বিজেপির সর্বোচ্চ পদে এরপর কে? মোদির উত্তরসূরী হওয়ার দৌড়ে উঠে আসছে যে যে নাম

BJP: লালকৃষ্ণ আডবাণী ৭৫ বছর বয়সে অবসর নিয়েছিলেন, তাহলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কেন নেবেন না? মোদির অবসর নিয়ে যে চাপ সৃষ্টি করতে চাইলেন কেজরিওয়াল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

সম্প্রতি দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের কাছে ৫টি প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন। তার মধ্যে একটি প্রশ্ন নিয়ে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই জল্পনা শুরু হয়েছিল। প্রশ্নটি কী? লালকৃষ্ণ আডবাণী ৭৫ বছর বয়সে অবসর নিয়েছিলেন, তাহলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কেন নেবেন না? মোদির অবসর নিয়ে যে আবার চাপ সৃষ্টি করতে চাইলেন কেজরিওয়াল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এর আগে লোকসভা নির্বাচনের আবহেও তিনি এই প্রশ্ন তুলে মোদির উত্তরাধিকারী বিতর্ককে উস্কে দিয়েছিলেন। সেই উদ্দেশ্যে যে সফলতাও পেয়েছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী, তা বোঝা গিয়েছিল যখন অমিত শাহ এবং রাজনাথ সিং-এর মতো দলের মাথারা এর উত্তর দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাঁদের জবাব ছিল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিশ্চয়ই তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদ পূরণ করবেন, তার আগে অবসরে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। শীর্ষস্থানীয় নেতারা যতই এই বিষয় ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করুক, বিজেপির ভিতরে এবং বাইরে এই নিয়ে চর্চা চলছিলই। আবারও কেজরিওয়ালের চিঠির পর এই আলোচনা তুঙ্গে। দলের প্রধানদের জবাবের পর নতুন করে প্রশ্ন উঠে আসছিল, কবে বানপ্রস্থে যাবেন মোদি? নরেন্দ্র মোদির পর কে বিজেপির সর্বোচ্চ নেতৃত্বের স্থান পূরণ করবেন?

৭৫-এ মোদি অবসর নিন বা না নিন, এই নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক চর্চা শুরু হয়েছে। বিজেপি কীভাবে দলের নেতৃত্ব বাছাই করে, তা জানা দরকার। কেজরিওয়াল মনে করিয়ে দিয়েছেন, আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর মোদির ৭৫ বছর হবে, তাহলে তার পর কে? 'বিবিসি'র একটি প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, উত্তরপ্রদেশের প্রবীণ বিশ্লেষক ও 'নিউজট্র্যাকে'র মুখ্য সম্পাদক যোগেশ মিশ্র (বিজেপি দলটাকে ৪০ বছর পর্যবেক্ষণ করেছেন) বলেছেন, ৭৫ বছর বয়সে অবসরের বিষয়টি এনেছিলেন, আরএসএস নেতা রামলাল। মোদি যখন ক্ষমতায় আসেন আরএসএস-এর এই নেতা তখন বিজেপির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। বিজেপির দুই প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী এবং মুরলীমনোহর জোশীকে সম্মানের সঙ্গে সরাতে তিনি এই পথ বেছে নেওয়ার বুদ্ধি দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, 'ক্যাবিনেটে যদি আডবাণী বা জোশীর মতো দিকপালরা থাকেন, তাহলে প্রধানমন্ত্রীকে ছাড়াও ক্ষমতার ছোট বৃত্ত বা পাওয়ার সেন্টার তৈরি হওয়ার ঝুঁকি থাকবে, যা নরেন্দ্র মোদির শিবির মোটেই চায়নি'।

