যৌন সংসর্গ থেকে সংক্রমণ? মাঙ্কি পক্স নিয়ে নতুন যে তথ্যে তোলপাড় বিশ্ব

পুরুষ ছাড়া মহিলারাও কিন্তু এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন।

মাঙ্কি পক্সের সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে গোটা বিশ্বে। দ্রুত বেড়ে চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র দেওয়া শেষ আপডেট অনুযায়ী, বিশ্বে ১০০টিরও বেশি নিশ্চিত কেস ধরা পড়েছে মাঙ্কি পক্সের। অনেকের শরীরে এই রোগের বেশ কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে, তাই সন্দেহ করা হচ্ছে, আরও বাড়বে আক্রান্তের সংখ্যা। ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের কারণে চিন্তা বেড়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-রও। গত সপ্তাহে শুক্রবার জরুরি বৈঠক ডেকে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন হু-র কর্মকর্তারা।

 

জল ফোসকা, জ্বর, গা-হাত-পায়ে ব্যথার মতো উপসর্গগুলো প্রধানত এই রোগ চিহ্নিত করার উপায়। ভারতে এখনও পর্যন্ত কেউ মাঙ্কি পক্সে আক্রান্ত না হলেও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে অ্যাডভাইসারি জারি করা হয়েছে। এতে কী বলা হয়েছে, দেখে নেওয়া যাক এক নজরে।

 

১) ইউরোপ থেকে যারা দেশে আসছেন তাঁদের শরীরে র‍্যাশজাতীয় কোনও কিছু নজরে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

 

আরও পড়ুন: কোভিডের পর আবার বিশ্বজুড়ে হু হু করে ছড়াচ্ছে বিরল ভাইরাস! কতটা ভয়ংকর এই অসুখ?

 

২) সংক্রামক ব্যাধির মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

 

৩) কোনও ব্যক্তির দেহে উপসর্গ প্রকাশ পেলে দেহের নমুনা সংগ্রহ করে চিহ্নিতকরণের জন্য তা পাঠাতে হবে পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজিতে।

 

৪) মাঙ্কি পক্স শনাক্ত হলে ওই ব্যক্তি ২১ দিন ধরে যাঁদের সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁদের ওপর নজরদারি চালাতে হবে।

 

রোগ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য ইতিমধ্যেই আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু করেছে তামিলনাড়ু সরকার। পশ্চিমবঙ্গেও জেলাশাসকদের বাড়তি নজরদারির কথা জানিয়েছে প্রশাসন।

 

মাঙ্কি পক্স কতখানি ভয়ের আমাদের দেশের জন্য?
এই প্রসঙ্গে চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী জানিয়েছেন, "এই মুহূর্তে আমাদের দেশের মানুষদের বিরাট কিছু আতঙ্কের কারণ আছে তেমন নয়। এই রোগ মূলত আফ্রিকার ক্যামেরুন, কঙ্গো ইত্যাদি দেশে প্রায় ৭০ বছর ধরেই রয়েছে এই রোগটি। ১৯৭০ সালে কঙ্গোতে প্রথম মানবদেহে এই রোগ ধরা পড়ার পর থেকে প্রভূত সংখ্যায় আফ্রিকার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এই রোগে। কিন্তু আফ্রিকার বাইরে এর আগে খুব বেশি মানুষ মাঙ্কি পক্সে আক্রান্ত হননি। তবে এই মুহূর্তে চিন্তার কারণ হলো, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া,আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় যাঁরা এখনও পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের কারও আফ্রিকা ভ্রমণের ইতিহাস নেই।এটিই চিন্তা বাড়িয়েছে।" উল্লেখ্য, ইউরোপে প্রথম মাঙ্কি পক্সের সংক্রমণ ধরা পড়ে ৭ মে তারিখে। আক্রান্ত ব্যক্তি নাইজেরিয়া থেকে ফিরেছিলেন। কিন্তু আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেরই কোনও ভ্রমণ-ইতিহাস নেই। তাই ঠিক কী কারণে ছড়িয়ে পড়েছে এই রোগ, তা নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন।

 

তবে তিনি আরও বলেছেন, "যৌন সম্পর্কের সময়, কিংবা আক্রান্ত ব্যক্তির বিছানা ব্যবহার করলেও সুস্থ মানুষের শরীরে এই ভাইরাস প্রবেশ করে। আবার মুখোমুখি কথা বলার সময় হাঁচি-কাশির মাধ্যমেও ছড়াতে পারে এই রোগ। শরীরে জল ফোসকা, জ্বরের এবং লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়ার পাশাপাশি পিঠে মারাত্মক ব্যথা হয় এই রোগের কারণে।" কিন্তু মাঙ্কি পক্স স্মল পক্সের তুলনায় কম মারাত্মক, একথা চিকিৎসকদের সকলেই স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে সতর্ক থাকা প্রয়োজন বলেই মত চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর। এক্ষেত্রে তিনি জানিয়েছেন, কোভিডের বিধিনিষেধগুলো পালন করলেই এই রোগের সংক্রমণ থেকেও বাঁচা সম্ভব।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র সতর্কবার্তা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র তরফে জানানো হয়েছে যে, আগামী দিনে সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে পারে। তাই এখন থেকেই সচেতনভাবে নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে। যে সমস্ত দেশে সংক্রমণ ধরা পড়েনি, সেই দেশগুলোতেও সচেতন থাকা প্রয়োজন। হু-র স্বাস্থ্যকর্তাদের মতে, এখনও পর্যন্ত যে ব্যক্তিদের শরীরে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে, তাঁরা সকলেই যৌন সংসর্গে রয়েছেন। এঁদের মধ্যে বেশিরভাগই পুরুষ এবং সমকামী ও উভকামী সম্পর্কে লিপ্ত তাঁরা। তাই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন হু। আগামী সপ্তাহেও এই নিয়ে ফের বৈঠক রয়েছে এই সংস্থার। আন্তর্জাতিক এই সংস্থার আধিকারিক এবং আক্রান্ত দেশের বহু স্বাস্থ্যকর্মী সমকামী সম্পর্কে থাকা পুরুষদের সচেতন থাকতে বলেছেন। তবে পুরুষ ছাড়া মহিলারাও কিন্তু এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। যেহেতু এটি একটি সংক্রামক ব্যাধি, তাই আক্রান্ত ব্যক্তির বা অন্যদের থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে।

 

এই প্রসঙ্গে চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী জানিয়েছেন, এই রোগের জন্য আফ্রিকা দেশে ভ্যাকসিন এবং অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ ব্যবহার করা হয়। কোভিডের ক্ষেত্রে তা ছিল না, তাই চিকিৎসকদের খানিক বেগ পেতে হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, মাঙ্কি পক্সের কিন্তু নির্দিষ্ট কোনও ভ্যাকসিন নেই। এক্ষেত্রে স্মল পক্সের ভ্যাকসিন ব্যবহার করে ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে সাফল্য এসেছে। ব্রিটেনের সরকারের তরফে স্বাস্থ্যকর্মীদের ইতিমধ্যেই এই ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। তবে এখনই যে ভারতে চিন্তাজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়নি, তা জানিয়েছেন চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী। এছাড়া পক্সের মতোই এক-দেড় মাসের মধ্যে মানুষ সুস্থ হয়ে ওঠে এই রোগ থেকে। তাই এখনই চিন্তার প্রয়োজন নেই।

More Articles