নির্ভয়ার মাকে বলেন, 'ধর্ষকদের ক্ষমা করে দিন'! জুনিয়র ডাক্তারদের হয়ে লড়া ইন্দিরা জয়সিং কে?

Indira Jaising: ইন্দিরা কিন্তু দোষীদের মৃত্যু চান না। নির্ভয়া কাণ্ডেও ফাঁসির সাজাপ্রাপ্তদের ক্ষমা করে দিতে বলেছিলেন নির্ভয়ার মাকে।

"দোষীদের ক্ষমা করুন, ওদের ফাঁসি রদ করুন", নির্ভয়ার মাকে এই পরামর্শই দিয়েছিলেন বর্ষীয়ান আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং। আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার বিচার চেয়ে, এই সামগ্রিক দুর্নীতিতে যুক্ত থাকা প্রশাসনিক পদ আলো করে থাকা ব্যক্তিদের অপসারণ চেয়ে জুনিয়র ডাক্তাররা পথে নেমেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এই দাবিগুলি মেনেও নেওয়া হয়েছে। আদালতের বিচারাধীন মামলায় এবার জুনিয়র ডাক্তারদের হয়ে সওয়াল করবেন ইন্দিরা জয়সিং। সম্প্রতি, এই ইন্দিরা জয়সিংই প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নিরপেক্ষতা নিয়ে সওয়াল করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি চন্দ্রচূড়ের বাড়িতে গণেশ পুজোয় অংশ নেওয়াতে তিনি সন্দেহ করেছিলেন ভারতের বিচারব্যবস্থাও আপস করে নিয়েছে কেন্দ্রের কাছে। কে এই ইন্দিরা জয়সিং? রাজনৈতিক মহল বলে, তিনি তৃণমূল ঘনিষ্ঠ। সত্যিই কি তাই?

প্রবীণ আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফোরামের (ডব্লিউবিজেডিএফ) প্রতিনিধিত্ব করতে চলেছেন৷ আরেক প্রবীণ আইনজীবী গীতা লুথরা এতদিন এই মামলায় জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। ১৯৪০ সালে মুম্বইতে জন্ম ইন্দিরা জয়সিংয়ের। ইন্দিরা জয়সিং এবং তাঁর স্বামী বিশিষ্ট নাগরিক অধিকার আইনজীবী আনন্দ গ্রোভার লিঙ্গ ন্যায়বিচার, সমকামী অধিকার, শ্রম এবং স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত বহু বিখ্যাত মামলায় জড়িত।

আরও পড়ুন-বিনীত গোয়েল, স্বাস্থ্য অধিকর্তা অপসারিত! জুনিয়র ডাক্তারদের জয় না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের?

ইন্দিরা জয়সিং ঘোরতরভাবেই মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী। আরজি করের চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার পরে সমাজের বড় অংশে 'সর্বোচ্চ শাস্তি', ‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি'-র দাবি উঠেছে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে দোষীদের মৃত্যুই চাওয়া হচ্ছে। ইন্দিরা কিন্তু দোষীদের মৃত্যু চান না। নির্ভয়া কাণ্ডেও ফাঁসির সাজাপ্রাপ্তদের ক্ষমা করে দিতে বলেছিলেন নির্ভয়ার মাকে। নির্ভয়ার মা ক্ষুব্ধ হয়ে সেই সময় বলেছিলেন, "এ জাতীয় মানুষরা ধর্ষকদের সমর্থন করে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করে। আর এই জন্যেই দেশে ধর্ষণের ঘটনা কমছে না।"

