ঠিক কী হয়েছে ঐন্দ্রিলার, প্রাণঘাতী এই রোগ হানা দিতে পারে যখনতখন, উপসর্গ কী
Aimdrila Sharma: গত ১ নভেম্বর আচমকা কী হয় এই অভিনেত্রীর? কেন চেতনা হারান তিনি? মাত্র ২৩ বছর বয়সেই এই বিপদ কেন?
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ! ব্রেন স্ট্রোক। এই রোগে আক্রান্ত হয়েই বর্তমানে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা (Aindrila Sharma) । একের পর এক সংক্রমণ আর খারাপ পরিস্থিতি ঘিরে ধরছে অভিনেত্রীকে। মাত্র ২৩ বছর বয়সেই ফের মৃত্যুর সঙ্গে যুঝছেন অভিনেত্রী। কিন্তু গত ১ নভেম্বর আচমকা কী হয় এই অভিনেত্রীর? কেন চেতনা হারান তিনি? মাত্র ২৩ বছর বয়সেই এই বিপদ কেন?
এরপর যদি আক্রান্ত হন আপনি? যদি বিপদের মুখে পড়েন আপনার পরিবারের কেউ? কী করবেন? কেন হয় এই অবস্থা? কী কী হতে পারে? মৃত্যুর সম্ভাবনা? বাঁচার আশা? যে কারওর কেন হতে পারে এমন? উপসর্গ কী? এর সুরাহা? সব বিষয়ে বিস্তারিত জানাব আমরা।
কলকাতার অন্যতম খ্যাতনামা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আশিক ইকবাল বলছেন, এই মস্তিষ্কে রক্তের ক্ষরণ বিষয়টি জানার আগে, আমাদের জানা প্রয়োজন, এই স্ট্রোক মূলত কয়প্রকারের হয়। ব্রেন স্ট্রোক তিন ধরনের। স্কেমিক, হেমারজিক এবং মিনি স্ট্রোক বা টিআইএ। মিনি স্ট্রোক বাদে, প্রথম দুই ধরণের স্ট্রোকের ফলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের রক্তনালী বন্ধ বা ছিঁড়ে যাওয়ার একটা কারণ থাকে। অভিনেত্রীর সম্ভবত যে ধরনের স্ট্রোক হয়েছে, অর্থাৎ শোনা যাচ্ছে যা, তা দেখলে সেটি হেমারজিক শ্রেণীর। এই ক্ষেত্রে হঠাৎ করে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার একটা বড় কারণ থাকে। বিভিন্ন আনুষঙ্গিক সংকট বা সমস্যা এবং অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপের প্রভাবে এই সমস্যায় আক্রান্ত হতে হয় যখন-তখন।
আরও পড়ুন: সুতোয় ঝুলছে জীবন! ঐন্দ্রিলার জন্য আজ রাত জাগছে বাংলা
এই স্ট্রোকের সমস্যা? চিকিৎসক ইকবাল বলছেন, দেহের রক্ত সঞ্চালনের ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা নেয় মস্তিষ্কও। শরীরের সামগ্রিক কাজের জন্য, প্রতিবর্ত ক্রিয়ার জন্য মস্তিষ্ক দায়ী। আর সেখানেই যদি গলদ থাকে! অর্থাৎ মস্তিষ্কের মধ্যেই যদি ঠিকঠাক রক্তের সঞ্চালন না হয়, তা হলে 'ব্রেন রেসপন্স' করবে না। আর সেটা হলেই বিপদ বাড়বে। সেখানেই নানা শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। মৃত্যুর আশঙ্কা তো থাকেই। কোমা, একাধিক অঙ্গের কাজ বন্ধ এগুলো তো পরপর আছেই!
