হকি স্টিক দিয়ে মারধর, বাবা-মাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি, অভিযোগপত্রে যা লিখেছেন নির্যাতিতা

Kolkata Law College Incident: নির্যাতিতা মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্রের পায়ে ধরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন বলেও জানান। নির্যাতিতার অভিযোগ অনুসারে, যখন সে পালানোর চেষ্টা করে মূল অভিযুক্ত তাঁকে হকি স্টিক দিয়ে মারধর কর...

আর.জি কর ঘটনার এখনও এক বছর হয়নি। তারই মধ্যে সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। হাসপাতালের পর এবার আইন কলেজে ছাত্রীকে গণধর্ষণ। বুধবার কসবা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিতা। সিএনএন-নিউজ ১৮-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, নির্যাতিতা অভিযোগ করেছেন যে মূল অভিযুক্ত তাঁর প্রেমিকের ক্ষতি করার ও বাবা-মাকে মিথ্যে ফৌজদারি মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে তাঁকে কলেজ প্রাঙ্গণে আটকে রেখেছিল। নির্যাতিতার আরও অভিযোগ, মূল অভিযুক্ত (৩১ বছর বয়স) ছাড়াও আরও দুজন যৌন নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত। তারা প্রথম বর্ষের ছাত্র, বয়স যথাক্রমে ১৯ এবং ২০।  

কলেজ ক্যাম্পাসের ভয়াবহতার কথা বর্ণনা করে নির্যাতিতা বলেছেন যে, তাঁকে যৌন সম্পর্কের জন্য জবরদস্তি করা হয়েছিল। তিনি তখন অভিযুক্তকে ধাক্কা দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করছিলেন। তিনি বলেন, "আমি কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলাম আমাকে ছেড়ে দিতে। আমি বলেছিলাম আমার প্রেমিক আছে, আর আমি তাঁকে ভালোবাসি"। কিন্তু তারপরও অভিযুক্তরা তাঁকে ছাড়েনি বলে অভিযোগ নির্যাতিতার। বরং তাঁকে জোর করে গার্ড রুমে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, মূল অভিযুক্ত যখন ধর্ষণ করছিল তখন অন্য দুজন দাঁড়িয়ে দেখছিল। নির্যাতিতা মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্রের পায়ে ধরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন বলেও জানান। নির্যাতিতার অভিযোগ অনুসারে, যখন সে পালানোর চেষ্টা করে মূল অভিযুক্ত তাঁকে হকি স্টিক দিয়ে মারধর করেছিল। 

আরও পড়ুন-ফের ক্যাম্পাসে ধর্ষণ! এবার কসবা! অভিযুক্ত কারা? ঠিক কী ঘটেছিল? 

বীভৎস ঘটনায় নির্যাতিতা বেঁচে গেলেও ঘটনার সময় তাঁর আতঙ্কিত হওয়ার এবং শ্বাসকষ্টের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছিলাম, কিন্ত তারা কোনো সাহায্য করেনি। তারা কলেজের মূল গেট বন্ধ করে রেখেছিল"। নির্যাতিতার আরও অভিযোগ যে, তাঁকে ব্ল্যাকমেইল করার জন্য ঘটনাটি রেকর্ড করা হয়েছিল। ধর্ষনের সময় দুটি ভিডিও রেকর্ড করা হয়। তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল যে, সে যদি সহযোগিতা না করে তাহলে এই ভিডিও সবাইকে দেখানো হবে। শেষমেষ হুমকি ও কিছু শর্ত দিয়ে নির্যাতিতাকে ক্যাম্পাসে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।

নির্যাতিতার দাবি, তাঁকে তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের প্রতি আনুগত্য প্রমাণের জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। তাঁকে ছাড়াও আরও সাতজনকে ইউনিয়ন রুমে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে মূল অভিযুক্ত ছাত্র সংগঠনে তার প্রভাব ও ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে বলছিলেন। পরে, অভিযুক্তদের একজন তাকে একপাশে ডেকে নিয়ে গিয়ে সংগঠন এবং মূল অভিযুক্তের প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে। নির্যাতিতা বলেন, "আমি তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে আমি যখন মেয়েদের সেক্রেটারি নিযুক্ত হয়েছি, তখন তার এবং দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করব। তাকে আমি ইউনিয়নের প্রতি আমার সমর্থনের আস্থা দিয়েছিলাম"। ইউনিয়ন রুমে ফিরে এলে মূল অভিযুক্ত জিজ্ঞাসা করে প্রমিত কি তাকে সব বুঝিয়ে বলেছে। নির্যাতিতা অভিযোগপত্রে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন যে, "হ্যাঁ দাদা চিন্তা কোরো না, আমি সবসময় ইউনিটে থাকবো”।

এফআইআর অনুযায়ী, বুধবার ২৪ বছর বয়সি ওই আইনের ছাত্রী দুপুর ১২টা নাগাদ পরীক্ষা সম্পর্কিত কিছু কাজ সম্পূর্ণ করতে কলেজে গিয়েছিলেন। নির্যাতিতা অভিযোগ পত্রে লিখেছেন, তিনি ইউনিয়ন রুমে অপেক্ষা করছিলেন। এরপর অভিযুক্তরা কলেজের মূল গেটটি বন্ধ করে দেয় এবং তারপর তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। ঘটনাটি বুধবার সন্ধ্যা ৭:৩০ থেকে রাত ১০:৫০-এর মধ্যে ঘটে বলে জানা গেছে। অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ নির্যাতিতার মেডিকেল পরীক্ষা করিয়েছে। অভিযুক্তরা ইতমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছে। শুক্রবার অভিযুক্তদের আলিপুর আদালতে হাজির করা হয়। ১ জুলাই পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে অভিযুক্তদের।

More Articles