আয়ু কমছে ভারতীয়দের! প্রতিদিন কত কদম হাঁটলেই কমতে পারে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা?
Heart Attack: ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে একটি ভুল ধারণাও রয়েছে যে, সারাদিনে গৃহস্থালির কাজের মাধ্যমে যথেষ্ট শারীরিক খাটাখাটনি হয়ে যায় তাঁদের।
ভারতীয়দের শারীরিক কর্মক্ষমতা ক্রমেই কমছে। নানা রোগের ডিপো হয়ে উঠছে শরীর, আর তা কোনও বয়সের তোয়াক্কা না করেই। কেন এমন? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানাচ্ছে, সারাদিন দেহকে যদি ন্যূনতম খাটানো না হয় তাহলে তা রোগের আঁতুড়ঘর হয়ে উঠতে বাধ্য। প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি থেকে ভারী শারীরিক কার্যকলাপের বা ওয়ার্কআউট প্রয়োজন। আর ৫০ শতাংশেরও বেশি ভারতীয় এই ন্যূনতম শারীরিক কার্যকলাপটুকুও করেন না।
শারীরিক কার্যকলাপ মানেই যে জিমে গিয়ে প্রবল খাটাখাটনি করতে হবে এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। শরীর সম্পর্কে আসলে সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। খুব সহজেই চাইলে রোজ একটু একটু করে শরীরকে কায়িক পরিশ্রমের দিকে নিয়ে যাওয়া যায়। সম্প্রতি প্রসপেক্টিভার অ্যাসোসিয়েশন অব ডেইলি স্টেপস উইথ কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ: সার্কুলেশন জার্নালে একটি গবেষণা প্রকাশ পেয়েছে। ওই গবেষণার সমীক্ষা বলছে, ৬০ বছরের বেশি বয়সীরা প্রতিদিন যদি গড়ে ৬,০০০-৯,০০০ কদম হাঁটেন তাহলে কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে। গবেষকরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য ৪২টি দেশের ২০,০০০ জনেরও বেশি মানুষেরর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, যারা প্রতিদিন ২,০০০ কদম হাঁটেন তাদের তুলনায়, যারা প্রতিদিন ৬,০০০ থেকে ৯,০০০ কদম হাঁটেন তাদের হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক সহ কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে যায়।
আরও পড়ুন- বুকে চাপ দিয়েই বাঁচানো যেতে পারে হার্ট অ্যাটাকের রোগীকে! জানেন সঠিক পদ্ধতি?
অবসর গ্রহণের পরে শারীরিক কার্যকলাপ হ্রাসের জন্য দায়ী ভারতেরই সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ধারণা। কাজের জায়গায় যাওয়ার সময় হাঁটা এবং কর্মক্ষেত্রে হাঁটা কর্মরত ভারতীয়দের মধ্যে শারীরিক কার্যকলাপের এক নিয়মিত অংশ যা অবসর গ্রহণের পরে হঠাৎ কমে যায়। এই বদল শরীরে গুরুতর প্রভাব ফেলে। অন্যান্য বিনোদনমূলক শারীরিক কার্যকলাপ দিয়ে শরীরকে সচল রাখা তাই ভীষণ দরকার৷ অবসরের পরে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, উদ্দেশ্যহীনতা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির দিকে নিয়ে যায় মানুষকে। অতএব, শরীরকে সচল না রাখলে তখন মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে, প্রধানত হার্টের ক্ষেত্রে তা ব্যাপক ক্ষতি ঘটাতে পারে।
বেশিরভাগ ভারতীয় পরিবাররেই সংসারের দায়িত্ব এখনও মহিলাদের উপরেই পড়ে। যার ফলে নিজেদের জন্য সময় বের করে শারীরিক কার্যকলাপে নিযুক্ত হওয়া এক প্রকার অসম্ভব, যদিও মহিলাদের খুব বেশি করে স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে একটি ভুল ধারণাও রয়েছে যে, সারাদিনে গৃহস্থালির কাজের মাধ্যমে যথেষ্ট শারীরিক খাটাখাটনি হয়ে যায় তাঁদের। তবে হ্যাঁ, কিছুক্ষেত্রে যদি স্মার্ট ওয়াচে বা অন্য কোনও যন্ত্রে রোজের 'স্টেপ' মাপা যায় তাহলে দৈনন্দিন কার্যকলাপ নজরে রাখতে সুবিধা হয়।
আরও পড়ুন- রাতদিন সমানে জিম করেন, হার্ট সুস্থ আছে তো? নিজের অজান্তেই যে বিপদ ডেকে আনছেন
দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতায় প্রাপ্তবয়স্কদেরও সাহায্য করতে পারে এই 'স্টেপ' মাপা। ভারতে করোনারি আর্টারি ডিজিজ (CAD), ডায়াবেটিস এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের কারণে মৃত্যুর হার অত্যন্ত বেশি। তাই এই জাতীয় রোগ যাদের রয়েছে অবশ্যই রোজ কত কদম হাঁটা উচিত সেই লক্ষ্য নির্ধারণ করা উচিত। স্বাস্থ্যের অবনতি রোধ করতে রোজ হাঁটা ধীরে ধীরে কাজ করতে পারে। গবেষণা বলছে, কার্ডিওভাসকুলার রোগ অল্প বয়স্কদের তুলনায় বৃদ্ধদের মধ্যে অনেক বেশি শক্তিশালী। সিভিডি আসলে বার্ধক্যজনিত রোগই এবং প্রায়ই দেখা যায় পর্যাপ্ত বয়স না হওয়া পর্যন্ত এই রোগ ঘটে না। গবেষণা বলছে, স্ট্রোক, হার্ট ফেইলিওর, বা হার্ট অ্যাটাক অল্পবয়সীদের মধ্যে ঘটলেও তা এখনও সবচেয়ে বেশি বয়স্কদের ক্ষেত্রেই। আর শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা কার্ডিওভাসকুলার রোগের নানা সমস্যাকে সামলাতে পারে, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস। এই অবস্থাগুলি কার্ডিওভাসকুলার রোগের প্রাথমিক প্রতিরোধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং রোজ নির্দিষ্ট পরিমাণ হাঁটা কোনওভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না, দেহ যত কাজের মধ্যে থাকবে, পরিশ্রমের মধ্যে থাকবে, ততই কমবে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা।