‘ভোট চুরি’ স্লোগানেই বিহারে উল্টো ফাঁদে কংগ্রেস?

Congress Failed in Bihar 2025: তাদের মতে, ভোট চুরি নিয়ে এত জোর দেওয়ায় মূল ইস্যুগুলিই আড়ালে চলে গিয়েছে। তবুও রাহুল এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব এই সতর্কবার্তা গুরুত্ব দেননি।

বিহারের ২০২৫ সালের নির্বাচনের ফল কংগ্রেসের জন্য এক কথায় বিপর্যয়। ৬১টি আসনে লড়েও তারা পেয়েছে মাত্র ৬টি, স্ট্রাইক রেট মাত্র ৯.৮%। এত বড় ধাক্কা কংগ্রেসকে আবার নতুন করে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে, কোথায় ভুল হলো? কেন দলের ভেতরকার সতর্কবার্তা গুরুত্ব পেল না?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কংগ্রেসের এই পতন হঠাৎ হয়নি; মাসের পর মাস ধরে দলের ভেতরে যে সতর্ক সংকেত উঠছিল, তা উপেক্ষা করাই আজকের এই ভরাডুবির কারণ। নির্বাচনের ঠিক আগেই রাহুল গান্ধী ‘ভোট চুরি’কে কেন্দ্র করে স্লোগান তুলেছিলেন। বিহারের সর্বত্র তিনি দাবি করেছিলেন, “এই নির্বাচন ন্যায্য হবে না, ভোট চুরি হবেই।” কিন্তু দলের একাধিক সংগঠক আগে থেকেই সতর্ক করেছিলেন, এই আক্রমণাত্মক বক্তব্য ভোটের প্রচারে সাড়া ফেলছে না, বরং উল্টো প্রতিক্রিয়া তৈরির ঝুঁকি বাড়ছে। তাদের মতে, ভোট চুরি নিয়ে এত জোর দেওয়ায় মূল ইস্যুগুলিই আড়ালে চলে গিয়েছে। তবুও রাহুল এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব এই সতর্কবার্তা গুরুত্ব দেননি।

বিহারে রাহুলের দু'সপ্তাহের ভোটার অধিকার যাত্রা কংগ্রেসের পক্ষে সমর্থন জোগাবে— এমন আশা ছিল নেতৃত্বের। ভিড় ছিল, উত্তেজনাও ছিল, কিন্তু মাঠের সংগঠন ছিল দুর্বল; মানুষের অংশগ্রহণ ভোটের বাক্স অবধি যায়নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এখন বলছেন, ফল খারাপ হওয়ায়; বিজেপির হাতে ‘ভোট চুরি’ বাক্যটাই উল্টো অস্ত্র হয়ে গিয়েছে, এই আশঙ্কা আগেই ছিল।

আরও পড়ুন

বিহারে শূন্য জন সুরজ! প্রশান্ত কিশোরের অঙ্ক কেন মিলল না?

আরজেডি (Rashtriya Janata Dal)-কংগ্রেস জোটে আসন ভাগাভাগির সময় থেকেই অস্বস্তি ছিল। তেজস্বী যাদবকে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে সামনে আনার জন্য চাপ দিলেও কংগ্রেস তাতে রাজি হয়নি। দলের ভেতর থেকে এখন এমন কথাও সামনে আসছে যে অত্যন্ত পিছিয়ে থাকা শ্রেণি (EBC)-কে লক্ষ্য করে আলাদা ম্যানিফেস্টো বানানো হয়েছিল, কিন্তু তা বাস্তবের সঙ্গে খাপ খায়নি। কংগ্রেস নেতৃত্ব ভেবেছিল উচ্চবর্ণ ও EBC-দের যৌথ সমর্থন পাওয়া যাবে কিন্তু রাজনৈতিক বাস্তবতা ছিল অন্য।

কংগ্রেসের বিহারের সংগঠন দীর্ঘদিন ধরেই দুর্বল, এই অভিযোগ আগেও ছিল। কিন্তু এবারে সেই দুর্বলতা প্রকট হয়ে উঠেছে। অনেক ব্লক স্তরের নেতা অভিযোগ করেছেন, যোগ্য কর্মীরা টিকিট পাননি। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও স্থানীয়দের বক্তব্য শোনা হয়নি, উপর মহলের নির্দেশ বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষ্ণ আল্লাভারুর অভিজ্ঞতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে, যার কারণে RJD-র মতো বড় সঙ্গীর সঙ্গে সমন্বয় দুর্বল হয়ে পড়েছিল।

আরও পড়ুন

বিহারে ভরাডুবির মধ্যেও যেভাবে ভেসে রইল বামেরা

নির্বাচনের আগের দিন রাহুল বলেন— “ভোট চুরি হয়েছে, প্রমাণ দেব।” কিন্তু দলের অনেক নেতাই এই ভাষণের সঙ্গে একমত ছিলেন না। তাঁদের মত, কৌশলগতভাবে আরও নমনীয় ও বাস্তবভিত্তিক প্রচার দরকার ছিল; প্রয়োজন ছিল স্থানীয় ইস্যু, মুখ্যমন্ত্রীপ্রার্থী নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান, এবং শক্তিশালী গ্রাউন্ড-মেকানিজম। রাহুলের বিদেশ সফর ও তাঁর অনুপস্থিতিতে বিহারের কৌশল তৈরিও প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

রাহুল-সোনিয়া-মল্লিকার্জুন খড়্গে নেতৃত্ব জানিয়েছেন, ফলাফল পর্যালোচনা করা হবে। তবে বিহারে কংগ্রেস এই মুহূর্তে শুধু রাজনৈতিক নয়, সংগঠনতান্ত্রিক সংকটও প্রকট। ২০২৬ সালের যে সব বড় নির্বাচন সামনে (অসম, ওড়িশা, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ) সেই সব জায়গায় দলের পুনর্গঠন কীভাবে সম্ভব, সেটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
বিহার নির্বাচনে কংগ্রেস যে ধাক্কা খেল, এতে পুরো দলের নীতিগত ও কৌশলগত দুর্বলতাও সামনে এল। দলের নিজের নেতারা যে সতর্কতা জানিয়েছিলেন, যদি তা গুরুত্ব পেত তাহলে চিত্র হয়ত কিছুটা আলাদা হতে পারত।

More Articles