গবেষকরা চিউইং সিমুলেটর ব্যবহার করেছেন। এটি খানিকটা মানুষের চোয়ালের প্রতিরূপ।
শিম থেকে তৈরি চুইংগাম! যে সব রোগ থেকে সহজে মুক্তির পথ আবিষ্কার গবেষকদের
Antiviral Chewing Gum: গবেষকরা বলেছেন, বেশ কয়েকটি সাধারণ সংক্রমণের ক্ষেত্রে ভাইরাল লোড উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে এই অ্যান্টিভাইরাল চুইংগাম। সাধারণ ওষুধের মতো গিলে নেওয়া নয়, কেবল চুইংগামের মতো চেবালেই উপকার।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে নিরন্তর নতুন ওষুধের সন্ধান চলছে। নানা রোগ, নানা জটিলতা যত দেখা দিচ্ছে ততই নতুনতর ওষুধ তৈরির প্রচেষ্টাও চলছে পাল্লা দিয়ে। নতুন ওষুধের অনুসন্ধানে বিজ্ঞানীরা আবারও শরণাপন্ন হচ্ছেন প্রকৃতির। এমনই এক সন্ধানে বিজ্ঞানীরা তৈরি করে ফেলেছেন এক আশ্চর্য চুইংগাম: অ্যান্টিভাইরাল চুইংগাম। গবেষকরা বলেছেন, বেশ কয়েকটি সাধারণ সংক্রমণের ক্ষেত্রে ভাইরাল লোড উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে এই চুইংগাম। সাধারণ ওষুধের মতো গিলে নেওয়া নয়, কেবল চুইংগামের মতো চেবালেই উপকার।
পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর হেনরি ড্যানিয়েল এক বিবৃতিতে বলেছেন, "ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা এই মুহূর্তে সারা বিশ্বের কাছেই এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।" কয়েক বছর আগের COVID-19 মহামারীর ঘা আমাদের মস্তিষ্কে এখনও দগদগে। সাম্প্রতিককালের অভিজ্ঞতা বলছে H5N1 বার্ড ফ্লু ক্রমেই ঘাতক হয়ে উঠছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হামের প্রাদুর্ভাবও বেশ সঙ্কটজনক।
আরও পড়ুন- চুইংগামে বিপদ! নিজের অজান্তেই দেহে যে বিষ প্রবেশ করাচ্ছেন আপনি
কয়েক বছর আগে, মহামারীর যখন তুঙ্গে ড্যানিয়েল এবং তাঁর গবেষক দল SARS-CoV-2 সংক্রমণ সীমিত করার এক উদ্ভাবনী চেষ্টা করেছিলেন। আমরা জানি, কোভিড ভাইরাস হাঁচি, কাশি এবং কথা বলার সময় থুতুর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং ভাইরাসটি নিজের প্রতিলিপি তৈরি করে অন্যকে সংক্রামিত করে। তাঁরা লালার মধ্যেই ভাইরাসটিকে নিশানা করতে চেয়েছিলেন। সেই লক্ষ্যে, তাঁরা একটি চুইংগাম তৈরি করেছেন, যা এখন ক্লিনিকাল ট্রায়ালের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই চুইংগামে উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত বিশেষ এক প্রোটিন রয়েছে যা দেহের কোশের সঙ্গে ভাইরাসের সংযুক্ত হওয়ার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। নিঃসন্দেহে বিষয়টি ভাইরাস মোকাবিলায় এক উল্লেখযোগ্য বাঁকবদল। আর এই চুইংগামের নেপথ্যে আছে, আমাদের অতিপরিচিত শিম।
ড্যানিয়েল আরও বলছেন, "প্রাকৃতিক এই খাদ্য পণ্যে (শিমের গুঁড়োয়) উপস্থিত একটি ব্রড-স্পেকট্রাম অ্যান্টিভাইরাল প্রোটিন (এফআরআইএল) শুধুমাত্র মানুষের ফ্লু ভাইরাসই নয়, এভিয়ান (বার্ড) ফ্লু সংক্রমণ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে এক সময়োপযোগী আবিষ্কার"।
বিজ্ঞানীরা যে ধরনের শিম নিয়ে গবেষণা করছেন তাদের বলা হয় ল্যাবল্যাব বিন (ল্যাবল্যাব পুরপিউরিয়াস)। হাইসিন্থ বিন নামেও এটি পরিচিত। হাই-প্রোটিন এই শিম সুদানের কিছু অংশে কিছু ঐতিহ্যবাহী রান্নায় ব্যবহৃত হয় ঠিকই তবে আফ্রিকায় এর কদর যথেষ্ট কম। এই শিম বেশ সুস্বাদু হওয়ার পাশাপাশি, আরেকটি কারণে বিশেষ গুরুত্বের। এই শিমে FRIL নামক একটি অ্যান্টিভাইরাল প্রোটিন থাকে।
আরও পড়ুন- অ্যাডিনোভাইরাস কী, কেন এত শিশু আক্রান্ত হচ্ছে বাংলায়
গবেষকরা ইনফ্লুয়েঞ্জা এ (H1N1 এবং H3N2) এবং দু'টি হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাসের (HSV-1 এবং HSV-2) দু'টি স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে এই শিমের অ্যান্টিভাইরাল কার্যকারিতা যাচাই করতে ল্যাবল্যাব বিনস থেকে তৈরি চুইংগাম নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন। HSV সংক্রমণ খুবই সাধারণ, এর কোনও ভ্যাকসিন নেই। বিশেষ করে HSV-1 সাধারণত মুখে মুখেই সংক্রামিত হয়, যে কারণে এই অ্যান্টিভাইরাল চুইংগাম তা প্রতিরোধের এক সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
গবেষকরা এই পরীক্ষায় চিউইং সিমুলেটর ব্যবহার করেছেন। এটি খানিকটা মানুষের চোয়ালের প্রতিরূপ। গবেষকরা দেখিয়েছেন, ৭৯ মিলিগ্রাম ল্যাবল্যাব বিন পাউডার থেকে তৈরি চুইংগাম নির্ভরযোগ্য উপায়ে লালার মধ্যে FRIL নির্গত করে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, একটি ২-গ্রাম গাম ট্যাবলেটের মাত্র ৪০ মিলিগ্রাম ফ্লুর ক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশের বেশি ভাইরাল লোড কমাতে যথেষ্ট কার্যকর। HSV-1 এর জন্য দরকার ১৬০ মিলিগ্রাম এবং HSV-2-এর জন্য মাত্র ৭৪ মিলিগ্রাম প্রয়োজন। নির্দেশিকা অনুসারে উত্পাদিত এই চুইংগাম প্রায় ৮০০ দিন ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয়েছিল এবং সেটি খারাপ হয়নি। আট মাস পরেও দেখা যায় তাতে সক্রিয় FRIL রয়েছে।
এই মুহূর্তে গবেষকদের পরবর্তী লক্ষ্য বার্ড ফ্লু। ল্যাবল্যাব বিন পাউডার H5N1 এবং H7N9 উভয় স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে কার্যকর হতে পারে। আর একবার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে উৎরে গেলে, বিশ্বব্যাপী ভাইরাস সংক্রমণের প্রকোপের উপর অনেকখানি কাবু পাওয়া সক্ষম।