রাম জন্মভুমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের প্রধান চম্পত রাই সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন, অযোধ্যার রামমন্দির উদ্বোধনে লালকৃষ্ণ আডবাণী ও মুরলী মনোহর জোশীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, কিন্তু তাঁদের না আসার অনুরোধও করেছেন চম্পত রাই নিজেই। আডবাণী নাকি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসতে ভীষণ আগ্রহী ছিলেন, কিন্তু চম্পত রাই তাঁকে বোঝান একেই ঠাণ্ডার সময়, তার উপর আডবাণীর হাঁটুর অপারেশনও হয়েছে, তাই তাঁদের স্বাস্থ্যের খেয়াল রেখেই এই অনুরোধ করা হচ্ছে। এখানে বলে রাখা দরকার, এঁরা দুজন এবং আরও কয়েক জনই কিন্তু রামমন্দির আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আডবাণী রাম মন্দিরের পক্ষে জনসমর্থন পেতে গুজরাতের সোমনাথ মন্দির থেকে সারা ভারত জুড়ে রথযাত্রাও করেছিলেন।

আরও পড়ুন: এক দেশ এক ভোট: কৌশলে যে উদ্দেশ্য সফল করতে চাইছে গেরুয়া শিবির

২০১৪ সালের পর আডবাণী, মুরলিমনোহর জোশীদের জায়গা হয় 'মার্গদর্শক মন্ডল' নামে একটি কমিটিতে। গত ১০ বছর দল তাঁদের কাছে কোনও পরামর্শই নিতে যায়নি। এমনকী রামমন্দির নির্মাণ থেকে উদ্বোধন, কোনও ক্ষেত্রেই নয়। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আডবাণী ও জোশীকে 'মার্গদশক মন্ডলে'র সদস্য করে, একরকম যেন বৃদ্ধাশ্রমেই পাঠিয়ে দিয়েছেন। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে আডবাণী ও জোশী দু'জনেই ভোটে জিতে এমপি হয়ে ছিলেন, কিন্তু মোদি ক্যাবিনেটে ঠাঁই পাননি। তখন দু'জনেই ৮০ পেরিয়ে গিয়েছিলেন।

বিজেপি তাদের নিজস্ব বিধিনিষেধ পালন করা একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ দল হিসেবে পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির সভাপতি তথাগত রায় 'বিবিসি'-কে বলেছিলেন, বিজেপিতে ঐক্যমতের ভিত্তিতে নেতা নির্বাচন করা হয়। তবে বিজেপির অভিভাবক (সঙ্ঘ)-এর মতামত অনেকটাই গুরুত্ব পায়। তাঁর বক্তব্য, দলের সভাপতি বা প্রেসিডেন্টকেই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হয় না। যেমন বিজেপির নেতা অটলবিহারী বাজপেয়ী যখন প্রধানমন্ত্রী হন, তার প্রায় এক যুগ আগেই তিনি দলের সভাপতির পদ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। আবার ২০১৩ সালে দলের তৎকালীন সভাপতি রাজনাথ সিং মোদির নাম প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থীর জন্য প্রস্তাব করেছিলেন। তথাগত রায় বলেন, 'আমাদের দলের পার্লামেন্টারি বোর্ড হল সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী সংস্থা। তারাই কোনও নামে প্রথমে সম্মতি দেয়, এবং সঙ্ঘের নেতৃত্ব প্রকাশ্যে না-এলেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় খুব ঘনিষ্ঠভাবেই যুক্ত থাকেন।' এরপর পার্লামেন্টারি বোর্ড সবুজ সংকেত দিলে, ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ বা জাতীয় কর্মসমিতি সিদ্ধান্ত নেয়। তবে অনেক বিশেষজ্ঞের দাবি, নরেন্দ্র মোদি দলের ও দেশের কাছে যে পরিমাণ প্রাধান্য পেয়েছেন, সেই জায়গা ধরে রাখতে হয়তো তিনি নিজেই দলের উত্তরসূরীর নাম প্রস্তাব করবেন। এবং দলও হয়তো তাঁর ইচ্ছা-অনিচ্ছার গুরুত্ব দেবে।


