'৪০০ পার' করতে বিজেপির নিশানা কোন ৬ টি রাজ্য?

Lok Sabha Election 2024: ছয়টি মূল রাজ্যই এখন টার্গেট। এর মধ্যে চারটি — কর্ণাটক, বিহার, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড ২০১৯ সালে মোদির জয়ের নেপথ্যে থাকা ১২ টি রাজ্যের অন্যতম।

মোদি সরকার বলছে, আব কি বার ৪০০ পার! অর্থাৎ ৪০০ টিরও বেশি আসন পেয়ে এবারের লোকসভা ভোটে জিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফের সরকার গড়বে এনডিএ। বিরোধী দলগুলি বলছে, এবারের নির্বাচন ২০০৪ সালের মতো হবে, যেবার বাজপেয়ীর এনডিএ হেরে গিয়েছিল। কার কথা সত্য? ৪০০ পার সত্য নাকি বিজেপির পতন সত্য? প্রথম দফার ভোটগ্রহণ ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে। টেলিভিশনে বিবিধ জনমত সমীক্ষা, বুথফেরত সমীক্ষার ফল দেখানো হচ্ছে। প্রায় সকলেই বলছে ২০১৯ সালের তুলনায় বিজেপির আসন সংখ্যা অনেক বাড়বে৷ বিজেপির বাস্তব চিত্রটা কী? সমস্ত রাজ্যে কতখানি দখল আছে বিজেপির?

বরাবরই নয়টি রাজ্য লোকসভা নির্বাচনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, রাজস্থান, কর্ণাটক এবং কেরল। এই রাজ্যগুলি মিলে মোট ৩৫১টি আসন আছে। এবারের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই রাজ্যগুলিই ৪ জুন বিজেপির ভাগ্যনির্ধারণ করবে।

বেশ কিছু দশক আগেও লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ধারণাটি ছিল না বললেই চলে। ২০১৪ সালে মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি ২৮২টি আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। ২০১৯ সালে পুলওয়ামা-বালাকোটের ঘটনায় জাতীয়তাবাদী উত্থানের ফলে বিজেপি ২০১৪ সালের তুলনায় অনেক বেশি ভোট পেয়েছিল। কিন্তু আসন সংখ্যা ব্যাপক বাড়েনি। ২০ টি আসন বাড়িয়ে ৩০৩ টি লোকসভা আসনে জয়লাভ করে বিজেপি।

আরও পড়ুন- রাজনৈতিক দলগুলির ইস্তেহার কতটা ভরসাযোগ্য, ফাঁকগুলি কী কী?

মোদি ১২টি রাজ্যে প্রায় সব আসন জিতেছেন: বিহার, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, রাজস্থান, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, হরিয়ানা, অসম, উত্তরাখণ্ড এবং হিমাচল প্রদেশ (৩২০টির মধ্যে ২৭৮টি)। বাকি অংশে বেগ পেতে হয়েছে তাঁকে। পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশায় ভালো করেছে বিজেপি কিন্তু ব্যাপক নয় তা। বিজেপি মোট ২২৪টি আসনে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে। ৪১৪ টি আসন নিয়েও রাজীব গান্ধি মাত্র ৪৮.১২ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন।

এই ২২৪টি আসনের বড় অংশই বিজেপির দখলে থাকা ১২টি রাজ্যের মধ্যে পড়ে৷ বিজেপি এই ২২৪টি আসন ছাড়া, দেশের বাকি অংশে অর্থাৎ ৩১৯টি আসনের মধ্যে মাত্র ৭৯টি জিতেছিল৷ হ্যাঁ, সমস্ত সমস্ত আসনে বিজেপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি ঠিকই কিন্তু ৩১৯ এর প্রেক্ষিতে মাত্র ৭৯ টি আসন বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। ২২৪ থেকে তাই কীভাবে ৩৭০-এ পৌঁছবে বিজেপি তা কঠিন অঙ্ক। অর্থাৎ অবশিষ্ট ৩১৯টি আসনের প্রায় অর্ধেক বিজেপিকে জিততে হবে।

এখানেই মূল যুদ্ধ চলছে। ছয়টি মূল রাজ্যই এখন টার্গেট। এতে ১৯৩ টি আসন আছে। এর মধ্যে চারটি — কর্ণাটক, বিহার, মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ড ২০১৯ সালে মোদির জয়ের নেপথ্যে থাকা ১২ টি রাজ্যের অন্যতম। তবে এই রাজ্যগুলিতে এখন নতুন রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ দেখা গিয়েছে। বাকি দু'টি — পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশা। তামিলনাড়ু, অন্ধ্র প্রদেশ, তেলঙ্গানা এবং কেরলে আরও ১০০টি বা তার বেশি আসনেই বিজেপির দম নেই। তাই ৩০৩ এর বেশি আসন পেতে মোদির নিশানা এই ছয়টি রাজ্য থেকে আরও ১০০ বা তার বেশি আসন জেতা।

মহারাষ্ট্র ও বিহারে বিজেপির মিত্রশক্তি অনেকটাই দুর্বল। শিবসেনাও বিভক্ত হয়ে গেছে, এবং জনতা দল (ইউনাইটেড) বড়ই ম্লান। ঝাড়খণ্ড এবং কর্ণাটকে বিজেপির প্রতিদ্বন্দ্বিতা ক্রমেই বেড়েছে। ওড়িশায় আর ২০১৯ সালের বন্ধুত্বপূর্ণ অবস্থাব নেই। পশ্চিমবঙ্গেও শাসক তৃণমূল আসন ধরে রাখতে মরিয়া লড়াই দেবে। ফলে এই ছয় রাজ্য থেকে ঠিক কতখানি ফায়দা হবে বিজেপির, তা আদৌ ৪০০ পার করাবে কিনা যথেষ্ট আশঙ্কার।

More Articles