পৃথিবীর সমস্ত মানুষ যদি একই সময়ে একইসঙ্গে লাফ দেন, কী হবে?
Jump on Earth: ওই ৫০ হাজার মানুষ একসঙ্গে লাফিয়ে ০.৬ মাত্রার ভূমিকম্প তৈরি করতে পেরেছিল।
ধরা যাক, X=প্রেম। গান নয়, নিখাদ একটি অঙ্ক। গবেষণা, সমাধান, তত্ত্ব- এসবের একখানা বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে 'ধরা যাক' বিষয়টি। বিজ্ঞানের ভাষায় এই ধরা যাক বিষয়টিকে হাইপোথেটিক্যাল নামে ডাকা হয়। আসলে বহু বহু অমীমাংসিত বিষয়ের দিশা দেখাতে পারে এই 'ধরা যাক'। যা সম্ভব নয়, অথচ হলে ঠিক কী হতো- এর উপর ভিত্তি করে বহু গবেষণা সংঘটিত হয় বিশ্বে। আর সেসব গবেষণা মাঝে মাঝে আম জনতার কাছে 'উদ্ভট' ঠেকলেও, মজার ঠেকলেও তার গভীরে থাকে নানা অজানা দিক! যেমন ধরা যাক, এই গ্রহের সবাই যদি একই সময়ে লাফ দেয় তবে কী হবে? পৃথিবী কি নড়াচড়া করতে করতে থেমে যাবে? আমাদের সাধের পৃথিবীর ঘূর্ণন কি ধীর হয়ে যাবে?
ধরা যাক বললেই তো সব ধরা যায় না। এক পাড়াতেই সবাই একসঙ্গে লাফাতে পারবে না, তো সারা পৃথিবী! নরেন্দ্র মোদি আর কিম জং উন একই সঙ্গে লাফাবেন এমন সম্ভব? পাড়ার হাঁটু খারাপ মেসোমশাই আর আমাজনের বন্য উপজাতির গেছো যুবতী একইসঙ্গে লাফাবেন কীভাবে? সুতরাং ধরা যাক বললেই, বাস্তবে ধরা যায় না। তাই নিশ্চিত করে বলাও যায় না সবাই একই সময়ে একইসঙ্গে লাফ দিলে আসলে কী ঘটবে। তবে একজন পদার্থবিদ এই কঠিন ভাবনাটি গণনা করে ফেলেছেন। সক্কলে একসঙ্গে লাফ দিলে কী হবে? আমাদের এই গ্রহটি সামান্য হলেও সরে যেতে পারে।
সারা পৃথিবীর না হলেও বিপুল সংখ্যক মানুষ লাফিয়ে দেখেছেন বিষয়টি কী দাঁড়ায়। বিবিসির আর্থ ল্যাবের জন্য হওয়া একটি পরীক্ষায়, বিজ্ঞান সাংবাদিক এবং উপস্থাপক গ্রেগ ফুট ৫০,০০০ জন মানুষকে একই সঙ্গে লাফানো করান। তারপর প্রায় ১.৫ কিলোমিটার দূর থেকে মাটিতে হওয়া কম্পনের পরিমাপ করে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেন।
আরও পড়ুন- জনসংখ্যা মাত্র তিন! পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশের কাহিনি অবাক করবে আপনাকেও
অঙ্কের সাহায্যে এই কম্পনকে নির্দিষ্ট স্কেলে ফেলেন তিনি এবং দেখতে পান যে, পৃথিবীর সবাই একই সময়ে একই সঙ্গে লাফ দিলে কী হবে! পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতি পরিবর্তন হবে কিনা, জানতে পারেন তিনি।
যদি ভূমিকম্প যথেষ্ট বেশি মাত্রায় ঘটে, তাহলে তা পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতিকে প্রভাবিত করতে পারে। ২০১১ সালে, জাপানে হওয়া বিশাল ভূমিকম্প পৃথিবীর ঘূর্ণনকে কিছুটা ত্বরান্বিত করেছিল। ওই ভূমিকম্পের ফলে আমাদের দিনগুলি প্রায় ১.৮ মাইক্রোসেকেন্ড ছোট হয়ে যায়। অতএব, গ্রেফ ফুটের বিশ্বাস, যদি সবাই একই সময়ে লাফ দেয়, আমরা পৃথিবীর ঘূর্ণনকে প্রভাবিত করতে পারি।
দেড় কিলোমিটার দূরে থেকে গবেষকদের দলটি রিখটার স্কেলে মেপে দেখে, ওই ৫০ হাজার মানুষ একসঙ্গে লাফিয়ে ০.৬ মাত্রার ভূমিকম্প তৈরি করতে পেরেছিল। মাত্রা শুনেই বোঝা যাচ্ছে, পরিমাপটি মোটেও যথেষ্ট নয়।
আরও পড়ুন- মঙ্গল আর বৃহস্পতির মাঝে রহস্যময় ‘সুপার-আর্থ’! পৃথিবীকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে এই গ্রহই?
ভূমিকম্প এই গ্রহের ঘূর্ণনকে ততক্ষণ প্রভাবিত করতে পারে না যতক্ষণ না পর্যন্ত কম্পনের মাত্রা অন্ততপক্ষে ৮-এর কাছাকাছি হচ্ছে এবং এর জন্য গ্রহে বর্তমানের চেয়ে আরও সাত মিলিয়ন গুণ বেশি মানুষের প্রয়োজন পড়বে, জানিয়েছেন গ্রেফ। সুতরাং সবাই একই সময়ে লাফ দিলে পৃথিবীর গতি মোটেও কমে বা বেড়ে যাবে না।
কিন্তু, আমরা কি আদৌ পৃথিবীকে নড়াতে পারি? পদার্থবিজ্ঞানী রেট অ্যালেন এই বিষয়টি খতিয়ে দেখেছেন। অ্যালেন মানুষ এবং শিশুদের গড় ওজন এবং পৃথিবীর ভর অনুমান করেছিলেন। তিনি ধরে নিয়েছিলেন যে প্রত্যেকে ০.৩ মিটার (১ ফুট, গণনার সুবিধার্থে) লাফ দিয়েছে এবং এও ধরে নেন যে সবাই একই জায়গায় লাফ দিয়েছে। সেই সময়ে জীবিত ৭ বিলিয়ন মানুষের উপর ভিত্তি করে, অ্যালেন গণনা করেছিলেন যে পৃথিবী একটি একক হাইড্রোজেন পরমাণুর ব্যাসার্ধের প্রায় এক শতাংশ স্থানান্তরিত হবে।
যে সকল মানুষ লাফ দেবেন, তারা লাফ দেওয়ার পরে আবার মাটিতেই পড়বেন। মানে পৃথিবীর উপর ফিরে আসবেন। এই সময়ের মধ্যে, পৃথিবী আবার উপরে চলে যাবে। সব কিছু আগের মতোই হবে, জানিয়েছেন তিনি।