মানুষের থেকে জল চাইছে গাছ! গাছের কথা রেকর্ড করে শোনালেন বিজ্ঞানীরা!
Sound of Plants: জল তেষ্টা পেলে, গাছের ব্যথা লাগলে গাছ কাঁদে। অনেক পশুপাখি সেই শব্দ শুনতে পায়।
মানসিক চাপে, অবসাদে মানুষ ক্রমেই গুটিয়ে আসে। গুটিয়ে আনে নিজস্ব সমস্ত বৃত্ত। মানুষের কথা শোনার, মানুষের কথা বলার মতো কেউই থাকে না। মানসিক চাপের মধ্যে থাকা মানুষ বহু কিছুই বলতে চায়, চিৎকার করতে চায়, গলগল করে বের করে দিতে চায় সময় পুঁজময় কথাবার্তা, বোধ, অস্থিরতা। অথচ সেসমস্ত কথা হারিয়েই যায় ধুলোর মতো, দেখা যায় না, শোনাও না। তবে শুধু মানুষের ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটে না। চাপে ভোগে গাছপালাও। আর এই চাপের মধ্যেই চিৎকারও করে তারা। কথা বলে গাছেরা। একটি নতুন গবেষণা সম্প্রতি জানিয়েছে, মানুষ গাছেদের কথা শুনতে পায়না ঠিকই কিন্তু গাছেরা খুব ভালোভাবে কথা বলতে পারে। বিশেষ করে কোনও খারাপ দিনে যখন তারা চাপে থাকে, তখন কথা বলে। দীর্ঘ সময়ের জন্য কথা বলে না। কিন্তু গাছেদের কথাবার্তা অবশেষে শোনা গেছে।
ইজরায়েলের তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই প্রথমবার মতো উদ্ভিদের দ্বারা নির্গত শব্দগুলিকে রেকর্ড এবং বিশ্লেষণ করেছেন। ঢাকা দেওয়া কড়াইতে বা পাত্রে পপকর্ন ফুটলে যেমন আওয়াজ হয়, এই শব্দ ঠিক তেমনই। মানুষ কথা বললে যেমন জোরে শব্দ নির্গত হয় ঠিকই তেমন ভাবেই গাছেরাও কথা বলে। তবে সেই শব্দের কম্পাঙ্ক এতই বেশি যে তা মানুষের শ্রবণ সীমার ঢের বাইরে।
সেল জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, চাপে থাকা উদ্ভিদ বায়ুবাহিত শব্দ নির্গত করে যা দূর থেকে রেকর্ড করা যায় এবং শ্রেণিবদ্ধ করা যায়। গবেষকরা উদ্ভিদের শারীরবৃত্তীয় নানা বিষয় পর্যবেক্ষণ করার সময়, একটি অ্যাকোস্টিক চেম্বারের ভিতরে এবং একটি গ্রিনহাউসে টমেটো এবং তামাক গাছ থেকে নির্গত আল্ট্রাসোনিক শব্দ রেকর্ড করেছেন।
গবেষণায় টমেটো এবং তামাক গাছের পাশাপাশি, গম, ভুট্টা, ক্যাকটাস এবং হেনবিটের শব্দও রেকর্ড করা হয়েছিল। রেকর্ডিং শুরু হওয়ার আগে গাছগুলি বিভিন্ন অবস্থার শিকার হয়েছিল। কিছু গাছপালাকে পাঁচ দিন ধরে জল দেওয়া হয়নি, কিছুর গাছপালার কাণ্ড কেটে গেছে এবং কিছু গাছপালায় হাতই পড়েনি।
আরও পড়ুন- কোটি কোটি বছরের পুরনো গাছ রয়েছে এখানে, তাক লাগাবে রাজ্যের প্রথম ফসিল পার্কের সৌন্দর্য্য
গবেষকরা একটি শান্ত, বিচ্ছিন্ন জায়গাতে একটি অ্যাকোস্টিক বাক্সে গাছপালাগুলিকে রাখেন করেছিল এবং ২০-২৫০ কিলোহার্টজ কম্পাঙ্কে শব্দ রেকর্ড করার আল্ট্রাসোনিক মাইক্রোফোন বসান। উল্লেখ্য, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সর্বাধিক কম্পাঙ্ক প্রায় ১৬ কিলোহার্টজ।
রেকর্ডিংগুলি বিশ্লেষণ করে গবেষকরা বুঝতে পারেন, গাছপালা ৪০-৮০ কিলোহার্টজ কম্পাঙ্কে শব্দ নির্গত করে। চাপহীন গাছপালা গড়ে প্রতি ঘণ্টায় একটি শব্দেরও কম কথা বলে। অন্যদিকে চাপযুক্ত উদ্ভিদ, যে গাছ জল পায়নি এবং যে গাছ আহত, দু'জনেই প্রতি ঘণ্টায় প্রচুর প্রচুর শব্দ নির্গত করে, জানিয়েছেন জর্জ এস ওয়াইজ ফ্যাকাল্টি অব লাইফ সায়েন্সেসের স্কুল অব প্ল্যান্ট সায়েন্সেস অ্যান্ড ফুড সিকিউরিটির অধ্যাপক লিলাচ হ্যাডানি৷
গবেষকদের দলটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে এই রেকর্ডিং বিশ্লেষণ করে। এই বিশ্লেষণে কীভাবে বিভিন্ন গাছপালা এবং বিভিন্ন ধরনের শব্দের মধ্যে পার্থক্য করা যায় এবং শেষ পর্যন্ত কোন গাছটি থেকে কোন শব্দ বেরোচ্ছে তা শনাক্ত করা হয়েছে। রেকর্ডিং থেকে চাপের ধরন ও মাত্রাও নির্ধারণ করা গিয়েছে।
“এই গবেষণায় আমরা একটি খুব পুরনো বৈজ্ঞানিক বিতর্কের সমাধান করেছি: আমরা প্রমাণ করেছি যে গাছপালা শব্দ নির্গত করে! আমাদের গবেষণা বলছে, আমাদের চারপাশের পৃথিবী উদ্ভিদের শব্দে পূর্ণ এবং এই শব্দগুলিতে তথ্য রয়েছে," বলছেন হ্যাডানি। জল তেষ্টা পেলে, গাছের ব্যথা লাগলে গাছ কাঁদে। অনেক পশুপাখি সেই শব্দ শুনতে পায় কিন্তু মানুষের কানে সেই শব্দ ধরা দেয় না।