কাতারের আল উদেইদ ঘাঁটিতে কী রয়েছে?

Iran-Israelconflict : প্ল্যানেট ল্যাবস পিবিসি স্যাটেলাইট চিত্র প্রকাশ করেছিল। সেখানে দেখা গিয়েছে, ৫ জুন ঘাঁটিতে হারকিউলিস সি-১৩০ কার্গো বিমান, গোয়েন্দা বিমান-সহ প্রায় ৪০টি সামরিক বিমান ছিল। তবে ১৯ জুনের ছবিতে দেখা গিয়...

সম্প্রতি ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হামলা করে। ইরানে হামলার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আলোচনার জন্য দু’সপ্তাহ সময় নেওয়ার কথা বলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু দু’দিন যেতে না যেতেই ইরানের উপর হামলা চালায় মার্কিন সামরিক বাহিনী। ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে ট্রাম্পের অপারেশন মিডনাইট হ্যামারের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের হুমকি দেয় ইরান। কাতার, ইরাক-সহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশের আমেরিকান সেনা ঘাঁটিতে ইরান পাল্টা হামলা চালায়। রয়টার্স আগেই জানিয়েছিল, কাতারে মার্কিন-পরিচালিত আল উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে বড় হামলার হুমকি রয়েছে। আল উদেইদ ঘাঁটিতে কী রয়েছে? আল উদেইদ কি হামলার জন্য প্রস্তুত ছিল?

ইরান থেকে পারস্য উপসাগর পেরিয়ে মাত্র ১৯০ কিলোমিটার দূরত্বে প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধ দেশ কাতার। এ দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান আল উদেইদ। এটিকে বলা হয় মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি। ১৯৯৬ সালে কাতারের রাজধানী দোহার-এর কাছে মরু অঞ্চলে এই সামরিক ঘাঁটিটি গড়ে তোলা হয়। প্রায় ২৪ হেক্টর জায়গা জুড়ে এর অবস্থান। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার্স। মিশর থেকে কাজাখস্তান পর্যন্ত মূলত এই সদর দপ্তর থেকেই মার্কিন সামরিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এখান থেকেই গোটা মধ্যপ্রাচ্যের অপারেশন নিয়ন্ত্রিত হয়। সেই ঘাঁটিকেই নিশানা করে ইরান। প্রায় ১০ হাজার সেনা থাকেন আল উদেইদ-তে। সেখানে কাতারের নিজস্ব বিমানবাহিনী ছাড়াও ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র ও আরও কয়েকটি দেশের বাহিনীরা রয়েছে।

চলতি বছরের শুরুতে ওয়াশিংটনের পত্রিকা দ্য হিলের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আল উদেইদ-এর  রক্ষণাবেক্ষণ দিকটি  গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। দীর্ঘ রানওয়ে থাকায় এখানে জরুরি পরিস্থিতিতে খুব তাড়াতাড়ি বাহিনী মোতায়েন করা যায়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আল উদেইদ ঘাঁটিতে কাতারেরও বিনিয়োগ আছে। তাই সামরিক প্রস্তুতির দিক থেকেও সবসময় এগিয়ে থাকে এই সামরিক ঘাঁটিটি। শুধু তাই নয়, আল উদেইদ সামরিক ঘাঁটিটি যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের কয়েক বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করে। এ ঘাঁটির উন্নয়নের জন্য বহু বছর ধরে ৮০০ কোটি ডলারের বেশি খরচ করা হয়েছে। ইরাক ও আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান এবং ২০২১ সালে কাবুল থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া-সহ আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছে আল উদেইদ।

আরও পড়ুন-যুদ্ধবিরতি বুমেরাং! ইজরায়েলের ফের আক্রমণ স্রেফ সময়ের অপেক্ষা?

২৩ জুন রাতেই কাতারের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে আল–জাজিরা জানায়, কাতারের আল উদেইদ ঘাঁটির দিকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে। ইরানের হামলার আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিচ্ছিল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ইরান-ইজরায়েল সংঘাতে সরাসরি যোগ দেওয়ার কথা ভাবছিলেন, তখন স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে এএফপি-র প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, উদেইদ ঘাঁটির রানওয়ে থেকে বেশ কয়েকটি সামরিক বিমান সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

প্ল্যানেট ল্যাবস পিবিসি স্যাটেলাইট চিত্র প্রকাশ করেছিল। সেখানে দেখা গিয়েছে, ৫ জুন ঘাঁটিতে হারকিউলিস সি-১৩০ কার্গো বিমান, গোয়েন্দা বিমান-সহ প্রায় ৪০টি সামরিক বিমান ছিল। তবে ১৯ জুনের ছবিতে দেখা গিয়েছে সেখানে মাত্র তিনটি বিমান। রয়টার্সকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, যেসব বিমান ওই ঘাঁটিতে সুরক্ষিত ছিল না, সেগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, বাহরাইনের একটি বন্দর থেকেও মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজ অন্যত্র রাখা হয়েছে।

আল উদেইদ ঘাঁটিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কাতার। এই হামলাকে নিজেদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে দেশটি।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা আল উদেইদ ঘাঁটিতে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনীর হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। এটা কাতারের সার্বভৌমত্ব, আকাশসীমা ও আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।’ উল্লেখ্য, ইরান ও কাতারের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের হামলারও নিন্দা জানিয়েছে কাতার।

প্রসঙ্গত, ২৪ জুন যুদ্ধ বিরতির ঘোষণা করেছে ট্রাম্প। সম্মতি জানালেও ইজরায়েল হামলা থামায়নি। ইরান জানিয়েছে, শত্রুপক্ষ যদি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে, তবে তারাও পাল্টা হামলা চালাবে। এখন ইজরায়েলের পর ইরানও যুদ্ধবিরতি ভাঙার ঘোষণা করতে পারে বলেই মনে করছে রাজনীতিবিদরা।

More Articles