ইরানে হামলা করেছিল আমেরিকাই?

Trump Iran attack: ওয়াকিবহাল বলেছে, এটি নিছক বক্তব্য নয়, আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কৌশল। নিজের সমর্থকদের চোখে আবারও ‘শক্তিশালী নেতা’ হিসেবে ফিরে আসতে চাইছেন ট্রাম্প।

বিশ্বজুড়ে আবারও উত্তেজনা বাড়ালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক সাক্ষাৎকারে তিনি সরাসরি স্বীকার করলেন— ইরানের উপর সাম্প্রতিক ইজরায়েলি হামলায় তিনিই ছিলেন পরিকল্পনাকারী। ৬ নভেম্বর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ইজরায়েলই প্রথমে হামলা চালায়। হামলাটা ছিল ভয়ংকর শক্তিশালী। পুরো ঘটনাটার দায়িত্ব তখন আমার হাতেই ছিল।” প্রশ্ন হলো, কেন এখন এ কথা বলছেন ট্রাম্প?

ট্রাম্পের মন্তব্যের পরই কূটনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এতদিন ওয়াশিংটন দাবি করে আসছিল, ইরানে হামলার সিদ্ধান্ত ছিল সম্পূর্ণ ইজরায়েলের নিজস্ব পদক্ষেপ, যুক্তরাষ্ট্র শুধু মিত্রদেশ হিসেবে সমর্থন জানিয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্যে সেই দাবিই প্রশ্নের মুখে। তাঁর স্বীকারোক্তি ইঙ্গিত দিচ্ছে— হামলায় ছিল সরাসরি মার্কিন সম্পৃক্ততা, যা আন্তর্জাতিকভাবে বড় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

আরও পড়ুন

ইরান হামলার প্রস্তুতি যেভাবে নিয়েছে ইজরায়েল

চলতি বছরের জুন মাসে ইরানের উপর ভয়াবহ বিমান হামলা চালায় ইজরায়েল। নিশানায় ছিল ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা— নাতাঞ্জ, ইসফাহান ও ফোরডো। হামলায় নিহত হন বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা, বিজ্ঞানী ও সাধারণ নাগরিক। ইরান প্রতিশোধ নিতে দ্রুত পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ইজরায়েলের দিকে। এর পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়। যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে দাবি করেছিল, তারা কেবল ইজরায়েলের নিরাপত্তা রক্ষায় পাশে ছিল। কিন্তু সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি স্বীকার করে নিলেন যুক্তরাষ্ট্র ইজরায়েলের সঙ্গ দিয়েছে।

প্রশ্ন হলো, কেন ট্রাম্প এখন এই স্বীকারোক্তি দিচ্ছেন? বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই মন্তব্য আসলে রাজনৈতিক কৌশল। মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা ব্যবহৃত হচ্ছে ট্রাম্পের শক্তিশালী নেতৃত্বের ইমেজ তৈরির হাতিয়ার হিসেবে। ওয়াকিবহাল বলেছে, এটি নিছক বক্তব্য নয়, আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কৌশল। নিজের সমর্থকদের চোখে আবারও ‘শক্তিশালী নেতা’ হিসেবে ফিরে আসতে চাইছেন ট্রাম্প। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমে আসছে— এমন সমালোচনার জবাব দিতেই তিনি পুরনো ‘কঠোর’ অবস্থান পুনরায় সামনে আনছেন।

আরও পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ! কোন পক্ষের কতটা লাভ, ক্ষতির খতিয়ান কত?

ট্রাম্পে বোঝাতে চেয়েছেন, আবারও বিশ্বমঞ্চে শক্তিশালী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনার ক্ষমতা তাঁরই আছে।  বক্তব্যকে সামনে রেখে ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের কাছে ‘কঠোর ও দৃঢ় নেতা’ হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি গড়তে চাইছেন।এখন পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে, তা অনিশ্চিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি যুক্তরাষ্ট্র আবার মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে, তবে তার প্রভাব পড়বে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজার ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও।

তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা এও বলছেন, তাঁর এই মন্তব্য শুধু মার্কিন রাজনীতির ভেতর সীমাবদ্ধ নয়; এটি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে। ইরান ইস্যুকে ঘিরে তৈরি নতুন উত্তেজনা যদি বাড়ে, তবে তার দায় বর্তাবে মার্কিন প্রশাসনের উপরও। এই অবস্থায় ট্রাম্পের বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে, শক্তির প্রদর্শনই যেন হয়ে উঠছে রাজনৈতিক অস্ত্র— আর সেটাই বিশ্ব রাজনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে। তবে প্রশ্ন হলো, এই শক্তি প্রদর্শনের ফল কতটা স্থায়ী হবে, আর তার মূল্যই বা কত ভয়াবহ হতে পারে? বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে, ট্রাম্পের এই রাজনৈতিক কৌশল মধ্যপ্রাচ্যে আরও অস্থিরতা ডেকে আনে কি না।

More Articles