নিন্দার মাঝে উজ্জ্বল নাম! চন্দ্রযানের সাফল্যে যে ভাবে জুড়ল যাদবপুরের নাম
ISRO’s Chandrayaan-3: চন্দ্রযান ৩-র সফট ল্যান্ডিংয়ের বিষয়টি যারা সামলাচ্ছিলেন, সেই দলেই ছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই প্রাক্তনী। বর্তমানে তাঁরা ইসরোর গবেষক।
চাঁদের মাটি ছুঁয়ে ফেলেছে ভারত। চাঁদে পৌঁছনোর নিরিখে চতুর্থ দেশ হলেও, চাঁদের দক্ষিণ মেরু প্রথম ছুঁয়েছে তাঁরাই। এমন গর্বের মুহূর্ত কটাই বা আসে আমজীবনে! বরং লজ্জা, অপমানের মুহূর্তদের পরিসংখ্যানই বেশি। এই যেমন কদিন আগেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল হস্টেলে ঘটে যায় ভয়ঙ্কর অপ্রিয় একটি ঘটনা। হস্টেলের তিনতলা থেকে পড়ে মৃত্যু হয় প্রথম বর্ষের এক পড়ুয়ার। সেই মৃত্যু ঘিরে উঠে আসে ব়্যাগিং যোগের অভিযোগ। গ্রেফতার হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ও প্রাক্তনী মিলে ১৩ জন। প্রশ্ন ওঠে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা, মান নিয়েও। আর তা অস্বাভাবিক নয় মোটেই। এর পর একের পর এক পড়ুয়ার অমূলক দাবি সেই বিতর্কে ঘি ঢালতে থাকে অনবরত। গত কয়েকদিন ধরে রাজ্য, রাজনীতি পেরিয়ে দেশের পরিমণ্ডলেও পৌঁছে গিয়েছিল সেই রেশ। বিভিন্ন মহলে নিন্দার ঝড় উঠেছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্বমানের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে চন্দ্রাভিযানের খবর যেন এল একদমকা বাতাসের মতো। অনেকদিন পরে যেন গর্ব করার মতো কিছু একটা পেল দেশ। আর চন্দ্রযান ৩-র সাফল্য যেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কেও ফিরিয়ে দিল কিছুটা হৃত গৌরব।
আরও পড়ুন: চাঁদের মাটি ছোঁয়ার অপেক্ষায় চন্দ্রযান-৩, ভারতের চাঁদে যাওয়ার নেপথ্যে যেসব তুখোড় মস্তিষ্ক…
দু'বারের ব্যর্থতার দাগ মুছে চাঁদের মাটিতে সফল ভাবে পা রেখেছে চন্দ্রযান ৩। গত ১৪ জুলাই শ্রীহরিকোটা থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় চন্দ্রযান ৩-টিকে। গত ৫ অগস্ট চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছয় সেটি। অবশেষে ২৩ অগস্ট অর্থাৎ বুধবার সন্ধ্যেয় চাঁদের মাটিতে অবতরণ। ২০১৯ সালে ঠিক অবতরণ করার মুখেই ধাক্কা খেয়েছিল চন্দ্রযান ২। সফট ল্যান্ডিং না হওয়ায় চাঁদের মাটিতে আছাড় খেয়ে ভেঙেচুরে গিয়েছিল সেটি। অধরাই থেকে গিয়েছিল চাঁদ জয়। তাই এবার অবতরণ নিয়ে অতিরিক্ত সতর্ক ছিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা তথা ইসরো। ফলে অতিরিক্ত চাপ ছিল চন্দ্রযান ৩-র সফট ল্যান্ডিংয়ের বিষয়টি যারা সামলাচ্ছিলেন, তাঁদের উপরে। জানা গেল, সেই দলেই ছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই প্রাক্তনী। বর্তমানে তাঁরা ইসরোর গবেষক। সায়ন চ্যাটার্জি ও ড. অমিতাভ গুপ্ত নামে ওই দুই গবেষক গোড়া থেকেই চন্দ্রযান ৩-র সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিশেষত মুন ল্যান্ডিং প্রজেক্টেই কাজ করেছেন তাঁরা।
