বিরোধী ব্যক্তি একটি বোমা পুঁতে রেখেছিল। মোটরওয়েতে পুতিনের গাড়ি উড়িয়ে দেওয়ার জন্যই এই ছক কষেছিল হামলাকারীরা। পরবর্তীতে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে সেই সময় জানানো হয়, দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা মোটরওয়ে থেকে মোট ৪০ কেজি বিস্ফোরক জব্দ করেছেন। ফের আবার হামলা চালানো হয় ২০০৩ সালের অক্টোবর মাসে। ব্রিটিশ সন্ত্রাসবিরোধী পুলিশ পুতিনকে তার সফরের সময় হত্যার একটি ষড়যন্ত্র করে, যদিও রুশ প্রতিরক্ষা বাহিনী সেই ষড়যন্ত্রও ব্যর্থ করে দেয় বলেই জানা যায়। এখানেই শেষ নয়, পরে জানা যায় এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তারও করে যুক্তরাজ্য পুলিশ।

সুতরাং আজকের হামলা নিছক কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়। এই ঘটনার সঙ্গে অনেক আগে থেকে পরিচিত ছিলেন খোদ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। বারবার হামলার জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসার অভ্যাসও যে তাঁর আছে তা বলাই বাহুল্য। তবে এর পাশাপাশি রুশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর ভূমিকাও অনস্বীকার্য।

সাম্প্রতিক এই হামলায় ক্রেমলিনই যে টার্গেট ছিল এমনটা জোর দিয়েই দাবি করেছে রাশিয়া। অন্যদিকে ইউক্রেনও সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ক্রেমলিন হামলার সঙ্গে তাদের ‘কোনও যোগ নেই’। প্রসঙ্গত, সামাজিক গণমাধ্যমে সামনে আশা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি ড্রোন ক্রেমলিনের মাথার উপর আসতেই তা গুলিতে ভস্মিভূত হয়। তারপর জ্বলে ওঠে আগুন। যদিও সত্যি মিথ্যে সব কিছু যাচাইয়ের ভার এখন সময়েরই হাতে।

More Articles