ইরান থেকে ট্রাম্প, নেতানিয়াহু আসলে কী চান?

Iran-Israel conflict : ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-সহ অনেকেই গত কয়েকদিন প্রকাশ্যে ইরানের শাসনব্যবস্থা উৎখাতের কথা বলেছেন।

ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলিতে ইজরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হামলা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন রাজনৈতিক জন্ম দিয়েছে। অনেকে এই হামলাকে ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করছেন। সেবার ইরাকের বিরুদ্ধে ওঠা বহু অভিযোগই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছিল, প্রাণ গিয়েছিল বহু নিরাপরাধ ইরাকির। এবারও ইরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরির অভিযোগের কোনো পাথুরে প্রমাণ নেই। তাহলে কেন এই আগ্রাসন? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইজরায়েল আসলে কী চায়?

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগের কথা মুখে বললেও, মার্কিন-ইজরায়েলি প্রশাসনের মূল লক্ষ্য ইরানকে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে দুর্বল করা। ইজরায়েল-মার্কিন অক্ষ চায় ইরান আজ্ঞাবহ একটি দেশে পরিণত হোক। ফিলিস্তিনে ইজরায়েলের বসতি স্থাপন প্রকল্পে কোনো বাধা সৃষ্টি না করুক। গণহত্যার বিরুদ্ধস্বর তৈরি না হোক। সমস্ত মধ্যপ্রাচ্য সমর্পিত উপত্যকা হয়ে উঠুক। ১৯৯৬ সালে আমেরিকার নীতি নির্ধারকরা 'ক্লিন ব্রেক' নামে একটি নথিতে মধ্যপ্রাচ্যে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে আধিপত্য কায়েমের পরিকল্পনা করেছিলেন। ইরানের বিরুদ্ধে বর্তমান হামলা সেই কৌশলেরই অংশ বললে অত্যুক্তি হবে কি?

আরও পড়ুন-কেন কাতারেই হামলা চালাল ইরান? 

ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-সহ অনেকেই গত কয়েকদিন প্রকাশ্যে ইরানের শাসনব্যবস্থা উৎখাতের কথা বলেছেন। তারা ইরানের জনগণকে স্বাধীনতার জন্য বিদ্রোহের আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্ত এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার কি আদৌ তাদের আছে? আদপে তাদের উদ্দেশ্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা নয়। তারা চায় ইরান ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের আগে সময়ে ফিরে যাক। পাহলভি রাজতন্ত্রের মতো একটি আমেরিকা-ইসরায়েলপন্থী শাসনব্যবস্থা ফিরে আসুক।

ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলার পর ট্রাম্প দাবি করেছেন, ফোর্ডো-সহ বেশ কয়েকটি পারমাণবিক কেন্দ্র পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। এই বার্তার মধ্যেই নিজেকে বাহুবলী, একমেবদ্বিতীয়ম প্রমাণের প্রচেষ্টা ছিল। সেই চেষ্টা পুরোপুরি সফল হয়নি। কারণ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ইরানের কর্মকর্তারা বলছেন, ক্ষয়ক্ষতি সীমিত এবং কোনো তেজস্ক্রিয় দূষণ হয়নি। বলাই বাহুল্য, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)ও জানিয়েছে, ইরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরির কোনো প্রমাণ তারা পায়নি। ফলে একটা বড় অংশই মনে করছে এই হামলাগুলো ইরানের পরমাণু কর্মসূচির চেয়ে দেশটির সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি ভাঙার লক্ষ্যে করা হয়েছে। আভ্যন্তরীণ স্থিতাবস্থা নষ্ট করতেই করা হয়েছে।

আরও পড়ুন-ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতিকে বুড়ো আঙুল! ইজরায়েলে কেন হামলা অব্যহত ইরানের?

ইরান এই হামলার জবাবে ইজরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। তবে সরাসরি সংঘাত এড়াতে চাইছে, কারণ এটি আঞ্চলিক যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, ইজরায়েল যদি হামলা বন্ধ করে, তারাও প্রতিশোধ বন্ধ করবে। কিন্তু ট্রাম্পের অবস্থান এখনও অস্পষ্ট। তিনি একদিকে শান্তির কথা বললেও, অন্যদিকে হামলার পক্ষে সমর্থন দিচ্ছেন। হামলা করে শান্তির বাণীপ্রচার, এ কেমন মূল্যবোধ?

এ কথা সত্য সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। ইরানের হরমুজ প্রণালী বন্ধ করার হুমকি সত্য হলে তেলের দাম বাড়বেই। আর তা বলে বিশ্ব অর্থনীতির উপর চাপ পড়বে। তবে ইরান এখুনি সেই পথে যেতে চায় না, কারণ এমনটা হলে তাদের অর্থনীতিরও ক্ষতিই হবে। তবে মধ্যপ্রাচ্য দখলের পুরনো মার্কিন রাজনীতি এই ঘটনায় অনেকটাই বেআব্রু হলো।

More Articles