তেলাপিয়ার চামড়া বসানো হচ্ছে মানুষের দেহে! বিজ্ঞানের আজব খেলায় মেতেছেন চিকিৎসকরা

Tilapia Fish Skin Grafting: তেলাপিয়ার চামড়ার গঠন মানুষের ত্বকের মতোই। ফলে তেলাপিয়ার ত্বক এক আদর্শ প্লাস্টার তৈরি করে।

চামড়া প্রতিস্থাপনের কাজে দেহের অন্য অংশ থেকে নেওয়া ত্বক দিয়ে স্কিন গ্রাফটিং ক্রমেই সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি হয়ে উঠছে। কিন্তু নিজের দেহেরই অন্য অংশের চামড়ার বদলে যদি অন্য প্রাণীর চামড়া কেটে বসিয়ে দেওয়া হয় মানুষের দেহে? ধরুন, সাপের চামড়া, ধরুন বাঘের চামড়া! কেমন হবে? ব্রাজিলে সম্প্রতি এক অদ্ভুত জৈব উপাদান বা বায়োমেটেরিয়ালের পরীক্ষা করা হয়েছে পোড়া চামড়ার চিকিত্সায়। নির্দ্বিধায় বলা যায়, পরীক্ষাটি দুর্দান্ত ভাবে সফল হয়েছে। মানুষের পোড়া চামড়া সারাতে ব্যবহার করা হয়েছে তেলাপিয়ার চামড়া। এই তেলাপিয়া আফ্রিকার মিষ্টি জলের মাছ কিন্তু ব্রাজিলের নদীতেও প্রচুর পরিমাণে মেলে।

গত কয়েক বছরে, গবেষকরা ত্বকের গ্রাফটিং করার সময় তেলাপিয়ার ত্বক ব্যবহার করে পরীক্ষা করেছেন। ২০১৯ সালে, একটি ঘটনায় বারুদের বিস্ফোরণের কারণে চামড়া পুড়ে যাওয়ার চিকিত্সায় এই তেলাপিয়ার চামড়ার কার্যকারিতা প্রথম নজরে আসে।

তেলাপিয়ার চামড়াতে টাইপ ১ কোলাজেন দ্রব্য থাকে বেশি পরিমাণে, এই চামড়ার প্রসারিত হওয়ার শক্তিও বেশি এবং তেলাপিয়ার চামড়ার গঠন মানুষের ত্বকের মতোই। ফলে তেলাপিয়ার ত্বক এক আদর্শ প্লাস্টার তৈরি করে। এটি ক্ষতস্থানে আর্দ্রতা এবং প্রোটিনের ক্ষতি রোধ করে এবং ক্ষত সেরে না যাওয়া পর্যন্ত এটি ক্ষতের সঙ্গে আবদ্ধ থাকে। এর চামরা ক্ষত সারানোর পদ্ধতিকে দ্রুত করে এবং দূষণ থেকেও রক্ষা করতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন- চামড়ার নিচে হামাগুড়ি দিচ্ছে কী? বিরলতম রোগ নিয়ে শোরগোল বিশ্বজুড়ে…

গবেষণায় এক ২৩ বছর-বয়সী ব্যক্তির ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। বাহু, মুখ এবং দেহের বিশাল অংশ পুড়ে যায় তাঁর। নীল নদের তেলাপিয়া মাছের চামড়া ব্যবহার করে তাঁর চামড়ার হাল ফেরানো হয়। প্রথমেই, ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের পরীক্ষা করার আগে তেলাপিয়ার ত্বককে রাসায়নিকভাবে জীবাণুমুক্ত করা হয়েছিল, গ্লিসারোল দিয়ে পরিষ্কার করা হয় এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে ফ্রিজে রাখা হয়।

ওই ব্যক্তির বাহুর ক্ষত পরিষ্কার করা হয়ে গেলে এবং নেক্রোটিক (মৃত) ও ফাইব্রিনাস টিস্যু সরানো হয়ে গেলে চিকিত্সকরা তেলাপিয়ার ত্বকটি ব্যক্তির দেহে স্থাপন করেন। সিলভার সালফাডিয়াজিন ক্রিম, যা সাধারণত ব্রাজিলে পোড়া রোগীদের নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়, তা লাগানো হয় ওই চামড়াতে। তারপরে গজ এবং ব্যান্ডেজ মুড়ে রাখা হয়। প্রথম সপ্তাহে প্রতি ৭২ ঘণ্টা পর পর ড্রেসিং করা হতো।

১৭ দিনের মধ্যে রিপিথেলিয়ালাইজেশন, অর্থাৎ নতুন ত্বক জন্ম নেয়। তখন তেলাপিয়ার চামড়া, যা শুকিয়ে গিয়েছিল এবং পোড়া দেহ থেকে আলগা হয়ে গিয়েছিল তা ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও ঘটেনি ব্যক্তির দেহে। তেলাপিয়ার চামড়া দিয়ে চিকিৎসার পর ওই ব্যক্তির বাম হাত সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে।

এরা আগে, মানুষ, শুয়োর, এমনকী ব্যাঙের চামড়াও স্কিন গ্রাফটিংয়ে ব্যবহার করা হয়েছে, কিন্তু ব্রাজিলের সরকারি হাসপাতালে এগুলি সবসময় পাওয়া যায় না। পরিবর্তে, নিয়মিত গজ ব্যান্ডেজের মতো বেদনাদায়ক পদ্ধতিই ব্যবহৃত হয়। তেলাপিয়া ব্রাজিলের নদীতে প্রচুর পরিমাণে মেলে, তাই ভবিষ্যতে পোড়া চামড়ার চিকিৎসায় এটি মূল্যবান এবং টেকসই এক বিকল্প হতে পারে।

"মাছের চামড়া সাধারণত ফেলে দেওয়া হয়, তাই আমরা এই পণ্যটিকে সামাজিক সুবিধার কোনও বস্তুতে রূপান্তরিত করতে চেয়েছি,” বলেন ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অব সিয়ারার অধ্যাপক ওডোরিকো ডি মোরাইস। ২০২২ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে এই উপাদান ব্যবহারে খরচ মাত্র ১ ডলার। তেলাপিয়ার ত্বক শিশুদের পোড়ার চিকিত্সার জন্যও ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকী পশুদের চামড়ার রোগ সারাতেও ব্যবহৃত হয়েছে তেলাপিয়ার চামড়া।

More Articles