চামড়ার উপর লেখা যায় গোপন বার্তা! 'স্কিন রাইটিং' আসলে কী?
Writing On Skin: বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডার্মাটোগ্রাফিজম চিরকাল স্থায়ী হয় না, তবে এটি কয়েক মাস বা এমনকী বছরখানেক ধরেও চলতে পারে।
মশার কামড়ে যখন চামড়া ফুলে ওঠে, নখের ডগা দিয়ে সেই মাংসল স্লেটে যোগ, বিয়োগ, গুণ চিহ্ন তো কতই এঁকেছেন। সে তো নিতান্তই মস্করা, ছোটবেলার অনুসন্ধিৎসু মনের খামখেয়াল। কিন্তু সত্যিই যদি নিজের চামড়ায় লেখা যেত দিস্তে দিস্তে পদ্য? অথবা গোপন কোনও বার্তা? 'স্কিন রাইটিং'-এ জীবনে কলমের দরকার পড়বে না কারণ স্রেফ আঙুল দিয়েই লিখতে পারবেন কত কী! আঙুলের স্পর্শে মানুষের ত্বকে কোনও বার্তা লেখা সত্যিই সম্ভব, তবে খুব সামান্য মানুষের দেহেই এমন সম্ভব! ডার্মাটোগ্রাফিক আর্টিক্যারিয়া নামে পরিচিত এই সমস্যাটি বিশ্বের মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ মানুষের দেহকেই প্রভাবিত করে।
ডার্মাটোগ্রাফিজমের আক্ষরিক অর্থ হলো "ত্বকের উপর লেখা"। ত্বকে চাপ প্রয়োগ করা হলে তা লাল হয়ে স্ফীত হয়ে যায়, একেই বলে 'আর্টিকেরিয়াল ইরাপশন'। ফলে চামড়া কিছুটা ফোস্কা পড়ার মতো দেখায়। এটি অল্প সংখ্যক মানুষকেই প্রভাবিত করে, বিশেষত অল্প বয়স্কদের। কিন্তু যে কোনও বয়সে এবং স্ক্যাবিসের মতো অন্যান্য অসুস্থতা বা নির্দিষ্ট ওষুধের ব্যবহার সহ অসংখ্য কারণে এই সমস্যাটি দেখা দিতে পারে। কেন এমনটা ঘটে? নেপথ্যের প্রক্রিয়াটি এখনও ঠিক পরিষ্কার নয় তবে হিস্টামাইনের কোনও ভূমিকা থেকে থাকতে পারে বলেই ধারণা বিজ্ঞানীদের।
হিস্টামাইন হচ্ছে আমাদের কোশ দ্বারা নির্গত একটি যৌগ। কোশগুলি আহত হলে, স্ফীত হলে বা অ্যালার্জির মতো কিছু ঘটলে এই প্রতিক্রিয়া ঘটে। এই কারণেই চামড়ায় কোনও আঁচড় লাগলে চারপাশে যে লালভাব এবং ফোলাভাব টের পাওয়া যায় তা দেখতে অনেকটা হুল ফোটানো বা খুব গরম কিছু স্পর্শ করার ফলে হওয়া ফোস্কার মতোই।
আরও পড়ুন- তেলাপিয়ার চামড়া বসানো হচ্ছে মানুষের দেহে! বিজ্ঞানের আজব খেলায় মেতেছেন চিকিৎসকরা
হিস্টামাইন অবাঞ্ছিত উদ্দীপকে সাড়া দেয়, তবে কখনও কখনও তারা অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়াও দেখাতে পারে। এই কারণেই কিছু মানুষ অ্যালার্জির লক্ষণ কমাতে অ্যান্টিহিস্টামাইন গ্রহণ করেন। পরাগ বা পোষা প্রাণীর খুশকির মতো সামান্য জিনিস থেকেই এই অ্যালার্জি হতে পারে। বিষয়টি ডার্মাটোগ্রাফিজমের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কারণ ত্বকের উপর স্পর্শ করে লেখা একাধিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে যার ফলে হিস্টামাইন নিঃসৃত হয়, অন্যান্য অ্যালার্জেনের মতোই। ত্বক ফোলা, লালভাব এবং কখনও কখনও চুলকানিও দেখা দেয়।
ত্বকের উপর লেখার জন্য যেহেতু স্পর্শের প্রয়োজন পড়ে, এই অদ্ভুত অবস্থাটি বিশেষ বিপজ্জনক না হওয়া সত্ত্বেও কারও কারও জীবনযাত্রার মানকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডার্মাটোগ্রাফিজম চিরকাল স্থায়ী হয় না, তবে এটি কয়েক মাস বা এমনকী বছরখানেক ধরেও চলতে পারে। স্ক্যাবিসের মতো পূর্ববর্তী অসুস্থতার কারণে ত্বকের লেখা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
ত্বককে প্রায়শই শরীরের বৃহত্তম অঙ্গ হিসাবে উপেক্ষা করা হয়। তবে ত্বকের সামান্য সমস্যা জীবন অতিষ্ঠ করে তুলতে পারে। সুতরাং ত্বকের সমস্যাকে উপেক্ষা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ, রোগ নির্ণয়ের পথেই হাঁটা উচিত।

Whatsapp
