শয়তানের রক্তাক্ত দাঁত! এই বীভৎস সুন্দর ছত্রাকের গা দিয়ে সত্যিই কি বেরোয় রক্ত?

Devil’s Tooth Fungus : এটি একেবারেই বিষাক্ত নয় কিন্তু এর স্বাদটি এতটাই তিক্ত যে এটি কার্যত অখাদ্য।

বর্ষাকাল যখন একেবারে ঝমঝমিয়ে হাজির, অথবা বিদায় নেওয়ার পালা, বাজারে সাদা সাদা ছাতুর ভিড়। কেউ ছাতু বলেন, কেউ ছাতি, ব্যাপারটা ব্যাঙের ছাতার মতো দেখতে তবে বিষাক্ত নয়। সুস্বাদু, জিভে জল আনা। ইংরেজিতে মাশরুম যাকে বলে, আদতে তাইই। তবে এই মাশরুম চাষ করা নয়, স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়াতে, উপযুক্ত তাপে জন্ম নেওয়া ছাতা। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী অয়াহাড়ি এক বিশেষ মাশরুম খান, তার দাম নিয়ে নিন্দুকেরা কম কথা বলে না। মাশরুম বিষয়টি বরাবরই চর্চায় থাকে। হয় এর বিষের জন্য বা এর উপকারিতার জন্য। তবে বিশ্বে একটি এমন মাশরুম মেলে যার নাম শুনলে অবশ্য উপকার সংক্রান্ত কিছুই মনে পড়বে না। মাশরুমটি দেখলে মনে হবে রক্তের বিন্দু ছড়িয়ে রয়েছে। রক্ত নয় এটি আসলে ডেভিল'স টুথ ফাঙ্গাস!

শয়তানের দাঁতের ছত্রাক বা Hydnellum peckii জন্মায় একটি মাশরুমের উপর। এই মাশরুম যত বড় হয় দেখা যায় গায়ে রক্তের বিন্দু! আসলে ছত্রাকটি এক ধরনের রস বের করে। সেই রক্তাক্ত ছত্রাকের কারণে এই মাশরুমটিকেও শয়তানের দাঁত মাশরুমই বলা হয়। দেখতে রক্ত হলেও আসলে কিন্তু এটি রক্ত নয়। ডেভিলস টুথ আসলে কাঠের মাশরুম। একমাত্র স্কটল্যান্ড ছাড়া ব্রিটেনে খুব কমই পাওয়া যায় এটি।এই ছত্রাক উত্তর ইউরোপের মূল ভূখণ্ড এবং উত্তর আমেরিকার কিছু অংশেও দেখা যায়। এই বিশেষ ছত্রাকটি প্রথম ১৯১২ সালে আমেরিকান মাইকোলজিস্ট হাওয়ার্ড জেমস ব্যাঙ্কার আবিষ্কার করেন। তিনিই এই প্রজাতিটির নাম দিয়েছিলেন Hydnellum peckii।

এটি একটি প্রক্রিয়ার ফলাফল। প্রক্রিয়াটি গটেশন নামে পরিচিত। গাছপালা এবং ছত্রাক তাদের দেহের বিভিন্ন ছিদ্র থেকে নানা রসের ফোঁটা নিঃসরণ করে। শয়তানের দাঁতের ছত্রাকের ক্ষেত্রে মাশরুমের মধ্যে জল শোষণের ক্রমবর্ধমান চাপের ফলস্বরূপ লাল রঙের একটি রস বেরোয়। এই ঘন লাল রক্তের মতো ফোঁটা একইসঙ্গে মাশরুমটিকে যেমন দেখতে আকর্ষণীয় করে তেমনই ভুতুড়ে অনুভূতিরও জন্ম দেয়। যখন ছত্রাকের মূল অংশের চারপাশের মাটি খুব ভেজা হয়ে যায়, তখন এটি অভিস্রবণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিকড়ের মধ্যে জল প্রবেশ করাতে পারে। এটি সমগ্র অংশ জুড়ে চাপ সৃষ্টি করে, যা অবশেষে ছত্রাকের পৃষ্ঠ দিয়ে বেরিয়ে আসে। ছত্রাকের মধ্যে পাওয়া একটি রঞ্জকের জন্যই এটি লাল রঙের দেখায়।

আরও পড়ুন- আধখানাতেই মৃত্যু অনিবার্য! জানেন, বিশ্বের সবচেয়ে বিষাক্ত মাশরুম কোনটি?

দেখতে ভালো লাগছে ভেবে যদি মনে করেন খেতেও ভালো লাগবে সে গুড়ে বালি। শয়তানের দাঁতের এই মাশরুম না খাওয়াই সবচেয়ে ভালো। না, এটি একেবারেই বিষাক্ত নয় কিন্তু এর স্বাদটি এতটাই তিক্ত যে এটি কার্যত অখাদ্য।

খাদ্য হিসাবে মানুষের কাছে এর কোনও মূল্য নাও থাকতে পারে, কিন্তু শয়তানের দাঁতের ছত্রাক মানুষের বেশ কিছু কাজে আসে। এই ছত্রাককে শুকিয়ে প্রাকৃতিক রঞ্জক হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ছত্রাকে অ্যাট্রোমেন্টিনও থাকে যা অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট হিসেবে ব্যবহার করাও সম্ভব। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, ব্লিডিং টুথ বা ডেভিলস টুথ ছত্রাক থেকে পাওয়া নির্যাসগুলিতে রাসায়নিক যৌগ অ্যাট্রোমেন্টিন রয়েছে, যা হেপারিনের মতোই রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দিতে পারে। গবেষকরা ব্লিডিং টুথ ছত্রাক থেকে পাওয়া আরেকটি রাসায়নিকের দিকেও নজর দিচ্ছেন যা অ্যালঝাইমার্স রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে।

More Articles