দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অপেক্ষায় প্রহর গুণছি
আমি প্রতিশোধের কথা বলছি না। প্রতিরক্ষার কথা বলছি। আমি প্রতিশোধে বিশ্বাস করি না। তবে প্রতিরক্ষায় বিশ্বাস করি ।
কয়েক রাত্রি আমি ঘুমতে পারিনি, ঘুমতে পারছিলাম না। আজ ১৫ দিন হয়ে গেল, এখনও তদন্তের কোনও অগ্রগতির কথা জানা যায়নি। জানা যাচ্ছে শুধু শরীরের ক্ষতর কথা। আমার কাছে কোনও উত্তর নেই। আমার কাছে শুধু অসহায় শোক আছে। আমি পথে নামতে পারিনি। ঘরেই কিছু কবিতা লিখেছি। মণিপুর নিয়েও কবিতা লিখেছিলাম। আমি সেই মেয়েটির কথা ভেবে মেয়েটির বাবা মার কথা ভেবে কয়েকটি কবিতা লিখেছি। কিন্তু আমি সেসব কাউকে পড়াইনি। আমি তো আমার লেখা প্রকাশ করা বন্ধ করেছি। কাউকে পড়ানো মানেও সেটা প্রকাশ করা। তাই কাউকে পড়াইনি। আমি কিছু লেখা লিখেছি, তাতে আমার একটু নাম হয়েছে এটুকুই। আমার নাম-পরিচয়ের কী মূল্য? আমার কাছে তাঁর কোনও মূল্য নেই। এই বিষয়ে কোনও কিছু বলার আমার অধিকার নেই। কারণ আমি তো কিছুই করতে পারিনি।
আর. জি. কর কাণ্ডের এক বছর আগে মণিপুরে মেয়েদের ধর্ষণ করে নগ্ন অবস্থায় রাস্তায় হাঁটানো হয়েছিল। আমার মেয়ের ক্ষেত্রে দু'টিই হয়নি, আমি ভাগ্যবান, কিন্তু হতেও পারত। ভবিষ্যতে হবে কি না, জানি না। আমার মেয়ে যখন বাড়ি থেকে বেরয়, যেমন-রাজ্যে দেশে কত মেয়েই তো পড়তে যায়, কর্মক্ষেত্রে যায়, গবেষণায় যায়- বাড়িতে বুড়ো বাবা-মাকে ভাবতে হয় তাঁদের মেয়ে কি সুস্থ অবস্থায় অবস্থায় ফেরত আসবেন? না কি কোনওদিনই আসবে না? এসব কথাই আমার খালি মনে হয়।
নিগৃহীতা বলতে আমার ইচ্ছে করে না। মহিলা চিকিৎসকের বাবা-মায়ের সঙ্গে হাসপাতালে যা হয়েছে, আমি নিজেকে এই জায়গায় বসিয়ে ভাবি, আমি এই পরিস্থিতিতে কী করতাম? আমিও কিছুই করতে পারতাম না। আমার সেই বাবা-মায়ের কথা মনে পড়ে, যারা পাশের ঘরে মেয়ের দেহ থাকা সত্ত্বেও তিন ঘণ্টা ধরে পুলিশকে অনুরোধ করছেন, তাঁর মেয়েকে শেষ দেখা দেখতে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তিন ঘণ্টা ধরে তাঁদের অনুরোধ রাখা হয়নি। তাঁরা পা ধরতে পর্যন্ত গিয়েছিল। আমরা কোথায় বাস করছি? যাঁর নির্দেশে তিন ঘণ্টা ধরে পুলিশের যে আধিকারিককেরা দেহ দেখতে দেননি, তাঁর পরিচয় জানার অধিকার কি আমাদের নেই? এদের কি কোনও বিচার হয়েছে? হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট এদের নিয়ে কিছু বলেছে?
যারা এই ভয়াবহ কাণ্ডে যুক্ত, তাদের বড় চক্র আছে। অনেক বড় চক্র। এফআইআর করতে ১৪ ঘণ্টা সময় লেগে গিয়েছে। এত সময় লাগবে কেন? দেশ জুড়ে এরা ছড়িয়ে আছে। কারও জীবনে ঘটেছে, কারও জীবনে ঘটেনি। আমার মেয়ের জীবনেও এটা ঘটতে পারত। মেয়ের বাড়ি ফিরতে দেরি হলে বাবা-মা বাড়িতে ছটফট করেন। তা এমনি এমনি নয়। এর আগে মণিপুর হয়ে গিয়েছে। আরও অনেক কিছু হয়েছে।
রাজ্যজুড়ে লাগাতার জমায়েত হচ্ছে নারীদের। যেমন প্রবল প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। তাতে আমার মনে হয় যে, অনেক কিছু সামনে বেরিয়ে আসবে। কিন্তু ছোট ছোট বিষয়গুলো ছেড়ে দেওয়া যাবে না। পুলিশ অফিসার, যিনি বাবা-মাকে বসিয়ে রেখেছিলেন, যাঁর নির্দেশে বসিয়ে রেখেছিলেন, যিনি ফোন করে বলেছেন আত্মহত্যার কথা, তাঁদের সকলের যেন এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়- ভবিষ্যতে এমন কাজ করতে যেন কেউ সাহস না পায়।
আমি প্রতিশোধের কথা বলছি না। প্রতিরক্ষার কথা বলছি। আমি প্রতিশোধে বিশ্বাস করি না। তবে প্রতিরক্ষায় বিশ্বাস করি। গতকালও সংবাদপত্রে পড়েছি অসমে এক স্কুলে ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন করা হয়েছে। সারা ভারতবর্ষ জুড়ে সব বাবারা ভয়ে আছেন। তাদের মেয়ে সুরক্ষিত আছে তো বাইরে? কর্মস্থলে? বিদ্যালয় বা গবেষণাস্থলে? দোষীদের এবং দোষীদের আড়াল করতে চাওয়া প্রতিটি ব্যক্তির কঠিন শাস্তি হলে বাইরে বেরনো মেয়েদের প্রতিরক্ষার একরকম ব্যবস্থা হয়তো হয়।
(অনুলিখনে তনভিয়া বড়ুয়া)