আক্কেল দাঁত ভুগিয়েছে আপনাকেও? অবাক করবে এই দাঁতের লক্ষ বছরের ইতিহাস
Wisdom Teeth : এখন প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষেরই অন্তত একটি আক্কেল দাঁত সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত, অর্থাৎ সেটি কখনও তৈরিই হয়নি।
আক্কেল দাঁত! শুনেই চিড়বিড়িয়ে উঠছে ব্যথা! যন্ত্রণার আশঙ্কায় বিকৃত হয়ে যাচ্ছে মুখ! ইংরিজিতে বলে উইশডম টুথ, আক্কেলের একেবারে শিকড় নাড়িয়ে দিতে পারে সামান্য একটি দাঁত। আসলে তো মুখের একেবারে পিছনে অবস্থিত দাঁত, মোলারের তৃতীয় সেট। দেখতে দাঁতের প্রথম এবং দ্বিতীয় স্তরের মতোই, তবে কখনও কখনও একটু ছোটও হতে পারে। তবে সে যে কী বিষম বস্তু, তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। কিন্তু এমন বিচিত্র নাম কেন? আক্কেল দাঁত আসলে কী?
এগুলিকে সাধারণত আক্কেল দাঁত বলা হয় কারণ এগুলি মানুষের ৩২ টি স্থায়ী দাঁতের মধ্যে সর্বশেষ দাঁত যা ১৭ থেকে ২৫ বছর বয়সের মধ্যেই ওঠে। অর্থাৎ মানুষ যখন প্রাপ্তবয়স্ক ও মনস্ক, বড় এবং 'জ্ঞানী' তখনই এই দাঁত একেবারে জ্ঞানের নাড়িও টনটনিয়ে দেয়। তবে প্রত্যেকেরই যে চারটি আক্কেল দাঁত বাড়ে তেমনটা না। অনেকে আক্কেল দাঁত তুলিয়েও নেয়। তাহলে এই দাঁতের গুরুত্বই বা কী, কেনই বা এর এত ঝক্কি? আসলে আক্কেল দাঁতের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মানুষের প্রাচীন ইতিহাস এবং বর্তমানও।
আমাদের আত্মীয়রা, মানে যাদের সঙ্গে আমাদের অনেক বৈশিষ্ট্যের মিল রয়েছে, তারা হচ্ছে বানর, গরিলা এবং শিম্পাঞ্জি। এদের সবারই আক্কেল দাঁত আছে। কয়েক মিলিয়ন বছর আগে, আদিম মানুষের পূর্বপুরুষদের কিন্তু আজকের মানুষের চেয়ে বড় চোয়াল এবং দাঁত ছিল। উদাহরণস্বরূপ, অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস নামের একটি প্রজাতি (ডাকনাম লুসি), প্রায় ৩ মিলিয়ন থেকে ৪ মিলিয়ন বছর আগে বেঁচে ছিল।
অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস মানুষের চোয়াল এবং দাঁতগুলি এখনকার মানুষের থেকে বেশ কিছুটা বড় এবং মোটা ছিল। মোটা এনামেল সহ তিনটি বড় মোলার দাঁত ছিল। এই প্রথম দিককার মানুষের খুলির কিছু জীবাশ্ম পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এদের চিবানোর শক্তিশালী পেশিও ছিল।
আরও পড়ুন- শয়তানের রক্তাক্ত দাঁত! এই বীভৎস সুন্দর ছত্রাকের গা দিয়ে সত্যিই কি বেরোয় রক্ত?
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এত মজবুত চোয়াল এবং দাঁত ছিল কারণ আমাদের আদিম পূর্বপুরুষরা যে খাবারগুলি খেতেন, যেমন কাঁচা মাংস এবং গাছপালা, তা আজকের খাবারের তুলনায় চিবানো অনেক বেশি কঠিন ছিল। বিলুপ্ত পূর্বপুরুষরা কী খেয়ে থাকতেন তা নির্ধারণ করতে গবেষকরা দাঁতের জীবাশ্মের চিহ্ন এবং ক্ষয়ের মতো আণুবীক্ষণিক বিষয়গুলো দেখেন।
কৃষি, রান্না এবং খাদ্য সঞ্চয় সহ অনেক কারণের কারণে আজকের খাবারদাবার আগেকার তুলনায় অনেক নরম। নরম, সহজে চিবানো খাবার মানেই দাঁতের কাজ কম চ্যালেঞ্জিং। ফলস্বরূপ, আধুনিক মানুষের চোয়াল আমাদের বিলুপ্ত পূর্বপুরুষদের চেয়ে ছোট এবং মুখমণ্ডলেরও বিবর্তন হয়েছে কারণ আমাদের খাবার খেতে বড়, তীক্ষ্ণ দাঁতের প্রয়োজন হয় না।
লক্ষ লক্ষ বছর ধরে খুব ধীরে ধীরে ঘটে যাওয়া এই পরিবর্তনগুলির প্রেক্ষিতেই আক্কেল দাঁত আর আগেকার মতো গুরুত্বপূর্ণ নয়। এখন প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষেরই অন্তত একটি আক্কেল দাঁত সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত, অর্থাৎ সেটি কখনও তৈরিই হয়নি। তবে বড় হওয়ার পরে সাধারনত আক্কেল দাঁত ছাড়া অন্য কোনও দাঁতের আর জন্ম হয় না। বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নন কেন এমন ঘটে, তবে বাবা মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া জিনের সঙ্গে এর সম্পর্ক থাকতে পারে। কিছু বিজ্ঞানী বলেন, আধুনিক, ছোট চোয়ালের মানুষের জন্য আক্কেল দাঁত না থাকা মস্ত সুবিধা। ছোট চোয়ালে কম দাঁতই ঠিকঠাক জায়গা নিয়ে থাকতে পারে। অতিরিক্ত অতিথি এলে কী হয়, তা যন্ত্রণাতেই মালুম পড়ে।
আরও পড়ুন- তামা দিয়ে তৈরি ধারালো দাঁত! জানেন, রক্তকৃমির এক কামড়েই কী হতে পারে আপনার?
কখনও কখনও স্থানের অভাবে আক্কেল দাঁতগুলি চোয়ালের হাড়ের ভিতরে আটকে যেতে পারে এবং কখনই পুরোপুরি বেরোয় না বা আংশিকভাবে বের হয়। আক্কেল দাঁত উপরের চোয়ালের চেয়ে নীচের চোয়ালে বেশি বেরোয়। আক্কেল দাঁত অর্কে বেরিয়ে থাকলে ব্যথা, দাঁতের ক্ষয় বা মাড়ির প্রদাহ সহ নানা সমস্যা ঘটে। তবে আক্কেল দাঁত তুলে ফেলতেই হবে এমন কিন্তু না। সাধারণত আক্কেল দাঁত তোলার প্রয়োজনই হয় না যদি দাঁতগুলি সম্পূর্ণরূপে বেরোয়, সঠিকভাবে অবস্থান করে এবং সুস্থ থাকে।
দাঁতের চিকিত্সকরা মুখ পরীক্ষা করে দেখতে পারেন যে আক্কেল দাঁত আছে কিনা বা চোয়ালের এক্স-রে করেও তা দেখা যেতে পারে। যদি সমস্যার কিছু থাকে তবেই চিকিৎসা তা তুলে ফেলার কথা ভাববেন। এছাড়া দিনে অন্তত দু'বার ব্রাশ করা এবং প্রতিদিন নিয়মিত কুলকুচি করলে সমস্ত দাঁতই সুস্থ থাকে।