'মাসের সেই বিশেষ দিন' আর নয়! জানেন, টিভিতে প্রথম কবে ব্যবহৃত হয় 'পিরিয়ড' শব্দটি?
Period Advertisement: ১৯৭২ সাল পর্যন্ত, প্যাড এবং ট্যাম্পুন নিয়ে টিভিতে বিজ্ঞাপন দেওয়া যেত না।
মাসের সেই দিনগুলো, মেয়েদের সেই বিশেষ দিনগুলো- এই বিশেষ বিশেষ দিন আসলে কোনওভাবেই যে ‘বিশেষ’ নয় তা মহিলামাত্রই জানেন। দৌড়ঝাঁপ, অফিস, স্কুল, বাড়ির কাজ, দিনভর বাইরে টহল, মেজাজ খারাপ, ব্যথায় কুঁকড়ে যাওয়া, শরীর তুলতে না পারা, অবিরত রক্তক্ষয় আর যাই হোক কখনই ‘বিশেষ’ হতে পারে না। তবু, ছিঃ ছিঃ ওসব 'নাপাক' কথা মুখেও আনতে নেই। ছোটবেলায় দেখা স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপন দেখে প্রশ্ন জাগলে মায়েরা কী বলবেন, কীভাবে বলবেন ভেবেই সারা! সহজ স্বাভাবিক স্বাস্থ্য বিষয়কে নিয়ে তাই আজও লজ্জা। তবে বিগত বেশ কয়েক বছরে এই 'ট্যাবু' ভেঙেছে। শহরাঞ্চলে বিশেষ করে, সহজে নিজের 'পিরিয়ড' বলতে আটকায় না, মেয়েদেরকেও না, ছেলেদেরকেও না। মাসের বিশেষ দিন বলে ঘুরিয়ে নাক দেখানোর পথে হাঁটেন না সচেতন মানুষরা। যা পিরিয়ডস, তাকে পিরিয়ডস বলাই কাম্য। টেলিভিশন, বিজ্ঞাপনও তাই আদ্যিকালের রাখঢাক থেকে সরে এসেছে। মিডিয়ার ইতিহাসে প্রথম কবে ব্যবহৃত হলো ‘পিরিয়ড শব্দটি? ১৯৮৫ সালে সম্ভবত প্রথম এই শব্দটি সরাসরি ব্যবহৃত হয়।
আমেরিকান এক ট্যাম্পুন তৈরি সংস্থার বিজ্ঞাপনে 'পিরিয়ড' শব্দটি ব্যবহৃত হয়। “পরিচ্ছন্ন বোধ করা আরও আরামদায়ক। এটি পিরিয়ড সম্পর্কে আপনার অনুভূতি সত্যিই বদলে দিতে পারে,” আমেরিকান ট্যাম্পুন নির্মাণকারী সংস্থা ট্যামপ্যাক্স প্রথম তাদের বিজ্ঞাপনে এই শব্দটি নিয়ে আসে। সাল ১৯৮৫। সেই মুহূর্তে প্রথম আমেরিকান টেলিভিশনে এবং সম্ভবত বিশ্বেও 'পিরিয়ড' শব্দটি প্রকাশ্যে গণমাধ্যমে উচ্চারিত হয়। অভিনেত্রী কোর্টনি কক্স ট্যামপ্যাক্স বিজ্ঞাপনে বিশ্বের প্রথম মহিলা হিসেবে টেলিভিশনে 'পিরিয়ড' শব্দটি উচ্চারণ করেন।
আরও পড়ুন- ঋতুমতী কন্যারা ব্রাত্য, কীভাবে নির্বাচন করা হয় কুমারী পুজোর বালিকাদের?
সারা বিশ্বের 'মাসের সেই সময়', 'ক্রিমসন ওয়েভ' মার্কা ট্যাবুর মুখে সপাটে থাপ্পড় ছিল এই বিজ্ঞাপন। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত, প্যাড এবং ট্যাম্পুন নিয়ে টিভিতে বিজ্ঞাপন দেওয়া যেত না। যখন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়, তখন যে বিজ্ঞাপনগুলি তৈরি করা হলো, তাতেও প্রবল রাখঢাক! রক্তের পরিবর্তে, লাল রঙের জায়গায় নীল তরল ব্যবহার করা হলো। প্রকাশ্যে শব্দটির ব্যবহার নিয়ে এখনও এত চুপিসাড়। স্বাভাবিকভাবেই ১৯৮৫ নাগাদও তা মোটেই সহজ ছিল না। ২০২৩-এও কালো প্লাস্টিকে মুড়ে গোপন নিষিদ্ধ স্যানিটারি ন্যাপকিন দোকানদার তুলে দেন ক্রেতার হাতে। বাড়ির বড়দের সামনে, পুরুষদের সামনে একথা বললে, ধরণী এখনও দ্বিধা হয়! আকাশে ঝড় ওঠে, মাটি কাঁপে। সোশ্যাল মিডিয়াতে খাপ বসে। অথচ আশির দশকের মাঝামাঝি সময়কালে, অর্থাৎ বিজ্ঞাপনটি প্রচারিত হওয়ার পর থেকে আমরা অনেকটাই পথ এগিয়ে এসেছি।
তবু পিরিয়ড সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনা এখনও স্কুলে করা যায় না। শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও বাধে! যদিও বেশ কিছু ইউটিউব শো এবং সিনেমায় সহজ কথাটি সহজভাবেই বলা হয়েছে। আরও ব্যাপকভাবে এই বিষয়টিকে সহজ করে তুলতে সিরিয়াল থেকে শুরু করে সিনেমা, বহু জায়গায় মায়েদের বদলে প্রথা ভেঙে বাবাদেরও দেখানো হচ্ছে মেয়ের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করতে।