হিংসায় শুরু পঞ্চায়েত ভোটের সকাল? বেলা বাড়ছে রক্তপাতে
West Bengal Panchayat Election 2023: সমস্ত নিরাপত্তা সতর্কতার মুখে ছাই দিয়ে রেজিনগরে সকাল সকাল আরেক মৃত্যু প্রমাণ করে দিল, রক্ত থামবে না।
রক্ত ছাড়া লড়াই জেতা সম্ভব না। গণতন্ত্রের ভূমিতে একথা প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষ মরবে, লাশ পড়বে, গুলি চলবে, বোমা ফাটবে- এসবে মানুষের দশক খানেক আগেও ক্ষোভ, রাগ, আতঙ্ক হলেও, এখন তা মাত্রাতিরিক্ত গা সওয়া। প্রতিবারই কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানো, কেন্দ্রীয় বাহিনী কবে আসবে, কত কোম্পানি আসবে ইত্যাদি নিয়ে তরজা চলবে, প্রতি পঞ্চায়েতই রক্তে লাল হবে। বিকেন্দ্রীকরণের রাজনীতিকে গ্রাম দখলের লড়াইয়ে পর্যবসিত করলেন যারা, সেই রাজনৈতিক দলের মাথারাও জানেন, অবাধ ও শান্তিপূর্ণের নামে কোথায় কী বার্তা দিতে হবে। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণা থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে খুনোখুনি। ৮ জুলাই ভোট শুরু হওয়ার আগের রাতে আরও হিংসা, আরও রক্ত! ভোট শুরুই খুন দিয়ে!
হিংসার চরম নজির খাড়া করছে মুর্শিদাবাদ। ভোটের প্রচারের সময় থেকেই। ভোটের দিন মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে বিস্ফোরণে সকাল সকাল প্রাণ গিয়েছে এক ব্যক্তির, তৃণমূল কর্মী তিনি। তৃণমূল কর্মী ইয়াসিন শেখকে বোমা মেরে খুনের অভিযোগ উঠেছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। এই নিয়ে মুর্শিদাবাদে পঞ্চায়েত হিংসার শিকার হয়েছেন ৭ জন! খড়গ্রাম থেকে শুরু করে নবগ্রাম, রেজিনগর, বেলডাঙা- মুর্শিদাবাদের এক একটি অঞ্চলে বিস্ফোরণ বা গুলির শব্দে কেঁপে উঠেছে। গতরাতে বেলডাঙাতেও রাজনৈতিক হিংসার আঁচ মিলেছে। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা থানার অন্তর্গত কাপাসডাঙা ষষ্ঠীতলা এলাকায় গতরাতেই বাবর আলি নামে এক তৃণমূল কর্মী খুন হন। ঘাসফুলের শিবির আঙুল তোলে কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দিকে। সমস্ত নিরাপত্তা সতর্কতার মুখে ছাই দিয়ে রেজিনগরে সকাল সকাল আরেক মৃত্যু প্রমাণ করে দিল, রক্ত থামবে না। মোট ৪৪ হাজার ৩৮২টি ভোট কেন্দ্রে পঞ্চায়েত ভোটগ্রহণ হচ্ছে। এর মধ্যে বুথের সংখ্যা ৬০ হাজার ৫৯৩। অশান্তি ছড়িয়েছে উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্রই।
মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামেও ফের খুন হলেন রাজনৈতিক কর্মী। তবে এটি খুনের বদলা খুন! কংগ্রেস কর্মীকে খুনের অভিযোগ ছিল যার বিরুদ্ধে সেই তৃণমূল কর্মীর দেহ উদ্ধার হলো এবার। কংগ্রেস কর্মী ফুলচাঁদ শেখ খুনে অভিযুক্ত ছিলেন তৃণমূল কর্মী সাবিরউদ্দিন। মনোনয়ন পর্বের প্রথম দিনই খড়গ্রামের রতনপুরে খুন হয়েছিলেন ফুলচাঁদ। তাঁর বাড়িতে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসও গিয়েছিলেন। রাজ্যপাল ফিরতেই খুনের বদলা সাঙ্গ!
বিধানসভা ভোটের মতোই নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েত ভোটেও সকলের নজরে থাকবে স্বাভাবিক বিষয়! সকাল সকাল সেখানে বন্ধ ভোট! নন্দীগ্রামে কেন্দ্রীয় বাহিনী নেই, তাই ভোট বয়কটের ডাক দিলেন স্থায়ীয় মানুষরা। ভোটগ্রহণ বন্ধ, বুথের দরজা বন্ধ! ব্যালট বাক্সও ফেলে দেওয়া হলো!
ডোমকলের কুপিলা এলাকায় দুই তৃণমূল কর্মী গুলিবিদ্ধ। উত্তর ২৪ পরগনার কদম্বগাছিতে নির্দল সমর্থক খুন হয়েছেন, প্রতিবাদে বুথের সামনে বসে রইলেন নিহতের স্ত্রী। কোচবিহারের সিতাই বিধানসভার এক নম্বর ব্লকে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হলো। দিনহাটার পুঁটিমারি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে নির্দল প্রার্থীকে লক্ষ্য করে গুলি করার অভিযোগ তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে।
সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। ভোটপর্ব মিটতে মিটতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তেও পারে। তবে শেষ নয় সেখানে। ভোটগণনা আর ফলাফল ঘোষণার পরে জয় পরাজয়ের উল্লাসখেলায় লাশের সংখ্যা যে বেড়ে কোথায় ঠেকবে কেউ জানে না।