যোগী আদিত্যনাথ

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সমর্থকেরা বলে থাকেন, মোদির পর দলের নেতৃত্বের লড়াইয়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন যোগী, তিনি দলের পরবর্তী প্রধান হওয়ার যোগ্য ব্যক্তি। মনে রাখা দরকার, তাঁর উগ্র হিন্দুত্ববাদী ও তীব্র মুসলমান-বিরোধী পদক্ষেপ যেমন সফলতা পেয়েছিল, তা এই নির্বাচনে বিফলেও গেল। নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের বাড়ি-ঘর, দোকান ভেঙেছে যোগীর বুলডোজার, রাজ্যের প্রায় সব কসাইখানা বন্ধ করেছেন, তাঁর শাসনেই আতিক আহমেদ, মুখতার আনসারির মতো মাফিয়া ডনদের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপই ছিল মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে। এভাবেই তিনি প্রধান হওয়ার ঘুঁটি সাজিয়েছেন।

তাঁর প্রধান হওয়ার বিপক্ষে বিশেষজ্ঞরা কিছু যুক্তি দিয়ে থাকেন। প্রথমত, যোগী কখনই আরএসএস-এর কোনও শাখায় যাননি। সঙ্ঘের ইউনিফর্ম খাকি হাফপ্যান্টও পরেননি। দ্বিতীয়ত, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে 'হিন্দু যুবা সেনা' নামে নিজস্ব সংগঠন চালাতেন। যার সাথে ভিএইচপি বা বজরং দলের যেমন কোনও যোগাযোগ নেই, তেমনই তিনি নিজেও কখনও বিজেপির লোক ছিলেন না। এই একই ধরনের সংগঠন পরিচালনার ইতিহাস তাঁর সর্বোচ্চ পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে আরেকটি বিষয় মনে রাখা দরকার যে, ২০১৭ সালে বিজেপি যে যোগীকে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য বেছে নেবে তা অনেকেই ধারণা করতে পারেননি। যেখানে যোগী সেই নির্বাচনও লড়েওনি।


অমিত শাহ

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরই দলের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন অমিত শাহ। ২০১৯ সালে যখন মোদি পুনরায় দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা পান, অমিত শাহকে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করে নিয়ে আসেন। এ বছর ১৬ই মে 'দ্য গার্ডিয়ান'-এর একটি প্রতিবেদনে লেখা হয়েছিল, দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে অমিত শাহ নরেন্দ্র মোদির সবচেয়ে বিশ্বস্ত অনুচর এবং উপদেষ্টা। এক কথায় যাঁকে বলা যায় সব কাজের সঙ্গী। আর বর্তমান সময়ে দেশের দ্বিতীয় ক্ষমতাশালী ব্যক্তিও। ফলত, প্রধান বাছাইয়ের প্রশ্নে যদি মোদির মতামত গুরুত্ব পায়, তাহলে যে তিনি অমিত শাহের নাম নেবেন না, এমনটা হতে পারে না বলেই বিশেষজ্ঞদের মত। তাছাড়া অমিত শাহ সঙ্ঘের ঘনিষ্ঠ, ছোটবেলা থেকে আরএসএস-এর শাখায় যান, সেখানের প্রচারক হয়েও কাজ করেছেন। তাই হয়তো সঙ্ঘেরও তাঁর নাম মেনে নিতে আপত্তি থাকবে না। তবে প্রতিবন্ধকতা হতে পারে, তাঁর কাজের ধরন।