নির্ভয়া মামলায় ৪ অভিযুক্তের ফাঁসির সাজার বিরোধিতা করে আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং সেই সময় টুইট করেছিলেন, "আমি আশা দেবীর (নির্ভয়ার মা) কষ্টের প্রতি পুরোপুরি সহানুভূতিশীল। কিন্তু তারপরেও তাঁকে আমি অনুরোধ করবো যেভাবে সনিয়া গান্ধি রাজীব গান্ধির অন্যতম হত্যাকারী নলিনী মুরুগানকে ক্ষমা করে তাঁর মৃত্যুদণ্ড রদ করে দেন সেভাবেই যেন এগিয়ে আসেন নির্ভয়ার মা। তিনিই পারেন এই ফাঁসি আটকাতে। আমরা সবাই আপনার সঙ্গে রয়েছি তবে মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী আমরা"।

এই ইন্দিরা জয়সিংকেই নিজেদের আইনজীবী হিসাবে নিয়োগ করেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। ইন্দিরা জয়সিং সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবীদের মধ্যে অন্যতম। ২০০৯ সালে ইউপিএ সরকারের আমলে কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল নিযুক্ত হন তিনি। দেশের প্রথম মহিলা হিসাবে সেই প্রথম কেউ ওই পদে বসেছিলেন। আদালতে বরাবরই মহিলাদের হয়ে সওয়াল করেছেন ইন্দিরা। যখন সুপ্রিম কোর্ট কোনও শিশুর স্বাভাবিক অভিভাবক হিসাবে বাবার পাশাপাশি মায়ের ভূমিকাকেও স্বীকৃতি দিয়েছিল, তাতেও সওয়াল করেছিলেন ইন্দিরা। সমাজকর্মী তিস্তা শীতলবাদের বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের অভিযোগ ওঠার সময়ও তাঁর হয়ে আদালতে সওয়াল করেছিলেন ইন্দিরা। ভোপালে গ্যাস দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতে সওয়াল করেছিলেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের শুনানি যাতে ‘লাইভ স্ট্রিমিং হয়, যাতে সাধারণ মানুষও কীভাবে রায়দান হচ্ছে তা দেখতে পারেন সেই বিষয়টির নেপথ্যেও রয়েছেন ইন্দিরা জয়সিং। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি পিএস নরসিংহ এবং বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালার বেঞ্চ ইন্দিরা জয়সিংয়ের সেই আর্জিকে মান্যতা দেওয়াতেই এখন ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ হয় সুপ্রিম কোর্টের বেশ কিছু মামলার শুনানির।

আরও পড়ুন-বিচার করবে কে? পশ্চিমবঙ্গের ২৫জন বিধায়কই যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত: রিপোর্ট

প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের একজন কট্টর সমালোচক ইন্দিরা জয়সিং। গণেশপুজোয় চন্দ্রচূড়ের বাড়িতে মোদির আরতি নিয়ে ইন্দিরা লেখেন, “প্রশাসন এবং বিচার বিভাগের মধ্যে যে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি, ভারতের প্রধান বিচারপতি তার সঙ্গে আপস করেছেন। প্রধান বিচারপতির প্রতি আস্থা নষ্ট হয়েছে।”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিজের 'হিরো' বলেও দাবি করেছিলেন ইন্দিরা জয়সিং। ২০১৯ সালে দিল্লিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যের ইংরাজিতে লেখা একটি বইয়ের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন ইন্দিরা জয়সিং। সেখানেই এই কথা বলেছিলেন ইন্দিরা। তাই সেই ইন্দিরা জয়সিংকে ছাত্রদের হয়ে সওয়াল করতে বলা কি জুনিয়র ডাক্তারদের আত্মঘাতী গোল? নাকি ইন্দিরার মতামত এই প্রেক্ষিতে বদলে গেছে! প্রশ্ন থেকেই যায়।

উল্লেখ্য, রাজ্যের হয়ে আদালতে সওয়াল করছেন আরেক বর্ষীয়ান আইনজীবী কপি সিব্বল। মঙ্গলবার জুনিয়র ডাক্তারদের হয়ে প্রধান বিচারপতির এজলাসে কপিল সিব্বাল ও ইন্দিরা জয়সিংয়ের মতো দুই প্রবীণ এবং দুঁদে আইনজীবীর আইনি লড়াই দেখবে ভারতবর্ষ।

More Articles