স্ট্রোকের রোগীকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয় কখন? ঐন্দ্রিলাকে এই একইভাবে রাখা হয় ভেন্টিলেশনে। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, আগেই বলেছি, এই রোগে আক্রান্ত হলে, বিশেষত হেমারজিক শ্রেণীর ব্রেন স্ট্রোক। যার দরুণ রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন প্রায়। তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থা তৈরি হয়। এই অবস্থায় শারীরিক অবস্থার সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ রাখতে কৃত্রিমযন্ত্র প্রয়োজন হবেই। বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। চিকিৎসকরা নানা পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে যান। আবার শরীরে সংক্রমণ এবং ক্ষতিকারক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি যদি পায়। ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে কোনও বাধা থাকলে, সেটাও বিপজ্জনক আকার নিতে পারে! নানা পরিস্থিতি বিচার করে তাই রোগীকে বাঁচিয়ে তোলার জন্যই ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন হতে পারে।
স্ট্রোক হয়েছে বুঝবেন কীভাবে? চিকিৎসক আশিক ইকবাল বলছেন, একাধিক উপসর্গ রয়েছে, ঠিক উপসর্গ নয়, লক্ষ্মণ বলা ঠিক। তার মধ্যে অন্যতম; উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা। হঠাৎ করে রক্তচাপ বেড়ে গেলে অস্বস্তি তৈরি হয়। মাথা ঘোরে। হাতে যন্ত্রণা, পেশির টান। দেহের কোনও অঙ্গের অসাড় হয়ে যাওয়া, বিশেষত হাত, পা। অন্যের কথায় সাড়া না দেওয়া। চোখ লাল। চোখে অন্ধকার দেখা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। বমি। কখনও নিঃসাড়ে মূত্র বিসর্জন করে ফেলেন আক্রান্ত।
চিকিৎসক আশিক বলছেন, স্ট্রোক হয়েছে কি না তা অনুধাবনে ‘এফএএসটি’ বা ‘ফাস্ট’ (FAST) বলে একটি পরীক্ষা করা হয়।
‘এফ’ বা ফেসিয়াল ড্রুপিং
হঠাৎ মুখ বেঁকে যাওয়া, এটি স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান লক্ষ্মণ। কথায় জড়তা আসে। কথা বলতে সমস্যা হয়। দেখে মনে হয়, রোগী মুখ বেঁকিয়ে রয়েছেন।
‘এ’ বা ‘আর্ম উইকনেস’
হাতের আকস্মিক দুর্বলতা। রোগীকে দু'টি হাত একসঙ্গে সামনের দিকে তুলতে বলা হলে দেখা যায়, স্ট্রোক হলে এক হাত অন্য হাতের তুলনায় বেশি ঝুঁকে রয়েছে।
‘এস’ বা ‘স্পিচ’
আকস্মিকভাবে কথা বলার সমস্যা দেখা দেয়। স্ট্রোক হলে খুব সরল কোনও বাক্য গঠন করতে সমস্যা তৈরি হয় আক্রান্তের।
‘টি’ বা ‘টাইম’
যদিও এই শব্দবন্ধ থেকেই ধরা হয় সচেতনতার পর্ব।যেখানে বলা হয়, স্ট্রোকের সময় খুব জরুরি। কোন সময়ে স্ট্রোক হয়েছে, সঠিক সময় চিকিৎসককে জানানো আর রোগীকে দেরি না করে, চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া। এই সময়কে বলা হয় গোল্ডেন সময়। যা অনেককিছু আটকে দিতে পারে।
এই প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য কী কী করবেন?
চিকিৎসক বলছেন, প্রথমত, শারীরিক অন্যান্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ। অন্য শারীরিক সমস্যা থাকলে নিয়মিত পরীক্ষা করান। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খান। পারলে খুব কম সময়ের ব্যবধানে রক্তচাপ পরীক্ষা করান। যেকোনও সমস্যা অনুভব করলেই দেরি নয়, নিকটবর্তী চিকিৎসকের কাছে যান। কাছের হাসপাতালে যান। আসলে, সাবধান থাকা বাঁচার মূল অস্ত্র।
আক্রান্ত না হওয়ার কোনও উপায়? চিকিৎসক জানান, না সেইভাবে কিছু থাকে না। রোগে আক্রান্ত হতেই পারেন। তবে আপনার হাতেই রয়েছে খানিকটা নিরাপদ থাকার চাবিকাঠি। সুষম খাবার খাওয়া। ফাস্টফুড বর্জন। সঠিক অভ্যাস। অস্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইলের পরিবর্তন। মাদক না খাওয়া। ধূমপান না করা। দুশ্চিন্তা না করে চিন্তামুক্ত থাকা, মস্তিষ্ককে অবসাদ-চিন্তা থেকে বিশ্রাম দেওয়া। নিয়মিত শারীরিক কসরত। হাঁটা। এগুলো জরুরি। সঙ্গে অবশ্যই নানা সমস্যা থাকলে তার সঠিক চিকিৎসা।
কেন বাড়ছে স্ট্রোকের প্রবণতা?
অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা ভিন্ন। তাঁর নানান শারীরিক সমস্যা আগে থেকেই ছিল। বাকিটা তাঁর চিকিৎসকরা বলবেন। কিন্তু এখন বয়সের ভেদ না বিচার করেই আক্রান্ত বাড়ছে তার অন্যতম কারণ হল; অপরিমিত জীবনযাপন। সঠিক খাবার। ঘুম। বিশ্রাম না থাকা। ফাস্টফুড খাওয়া। অতিরিক্ত মদ্যপান। ধূমপান। অতিরিক্ত রাতজাগা। ঘুমের ঘাটতি। অতিরিক্ত মানসিক চাপ। কাজের চাপ। বিরামের অভাব। এবং শারীরিক কসরত না করা।