ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যৎ কী? বাংলা যা ভাবছে...
Bangla Ja Bhabche : জোট আদৌ ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন অবধি টিকবে তো? কী ভাবছে বাংলা?
দেশে বিজেপি তথা গেরুয়াশক্তিকে ঠেকাতে জোট বেঁধেছে বিরোধীরা। তবে সত্যিই কি মিল হয়েছে এই ছোট ছোট আঞ্চলিক দলগুলির? সত্যিই কি 'ইন্ডিয়া' একমত? বিজেপির বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা এই মহাজোটের কাঁটা হতে পারে কোন কোন রাজ্য? সোজা হিসেব বলছে, পশ্চিমবঙ্গ, পঞ্জাব, দিল্লি, কেরল, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, বিহার।
কাঁটা এক
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও রকম সমঝোতা চায় না সিপিএম। এ রাজ্যে বামেদের প্রধান শত্রু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন দল। বঙ্গ সিপিএম তাদের দাবির কথা পলিটব্যুরোতে জানায়। দলের র্শীষ নেতৃত্ব সেই দাবি মেনে নিয়েছে। বাংলাকে সমর্থন করেছে কেরল।
হাই কম্যান্ড চাইলেও পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস এবং জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যে আসন সমঝোতা এখনও বিশ বাঁও জলে। কৌস্তভ বাগচীর মতো রাজ্য কংগ্রেসের নেতারা স্পষ্টতই আসন সমঝোতা নিয়ে আপত্তি করেছেন। শীর্ষ নেতৃত্বকে চিঠি দিয়েছেন। কৌস্তভদের বক্তব্য, পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় তৃণমূলের হাতে এ রাজ্যের আট জন কংগ্রেস কর্মী খুন হয়েছেন। আসন সমঝোতা হলে নীচু তলায় কর্মীদের মনোবলে ধাক্কা লাগবে।
মনে রাখতে হবে এই কৌস্তভই মমতাকে ক্ষমতাচ্যুত না করা পর্যন্ত মাথা মুড়িয়ে রাখার পণ করেছেন।
তৃণমূল কংগ্রেস এবং কংগ্রেসের মধ্যে আসন সমঝোতা যদি হয়ও, তা হলে সর্বোচ্চ ক'টা আসন হাত শিবিরকে ছাড়তে পারে তৃণমূল। খুব বেশি হলে ২ থেকে ৩ আসন। ২০১৯-এর ভোটে কংগ্রেস মাত্র ২টি আসন পেয়েছিল। অধীর চৌধুরীর গড় মুর্শিদাবাদের বহরমপুর আর মালদহ দক্ষিণ। জঙ্গিপুর এবং মালদহ উত্তর- এই আসন কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়। জঙ্গিপুর কেড়ে নেয় তৃণমূল। আর মালদহ উত্তর ভারতীয় জনতা পার্টি।
তৃণমূল কংগ্রেস বহরমপুর, মালদহ দক্ষিণ এই দুই আসন কংগ্রেসকে ছাড়তে পারে। খুব বেশি হলে ছাড়তে পারে জঙ্গিপুর। কংগ্রেস কি এই শর্তে রাজি থাকবে?
১৯৮০ সালে আত্মপ্রকাশের পর, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় প্রথমবার বৃহৎ শক্তি হিসেবে উঠে আসে বিজেপি। ভোটের শতকরা হিসেবে প্রায় ৪০ শতাংশেরও বেশি ভোট বিজেপির ঝুলিতে জমা পড়ে। হিসেব করলে দেখা যায় প্রায় ওই একই অঙ্কের কাছাকাছি ভোট বামেদের থেকে সরে গিয়েছে।
বামেরা শূন্য আসন পায়। রায়গঞ্জ আসন কেড়ে নেয় তৃণমূল কংগ্রেস। আর মুর্শিদাবাদ কেড়ে নেয় বিজেপি।
কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে যদি আসন সমঝোতা না হয়, বাম-কংগ্রেস যদি হাত ধরাধরি করে তবে সেখানেও একের বিরুদ্ধে একের লড়াইয়ের সম্পূর্ণ আসন সমঝোতা হবে কি না তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।
আরও পড়ুন- তৃণমূলের সঙ্গে বাংলায় জোট? সিপিএমের চরম সিদ্ধান্তে বিপাকে ‘ইন্ডিয়া’
কাঁটা দুই
সমন্বয় কমিটিতে সিপিএমের না থাকার সিদ্ধান্ত। বিজেপি বিরোধিতায় ইন্ডিয়া জোটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেও সমন্বয় কমিটিতে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পলিটব্যুরো। শুধু সমন্বয় কমিটিতেই নয় ইন্ডিয়া জোটের কোনও রকম সম্ভাব্য কমিটিতেও থাকবে না বলে সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জোটের পক্ষে সিপিএমের এই পদক্ষেপ ধাক্কার। ১৪ সদস্যের সমন্বয় কমিটিতে সিপিএমের আসন ফাঁকা। সমন্বয় কমিটিতে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে রয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সিপিএমের খবর, বাংলায় যাঁরা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে তাঁদের সঙ্গে কোনও কমিটিতে থাকা দল চায়নি।
কাঁটা তিন