কয়েক হাজার বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়ারের চার বছরের পরিশ্রমের ফসল আজকের এই সাফল্য। চন্দ্রযান ৩-র প্রতিটা বিজয় মুহূর্তের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তাঁদের বহু রক্ত, ঘাম, নির্ঘুম রজনী। আর তার মধ্যেই ছিলেন ওই দুই 'যদুবংশীয়'। যাদবপুরের পড়ুয়ারা প্রায়শই নিজেদের পরিচয় সেভাবেই দিতে ভালোবাসেন। বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতার শীর্ষে পৌঁছেছেন বহু যাদবপুরের প্রাক্তনী। এ কথা কোনও ভাবেই অস্বীকার করা যায় না। এখনও মুক্তচিন্তার পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু ওই একটা ঘটনা এত বছরের গৌরবে ছিটিয়ে দিয়েছে কালি। ব়্যাগিং সংস্কৃতি যে কোনও ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়, তা যেখানেই হোক না কেন, সেই কথায় এক বাক্যে সায় দিয়েছেন সকলে। তবু এত কিছুর মধ্যেই চন্দ্রযান ৩-র সাফল্যে যাদবপুরকে খুঁজে পাওয়া যেন এই আকালে অনেকখানি অক্সিজেন জোগাচ্ছে 'যদুবংশীয়'-দের।
জানা গিয়েছে, ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর এবং প্রজেক্ট কো-ইনভেস্টিগটর সায়ন। চন্দ্রযান ৩-এর ল্যান্ডার যাতে চাঁদের ভূমিতে কোনও রকম বাধা না পেয়ে পালকের মতো নেমে আসতে পারে, যাতে কোনও ভাবে ভেঙে না পড়ে চন্দ্রযান ২-এর মতো, সেটা দেখাই কাজ ছিল সায়ন ও তাঁর দলবলের। যাদবপুরের অন্য এক প্রাক্তনী অমিতাভ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক। তিনিও যুক্ত ছিলেন চন্দ্রযানের অবতরণ সংক্রান্ত কাজের সঙ্গে। নেমে আসার সময় ল্যান্ডারটি যাতে ঠিক মতো নড়াচড়া করে, কোনও ভাবে যাতে আচমকা স্পিড না বেড়ে যায়, তা নিশ্চিত করাই কাজ ছিল তাঁদের। বহু সময়েই চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে চাঁদের মাটিতে আছড়ে পড়তে পারে চন্দ্রযানটি, তা রুখে ল্যান্ডারটিকে ঠিক পথে রাখাই ছিল অমিতাভ ও তাঁর টিমের কাজ।
আরও পড়ুন:চাঁদের মাটিতে ভারতীয় তেরঙার ছবি আঁকা দিয়ে শুরু, এবার কী করবে প্রজ্ঞান?
চন্দ্রযান মিশনের সবচেয়ে গুরুতর ছিল বোধহয় এই সফট ল্যান্ডিং পর্বটি। গতবার এই ধাপটিতে এসেই মুখ থুবড়ে পড়েছিল চন্দ্রযান ২। ফলে ইসরো তো বটেই, গোটা দেশেরই অতিরিক্ত প্রত্যাশা জুড়ে ছিল এই ধাপটিকে ঘিরেই। যেখানেই দুর্দান্ত কাজ করে দেখিয়েছেন সায়ন, অমিতাভ ও তাদের সংশ্লিষ্ট টিম। দেশের মুখ তো তাঁরা উজ্জ্বল করেইছেন, পাশাপাশি কলকাতা, তথা গোটা পশ্চিমবঙ্গের জন্যই এনে দিয়েছেন অতিরিক্ত সম্মান। আর পাশাপাশি তাদের হাত ধরেই সামান্য় হলেও মান ফিরেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের। আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজও কৃতিরাই বেরোন। সেই মান কোথাও ক্ষুন্ন হয়নি আজও।