আজই পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ! কেন চন্দ্রগ্রহণে চাঁদ লাল হয়ে যায়?

Chandra Grahan: কলকাতা থেকে এই চন্দ্রগ্রহণ যাবে আজ (৭ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টা ৫৮ মিনিট থেকে কাল রাত ২টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত; এই প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে সর্বোচ্চ চন্দ্রগ্রহণের দেখা মিলবে রাত ১১টা ৪২ মিনিটে।


আজ (৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রক্তিম এক মহাজাগতিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকতে চলেছে দেশের মহাকাশপ্রেমীরা। ভারত ছাড়াও, এই বিরল পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের দেখা মিলবে ইউরোপ, আফ্রিকা, পূর্ব অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের কিছু অংশ থেকে। কলকাতা থেকে এই চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে আজ (৭ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টা ৫৮ মিনিট থেকে কাল রাত ২টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত; এই প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে সর্বোচ্চ চন্দ্রগ্রহণের দেখা মিলবে রাত ১১টা ৪২ মিনিটে। প্রায় ৮২ মিনিট ধরে চলবে এই পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ। সচারচর এত দীর্ঘ পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ দেখা যায় না। 

ছোটবেলা থেকে বিজ্ঞান বা ভূগোলের বইতে আমরা পড়েছি- চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ কেন হয়? সূর্য আর চাঁদের মাঝখানে যখন পৃথিবী এসে দাঁড়ায়, আর পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপর গিয়ে পড়ে, তখন চন্দ্রগ্রহণ হয়। তবে, অন্ধকারে অদৃশ্য হওয়ার পরিবর্তে ছায়াময় চাঁদটি রক্তিম হয়ে যায়। সে ভারী অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য। কেন এমনটা ঘটে?

চন্দ্রগ্রহণ

তা বুঝতে গেলে আমাদেরকে র‍্যালে স্ক্যাটারিং বুঝতে হবে । কি সেটা?

উনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী লর্ড র‍্যালে বায়ুমণ্ডলে আলোর বিচ্ছুরণ নিয়ে কাজ করছিলেন। তিনি লক্ষ্য করেন যে আকাশ এমনিতে নীল, কিন্তু সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় কমলা বা লাল দেখায়। এই পর্যবেক্ষণগুলো বিশ্লেষণ করে তিনি এর একটি তত্ত্ব খাড়া করেন- তিনি বলেন বায়ুমণ্ডলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণাগুলো (যেমন গ্যাসের অণু) আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের চেয়ে আকারে অনেক ছোট হয়। ফলে, আলোর ফোটনগুলো এই অণুগুলোর সাথে সংস্পর্শে এসে পুনরায় নির্গত হয়। বিচ্ছুরণের ও আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মাঝে ঠিক কী সম্পর্ক বিদ্যমান, তার একটা গাণিতিক ধারণা ও তিনি দেন; তাঁর গণনা অনুসারে- এই বিচ্ছুরণ আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের চতুর্থ ঘাতের ব‍্যাস্তানুপাতিক, এটি র‍্যালের সূত্র নামে পরিচিত। সোজা কথায় যে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য যত ছোট, সেটি তত বেশি বিক্ষিপ্ত হয়। উদাহরণ স্বরূপ আমরা বলতে পারি, ৪০০ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের নীল আলো, ৭০০ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের লাল আলোর তুলনায় ৯.৪ গুণ বেশি ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেজন্য ট্রাফিক সিগনালের রঙ লাল হয়।

আরও পড়ুন

 ইউরেনাসের একাধিক চাঁদে রয়েছে মহাসাগর, যে-তথ্য পালটে দিচ্ছে সৌরজগতের হিসেবনিকেশ

সেই একই কারণে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় আকাশকে আমরা লালচে দেখি এবং সেজন্য আজ সন্ধ্যার চাঁদকেও আমরা লাল দেখব। আসলে চন্দ্রগ্রহণের সময় দূর থেকে আসা আলোক রশ্মি পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের ধুলিকনার সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়- ছোট তরঙ্গ দৈর্ঘের নীল আলোক রশ্মি এই সংঘর্ষের ফলে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু লম্বা দৈর্ঘের তরঙ্গের লাল আলোকরশ্মির ক্ষেত্রে এই বিচ্ছুরণ ঘটে না- তাই গ্রহণের সময় আমাদের চোখে ধরা পড়ে রক্তিম শশী।

আকাশ পরিষ্কার থাকলে কোনো বিশেষ দূরবীন বা যন্ত্রপাতি ছাড়াই খালি চোখেই দেখা যাবে এই নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। আজ আকাশ জুড়ে মঞ্চস্থ হবে এক মহাজাগতিক রক্তিম নাটক, আর আমরা পৃথিবী থেকেই সে দৃশ্যের সাক্ষী থাকবো, কোনো বিশেষ যন্ত্রের প্রয়োজন নেই। তবে শহরের আলোর ভিড় এড়িয়ে গ্রাম বা খোলা মাঠ থেকে দেখলে দৃশ্যটা হবে আরও স্পষ্ট ও মনোমুগ্ধকর। যাঁরা কোনো কারণে আজ এই দৃশ্য দেখতে পারবেন না, তাঁদের অপেক্ষা করতে হবে পরের বছরের মার্চ পর্যন্ত।  

More Articles