সনাতন ধর্ম নিয়ে ডিএমকে নেতা উদয়নিধি স্ট্যালিনের বক্তব্য। ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে শোরগোল ফেলে দেয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে উদয়নিধির মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন। বিরোধিতা করেছে শিবসেনা। হিন্দিভাষী গোবলয়ে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছে ইন্ডিয়া জোটের অনেকেই। এমনকী হায়দরাবাদে কংগ্রেসের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে এ নিয়ে দলের কর্মীদের সতর্ক করে দেন রাহুল গান্ধী। কর্মীদের হিন্দু-মুসলমান বিতর্ক থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কাঁটা চার
পশ্চিমবঙ্গের মতো পরিস্থিতি কেরল, মধ্যপ্রদেশ, পঞ্জাবের মতো রাজ্যেও। কেরলে সিপিএমের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস। সেখানেও কংগ্রেস এবং বামেদের মধ্যে জোট সম্ভব না। পলিটব্যুরোতে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন কমরেডরা। আবার কংগ্রেসও কেরলে সিপিএমের সঙ্গে কোনও সমঝোতায় যাবে না। কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতায় টক্কর লেগেছে আম আদমি পার্টির। মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়ে যেভাবে আপ এক তরফা প্রার্থী ঘোষণা করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। হায়দরাবাদের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে পঞ্জাব এবং দিল্লিতে আপের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে হাইকম্যান্ডের কাছে আপত্তি জানিয়েছে কংগ্রেস কর্মীরা।
কাঁটা পাঁচ
টিভি সঞ্চালক বয়কট নিয়ে ইন্ডিয়া জোটের একাংশের আপত্তি আছে। নীতীশ কুমারের মতো ফ্রন্ট রানার এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। নীতীশকেই জোট গঠনের একেবারে শুরুতে সক্রিয় ভূমিকা নিতে দেখা যায়। এখন তিনি আর ততটা সক্রিয় নন বলে একটি সূত্রের খবর। বামেদেরও একাংশের বক্তব্য, কোনও রকম আলোচনা না করেই টিভি অ্যাংকর বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইন্ডিয়া জোটের সমন্বয় কমিটি।
আরও পড়ুন- অধীর-সেলিম না ধুপগুড়ি — কে ‘ভেঙে’ দিল ইন্ডিয়া জোট?
কাঁটা ছয়
আসন সমঝোতা নিয়ে টানাপোড়েন এবং দীর্ঘসূত্রিতা। বিভিন্ন রাজ্যে এক এক রকম সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে ইন্ডিয়া জোটের কেউ কেউ এখনই আসন সমঝোতা করে ফেলতে নারাজ। সামনেই ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, তেলেঙ্গনা, অন্ধ্রপ্রদেশে বিধানসভা ভোট। ওই রাজ্যগুলির ভোট ফলাফলের দিকেও তাকিয়ে রয়েছে ইন্ডিয়া জোটের একাংশ। ভোটের ফল বেরনোর পরই আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হোক চাইছেন তাঁরা। একইরকম ভাবে বিহারেও ৪০ আসনের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইছে ইন্ডিয়া জোটের একাধিক দল। এর মধ্যে রয়েছে কংগ্রেস, আরজেডি, সংযুক্ত জনতা দল ও বামদলগুলি।
কাঁটা সাত
মহিলা সংরক্ষণ বিল। মঙ্গলবার নতুন সংসদ ভবনেই পেশ করা হয় মহিলা সংরক্ষণ বিল, যা ২০১০ সালে প্রথম বারের জন্য সংসদে পেশ করে মনমোহন সিংয়ের সরকার। সমাজবাদী পার্টি এবং আরজেডি-র মতো ইন্ডিয়া জোটের শরিক দলগুলি মহিলা সংরক্ষণের ভিতর সংরক্ষণের দাবি করে থাকেন। পিছিয়ে পড়া জনজাতি এবং সংখ্যালঘু মহিলাদের জন্য তারা সংরক্ষণের ভিতর সংরক্ষণ দাবি করে থাকেন। জোট শরিকদের অনেকেই কোনও রকম শর্ত ছাড়াই সংরক্ষণের পক্ষে। বিল পাসের আগে এ নিয়ে বিরোধিতা হতে পারে ইন্ডিয়া শিবিরের অন্দরে।
সব মিলিয়ে তাহলে কোথায় দাঁড়িয়ে ইন্ডিয়া জোট? বিজেপির বিরোধিতায় একজোট হওয়ার প্রারম্ভেই এত বিভেদ যদে জোটে সেই জোট মানুষের আস্থা জিতবে কীভাবে? অন্তর্দ্বন্দ্বেই কি ইতি পড়বে জোটের ভবিষ্যতে? এতকিছুর মাঝে জোট আদৌ ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন অবধি টিকবে তো? কী ভাবছে বাংলা?
'ইন্ডিয়ার ভবিষ্যৎ' নিয়ে বাংলার মতামত শুনুন আজ সন্ধ্যায়। প্রতি সোম, বুধ, শুক্র সন্ধে ৭ টা থেকে - কলকাতা ২৪*৭ এর ইউটিউব চ্যানেল এবং inscript.me এর ফেসবুক পেজে। সঙ্গে থাকুন, দেখতে থাকুন সমাজ-রাজনীতি নিয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিকদের মতামত। আজকের পর্ব- ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যৎ কী? বাংলা কী ভাবছে?

Whatsapp