যোগেশ মিশ্র 'বিবিসি'-কে বলেছিলেন, 'স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা ক্যাবিনেটে দু'নম্বর, সে সব ঠিক আছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হতে গেলে সেই নেতার কিন্তু বিরোধী দলগুলোর সাথেও ভালো সম্পর্ক থাকা দরকার, যেটা অমিত শাহের একেবারেই নেই।' তাঁর বক্তব্য, সোহারউদ্দিন শেখ এনকাউন্টার মামলায় একদা জেল খাটা ব্যক্তি (অমিত শাহ) এখন বিরোধী দলের নেতাদের সমস্যায় ফেলতে বার বার সিবিআই বা ইডি পাঠায়, এই ধারণা বিরোধীদের মধ্যে রয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বিরোধী শিবির কী ভাবছে মোদি কখনই তার গুরুত্ব দেয়নি। সে ক্ষেত্রে উত্তরসূরী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও তিনি এই সকল কিছুর তোয়াক্কা করবেন না বলেই ওয়াকিবহাল মহলের মত। ২০১৪ সালে বিজেপি যখন বিপুল ভোটে জয়ী হল, তখন মোদি প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, 'আমি ক্যাপ্টেন হতে পারি, কিন্তু নির্বাচনের ম্যান অফ দ্য ম্যাচ অবশ্যই অমিত-ভাই!'

বহু দিন ধরেই অমিত শাহ উত্তরপ্রদেশে নিজের টিম তৈরি করছেন। কারণ, সবচেয়ে জনবহুল রাজ্যের সমর্থন না পেলে ক্ষমতায় বসা সহজ নয়। ২০২৪ লোকসভা ভোটের প্রচারে বিহার, পাঞ্জাব, লুধিয়ানা, ছত্তীসগঢ় সহ একাধিক রাজ্যে বক্তৃতার মধ্যে দিয়ে যেভাবে গ্যারান্টির কথা বলেছেন অমিত শাহ, তাতে নিজেই নিজের গুরুত্ব বৃদ্ধির আভাস দিতে শুরু করেছেন বলে অনেকের মত।

রাজনাথ সিং

মোদির সম্ভাব্য উত্তরসূরী হিসেবে তৃতীয় নাম উঠে আসে রাজনাথ সিংয়ের। ২০১৪ সালে মোদি যখন প্রথমবার ক্ষমতায় আসেন তখন রাজনাথ সিং ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এখন তিনি দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। অটলবিহারী বাজপেয়ীর সময়েও তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। এই অভিজ্ঞতা বিজেপির শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের মধ্যে কারও নেই। রাজনাথ সিং-ই কিন্তু ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রীর পদ প্রার্থী হিসেবে মোদির নাম প্রস্তাব করেছিলেন। সে সময় মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হলেও, তিনি কিন্তু সর্বভারতীয় স্তরের কোনও নেতা ছিলেন না। এছাড়া তাঁর বিরোধী দলের সঙ্গেও তাঁর ভাল সম্পর্ক। এবং তিনি শুধু আরএসএস-এর ঘনিষ্ঠই নন, সঙ্ঘের অত্যন্ত আস্থাভাজন তিনি। সঙ্ঘ তাঁকে যথেষ্ট ভরসা করে এবং গত দশ বছরে বিভিন্ন সঙ্কটের মুহূর্তে, পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজনাথকে বহুবার কাজে লাগানো হয়েছে।

বহুজন সমাজবাদী পার্টির এমপি দানিশ আলি বলেছিলেন, 'বিজেপিতে একদা সুষমা স্বরাজ বা অরুণ জেটলির মতো নেতারা যা করতেন অর্থাৎ বিরোধীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা - এখন সেটা রাজনাথ সিং করেন।' কৃষক আন্দোলনের সময়েও কৃষক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন রাজনাথ সিং। বিশেষজ্ঞরা এ কথাও বলে থাকেন যে, পার্লামেন্টে বিজেপির শক্তি যদি কমে যায় এবং সরকার গড়ার জন্য তাদের অন্য দলের প্রয়োজন হয় - তখন রাজনাথ সিং-কেই ফ্রন্টফুটে আনতে হবে। কারণ, একমাত্র তাঁর সাথেই বিরোধীদের ভাল সম্পর্ক টিকে রয়েছে। সব দিক থেকে তিনি এগিয়ে থাকলেও রাজনাথ সিং-এর বয়স বিপক্ষে যেতে পারে। তাঁর এখনই ৭২ বছর বয়স।

