‘নোটা’র কাছেও গো হারা হারল তৃণমূল! কেন ত্রিপুরায় এমন ভরাডুবি হল জোড়াফুলের?

Tripura assembly election 2023 results : ২০২১ সালের পুরভোটে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় প্রায় ২০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। সেবারের ভোটে জেতা প্রার্থীও ছিল জোড়া ফুলের। তবে কেন এমন পরিস্থিতি হল?

আজকের দিনটা মোটেই ভালো নয় তৃণমূলের। প্রথম থেকেই সাগরদিঘির আসন নিয়ে একটু একটু করে চাপ বাড়াচ্ছিল বাম কংগ্রেস জোট। বিপুল ভোটে সেখানে হারের সঙ্গে এবার যোগ হল ত্রিপুরার ভরাডুবি। ভোট গণনার বিচারে কার্যত নোটার কাছে গো হারা হেরে গেল তৃণমূল। “পশ্চিমবাংলা থেকে তো মাত্র আধ ঘন্টার পথ”, এমন দাবি নিয়েই ত্রিপুরায় বাংলার মডেলে ক্ষমতা দখলে নামতে চেয়েছিল জোড়াফুল। যদিও প্রচারে এসে জেতা হারা নিয়ে একপ্রকার জল্পনা বাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। খোলা মঞ্চ থেকে সরাসরি তোপ দেগেছিলেন তিনি, ‘‘অভিষেক (বন্দ্যোপাধ্যায়) আমাকে এখানে প্রচারে আসতে বারণ করেছিল। বলেছিল, দিদি, তুমি গিয়ে আর কী করবে! ওখানে ওরা সব নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছে।’’

তবুও প্রচারে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী নির্বাচনী জনসভায় লোক সংখ্যা এতটাই কম হয়েছিল যে তখন থেকে হার নিয়ে কানাঘুষো শুরু হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর আজকের এই ফলাফল। হার নিয়ে নিশ্চিত থাকলেও নোটার থেকেও যে কম ভোট পাবে দল, এমনটা বোধ করি ভাবেননি খোদ মমতাও। যদিও এই হারের মধ্যেও বিজেপির আসনসংখ্যা এক লাফে অনেকটা কমে যাওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে ভোলেনি সবুজ বাহিনী।

আরও পড়ুন - ১০ বছরের ঘাসফুল দুর্গে ভাঙন! সাগরদিঘিতে কোন মন্ত্রে তৃণমূলকে হারাল বাম-কংগ্রেস জোট?

কিন্তু এই সব কিছুর মধ্যে প্রশ্ন একটাই, কেন এমন ভরাডুবি হল মমতা বাহিনীর? তবে কি প্রথম থেকে ত্রিপুরায় নকল বুঁদিগড় তৈরি করছিল তৃণমূল? কেন চোখের নিমেষে ভেঙে এমন চুরমার হয়ে গেল দুর্গ? এই সবের উত্তর খোঁজা এই তো সবে শুরু। বাংলার পড়শি রাজ্যের এই হার কতটা প্রভাব ফেলবে আসন্ন ২৪-এর ভোটে, এখন সেটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে লাখ টাকার প্রশ্ন। তার ওপর আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছে সাগীরদিঘির ফলাফল। ফলে এখন বেশ চাপের মুখে মমতা বাহিনী।

২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটে ২৪টি আসনে প্রার্থী দিয়ে সাকুল্যে ৬,৯৮৯ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। শতাংশের হিসাবে ০.৩। এ বার ২৮টি আসনে লড়ে প্রাপ্তির ঝুলিতে ২১ হাজারের কিছু বেশি ভোট। শতাংশের হিসেবে প্রায় ০.৯। আপেক্ষিকভাবে দেখলে হয়তো ভোট সংখ্যা বেড়েছে আগের থেকে, তবে নোটার কাছেও হার, এটা যেন মেনে নেওয়া যাচ্ছে না! অথচ ২০২১ সালের পুরভোটে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় প্রায় ২০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। সেবারের ভোটে জেতা প্রার্থীও ছিল জোড়া ফুলের। ফলে তৃণমূলের এ বারের হাল দেখে কটাক্ষ আসছে বাম-কংগ্রেস শিবির থেকে।

আরও পড়ুন - ত্রিপুরায় আজ হাওয়া কোন দিকে? রাম নাকি বাম কার দখলে থাকবে বাংলার এই পড়শি রাজ্য?

পুরো ভোটে বিজেপি জিতলেও, দ্বিতীয় স্থানে জ্বলজ্বল করছিল তৃণমূল। সেখান থেকে এই পতন! স্বাভাবিকভাবে উঠে আসছে বেশ কিছু কারণ। এর আগে উপনির্বাচনেও অবশ্য কিছুটা আঁচ পাওয়া গিয়েছিল এই পরিস্থিতি সম্পর্কে। সেখানে বিজেপির সঙ্গে টক্করে বাকিদের পিছনে ফেলে প্রধান প্রতিদ্বন্ধী হিসেবে উঠেছিল কংগ্রেস। সেদিনের এই ফলাফল যে একদিকে ট্রিমুকের পতন এবং কংগ্রেসের উত্থানকে সূচিত করেছিল তা অবশ্য এখন বেশ ভালোই বোঝা যাচ্ছে। তারপর বিধানসভা ভোটেও ব্যাকফুটে গিয়েছিল তৃণমূল। আর আজকের ফলাফলে তো খুঁজেই পাওয়া গেল না তৃণমূলকে। এর কারণ হিসেবে দায়ী করছেন নির্বাচনী প্রচারের অনীহাকে। বেশ কিছু মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ কয়েকজন নামজাদা দলনে তাকে দেখা গেলেও সেই সংখ্যাটা খুবই কম ছিল। কর্মী সমর্থকদের সংখ্যাটা প্রথম থেকেই চোখে আঙুল দিয়ে স্পষ্ট করে দিচ্ছিল যেন এই হারকে।

এছাড়াও যে পুরোভোটের ফলাফলকে মই করে ত্রিপুরায় উঠে আসতে চেয়েছিল তৃণমূল সেই পুরভোটে দলের দায়িত্বে থাকা সুবল ভৌমিক নিজেই বিজেপিতে যোগদান করেন। পাশাপাশি বাপ্টু চক্রবর্তীর মতো নতুন প্রজন্মের নেতারা ফিরে যান কংগ্রেসে। যার প্রভাব পড়েছে এই ভোটে। মূলত বাংলা এবং বাঙালি অতসিত অঞ্চলগুলিকেই ঘাঁটি হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিল তৃণমূল, অন্যদিকে জনজাতি এলাকার ২০টি আসনে কখনওই তেমন সমর্থন ছিল না তৃণমূলের, সেখানে কাজ করে তিপ্রা ভাবাবেগ। তাই কোনও ভাবেই আর ঘুরে দাঁড়ানোর জায়গা পেল না তৃণমূল। ‘বাংলা মডেল’ গড়ার স্বপ্ন আপাতত অস্তাচলে। বরং এই হার আসন্ন ২৪-এর ভোটকে যাতে বিশেষ প্রভাবিত করতে না পারে, এখন সেটা নিয়েই ভাববে দল, বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞ মহলের।

More Articles