হলুদ-কমলা-লাল কোনওটাই নয়! সূর্যের আসল রঙ জানলে গুলিয়ে যাবে চেনা বিজ্ঞানও
Color of The Sun: একই সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় যদি আপনি মঙ্গল থেকে দেখেন, দেখবেন সূর্যের রঙ নীল!
সূর্যের ছবি আঁকতে গেলেই হাত চলে যায় ডিমের কুসুমের রঙের দিকে। শিশুবেলায় ছবি আঁকলেই সূর্যের রং হলুদ বা কমলা। গোল সূর্যের গায়ে আবার দাগ কেটে বুঝিয়ে দেওয়া হয় তার ছ'টা। আরেকটু বড় হলে, রঙের সঙ্গে সবিশেষ মোলাকাত হলে হলুদ আর ডিমের ওই কুসুম রঙা মিশে নতুন রঙ পায় সূর্য। সত্যিই তো, সূর্যের আসল রঙ কী? গোলাপি নয়, কালো নয়, নীল নয়, সূর্যের রঙ আসলে অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। পৃথিবীতে সূর্যাস্তের সময় সূর্যের রং লাল-কমলা হতে পারে, কিন্তু সেই একই সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় যদি আপনি মঙ্গল থেকে দেখেন, দেখবেন সূর্যের রঙ নীল! আজ্ঞে, সূর্যের রঙ নীল!
সূর্যের রঙ কি সত্যিই হলুদ?
সূর্য আসলে সাদা এবং এটি দু'টি কারণে সাদা। একটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে সূর্য থেকে নির্গত আলো এবং অন্যটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের চোখের কার্যকারিতা। সূর্য সম্পূর্ণ ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বর্ণালী জুড়ে আলো নির্গত করে, রেডিও তরঙ্গ থেকে গামা রশ্মি পর্যন্ত। কিন্তু সূর্য, অন্য যে কোনও বস্তুর মতোই, তার তাপমাত্রার উপর ভিত্তি করেই আরও আলো দেয়। এই বন্টনকেই বর্ণালী বলা হয় এবং সূর্যের নির্গমন সেই তরঙ্গদৈর্ঘ্য জুড়ে খুবই শক্তিশালী।
আরও পড়ুন- পৃথিবীর সমস্ত মানুষ যদি একই সময়ে একইসঙ্গে লাফ দেন, কী হবে?

মঙ্গল গ্রহে সূর্যাস্ত
মঙ্গল গ্রহে সূর্য ডুবে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নাসার মার্স এক্সপ্লোরেশন রোভার স্পিরিট এক অত্যাশ্চর্য দৃশ্য লেন্সবন্দি করে। এই প্যানোরামিক দৃশ্যটি রোভারের ৪৮৯ তম মঙ্গল দিবসের সন্ধা প্রায় ৬:০৭-এ তোলা হয়েছিল।
যদি সূর্য নিখুঁতভাবে নির্গমন করতে পারে, তবে এর সর্বোচ্চ সীমা ৫০০ ন্যানোমিটারের কাছাকাছি হবে, যেটি বর্ণালীর সবুজ অংশে দৃশ্যমান। কিন্তু সূর্য সবুজ নয় কারণ এটি প্রচুর নীল, হলুদ, কমলা এবং লালও নির্গত করছে এবং সব মিলিত আলোকে আমরা একসঙ্গে সাদা আলো বলি।
আরও পড়ুন- মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় রহস্য আবিষ্কার! ৩০,০০০,০০০,০০০ সূর্যকে গিলে খেতে পারে এই দানব!
Space Fact: The sun is actually white, but appears yellow because of Earth's atmosphere pic.twitter.com/g2ttX1CglP
— Latest in space (@latestinspace) September 12, 2022
কোনও তারার রঙ সবুজ নয় কেন?
কোনও তারার রঙই সবুজ নয়। সূর্য সাদা ঠিকই কিন্তু সামান্য পান্না রঙ হলে কীই বা এমন হতো? লাল তারা, নীল তারা, হলুদ তারার কথা শোনা গিয়েছে। কিন্তু সবুজ তারা বা বেগুনি তারা নেই কেন? এখানেই আমাদের দৃষ্টিশক্তি কার্যকারিতার বিষয়টি চলে আসে। মানুষ রড এবং শঙ্কু নামক বিশেষ কোশ ব্যবহার করে আলো দেখতে পায়। শঙ্কুগুলির সাহায্যে আমরা রঙ দেখতে পারি এবং এটি তিন প্রকার: L, M, ও S, লম্বা, মাঝারি বা ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্য দেখার ক্ষমতা অনুযায়ীই এর এমন নামকরণ হয়েছে। আমাদের চোখ কিন্তু মোটেও নিখুঁত মেশিন নয় এবং এই শঙ্কুগুলি সমানভাবে সমস্ত রঙের সঙ্গে প্রতিক্রিয়াও করে না। আমরা সবুজ আলো ভালোভাবে দেখতে পাই কারণ এটি শুধুমাত্র মাঝারি দৈর্ঘ্যেরই নয়, ছোট এবং দীর্ঘ শঙ্কুর মাধ্যমে আমরা এই আলো দেখতে পারি।
সবুজ তারার অভাবের জন্য গুরুত্বপূর্ণ M শঙ্কু। যদি কিছু M এবং L দুই শঙ্কুকেই প্রভাবিত করে, তাহলে বাস্তবে তা সবুজ আলোর কাছাকাছি হলেও আমরা দেখি হলুদ। আমাদের চোখ বেগুনি রঙের প্রতি এতটা সংবেদনশীল না হওয়ার কারণে বেগুনি তারাগুলিকে আমরা নীল দেখি। তাহলে মোদ্দা বিষয় হলো, সূর্য সাদা, এবং যদি একান্তই কাছাকাছি কোনও বর্ণে সূর্যকে রাখতে চাই তাহলে সেটি হলুদ!

Whatsapp