গাড়োয়ালের যুবক অজয় বিস্ত সন্ন্যাস নিয়ে হয়েছিলেন যোগী আদিত্যনাথ। পরবর্তীতে উত্তরপ্রদেশের গোরখপুর হয়ে ওঠে তাঁর কর্মভূমি। উত্তরপ্রদেশের গত ৭ বছরের মুখ্যমন্ত্রী তিনি। উত্তরপ্রদেশ যে কোনও রাজনৈতিক দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারে তা ভাবনাতীত ছিল। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অমিত শাহ দলের নেতৃত্ব দিতে নিজের রাজনীতির জায়গা (গুজরাত) থেকে উত্তরপ্রদেশে সরে আসতে কখনই পিছপা হবেন না। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে তাঁর প্রচারের ধুম দেখেও তা কিছুটা বোঝা গিয়েছিল। অন্যদিকে, রাজনাথ সিং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন এবং ওই রাজ্যেরই ভূমিপুত্র।

নরেন্দ্র মোদির উত্তরসূরীর তালিকায় নিতিন গডকড়ী বা দেবেন্দ্র ফডণবীসের নাম হালকা শোনা যায়। কিন্তু তাঁদের প্রতিবন্ধকতা হল উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে কোনও সংযোগ নেই। ভাষার দিক থেকেও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। হিন্দিতে তাঁরা সাবলীল নন। যার কারণে উত্তরপ্রদেশের প্রচার সভাগুলিতেও ভাষণ দিতে পারেন না। বাকি তিন সম্ভাব্য উত্তরসূরী উত্তরপ্রদেশের ভূমিপুত্র, তার সাথে সাথে তাঁরা রাজ্য রাজনীতিতেও সক্রিয়। তবে, ইন্ডিয়া টু-ডে মুড অফ দ্য নেশন-এর সমীক্ষার তথ্য বলছে, দলের সমর্থকরা মোদির উত্তরসূরী হিসেবে সবার চেয়ে এগিয়ে রেখেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। ২৫% মানুষই তাঁকে যোগ্য উত্তরসূরী মনে করছেন। ১৯% সমর্থক যোগী আদিত্যনাথকে, ১৩% সমর্থক নিতিন গড়কড়ীকে, ৫% সমর্থক শিবরাজ সিং চৌহান এবং রাজনাথ সিংকে উত্তরসূরী হিসেবে এগিয়ে রেখেছেন।

আরও পড়ুন:একশো বছরের বিতর্কিত অতীত! শতবর্ষ পেরিয়েও কেন উদযাপনে নেই আরএসএস?

উল্লেখ্য, ভারতের যে অংশটা 'হিন্দি বলয়' বা 'গো-বলয়' নামে পরিচিত তার গোটাটাই হল উত্তরপ্রদেশ। সব দলেরই ক্ষমতায় আসার প্রধান ভরসা উত্তরপ্রদেশ। ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি প্রধানমন্ত্রী দিয়েছে এই রাজ্যই। স্বাধীনতার ৭৭ বছরের মধ্যে ৬০ বছর এই রাজ্যের দল কেন্দ্রে নেতৃত্ব দিয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছেন - জহরলাল নেহেরু, ইন্দিরা গান্ধি, অটলবিহারী বাজপেয়ী, নরেন্দ্র মোদিরা। প্রসঙ্গত, মোদি ১২ বছর গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকলেও, উত্তরপ্রদেশ হয়েই পার্লামেন্টে গিয়েছিলেন। ২০১৪ সালে ওই রাজ্যের বারাণসী আসনে জয় পেয়েই প্রথমবারের মতো এমপি হয়েছিলেন। ফলত, নরেন্দ্র মোদির পর যে-ই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাঁর সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের সূত্র জুড়ে থাকবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

More Articles