রাতারাতি কমে গেল দেশের সমস্ত নাগরিকের বয়স! যে ম্যাজিক ঘটাল দক্ষিণ কোরিয়া
South Korea Age Counting Law: ৩১ ডিসেম্বর যদি কোনও শিশু জন্মায় তাহলে পরের দিন তার বয়স হবে দুই!
ধরুন ঘুমোতে যাওয়ার আগে অবধি আপনি জানতেন, আপনার বয়স ৫০, অথবা ১৫, বা সাড়ে ৩৫! মোদ্দা কথা, জন্ম শংসাপত্র অনুযায়ী, মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড অনুযায়ী আপনি নির্দিষ্ট একটি দিন অনুযায়ী বয়স মাপেন। সক্কাল সক্কাল ঘুম থেকে উঠেই জানলেন, এতদিন যা ছিল আপনার বয়স আর তা নয়ই! আপনার বয়স হুশ করে কমে গিয়েছে হযবরল-র সেই টেকো বুড়োর মতো! কাল্পনিক শোনালেও, এমনটাই ঘটেছে। একজন বা দু'জন ব্যক্তির সঙ্গে না। আস্ত একটা দেশের সমস্ত নাগরিকের বয়স কমে গিয়েছে রাতারাতি। আসলে বয়স নথিভুক্ত করার পদ্ধতিতে একটি দীর্ঘ-প্রত্যাশিত পরিবর্তনের ফলাফল এটি। দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন আইন অনুযায়ী দেশের ঐতিহ্যগত বয়স গণনা পদ্ধতিকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে মেলানো হয়েছে।
এতকাল ধরে, দক্ষিণ কোরিয়া কোনও ব্যক্তির বয়স হিসাব করার জন্য দু'টি উপায় ব্যবহার করত। এই পুরোনো নিয়মে, শিশুদের জন্মের দিনে অর্থাৎ যেদিন সে ভূমিষ্ঠ হচ্ছে সেদিন তার এক বছর বয়স বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু প্রতি বছর ১ জানুয়ারি, তাদের প্রকৃত জন্মদিন নির্বিশেষে প্রত্যেকের জন্মে অতিরিক্ত একটি বছর যোগ করা হতো। মোট কথা, ৩১ ডিসেম্বর যদি কোনও শিশু জন্মায় তাহলে পরের দিন তার বয়স হবে দুই!
গণনার দ্বিতীয় পদ্ধতিটি এই পুরোনো পদ্ধতি এবং আন্তর্জাতিক পদ্ধতির এক মিশ্রণ। এখানে একটি শিশু শূন্য বছরে জন্মগ্রহণ করে, কিন্তু তারপরে প্রতি বছর ১ জানুয়ারিতে তার জন্মদিন হয়। তাই একজন ব্যক্তির তিনটি ভিন্ন বয়স দেখা যেতে পারে, আপনি কোন পদ্ধতির উপর নির্ভর করছেন তার ভিত্তিতে।
আরও পড়ুন- রাত ৯ টায় রহস্যময় গর্জন! হাজারে হাজারে মানুষ পশুকে খুন করেছিল বিশ্বের বীভৎসতম এই হ্রদ
এরপর গত বছরের ডিসেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ার এই বয়স গণনা ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে একই সারিতে আনার জন্য একটি নতুন আইন পাস করা হয়। এই আইনটি ২০২৩ সালের ২৭ জুন কার্যকর হয়। অর্থাৎ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রত্যেকেরই বয়স কমে গিয়েছে এক বা দুই বছর।
এই পরিবর্তন বেশিরভাগ মানুষের দৈনন্দিন জীবনেই প্রভাব ফেলবে। দেশের বেশিরভাগ প্রশাসনিক ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই মানুষের প্রকৃত জন্মদিন নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। পাসপোর্ট এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সে ব্যবহার করা জন্মতারিখ বা অবসর গ্রহণের বয়স, স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত সহায়তার যোগ্য বয়স সবকিছুই রাতারাতি বদলে গিয়েছে এখন।
তবে পুরোনো ব্যবস্থা এখনও দেশের নাগরিকদের জীবনের কিছু ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যেমন, স্কুলে ভর্তি, মদ্যপান এবং ধূমপানের আইনি বয়স এবং সামরিক পরিষেবার জন্য একজনের যোগ্য বয়স এখনও আগের হিসেবেই মানা হবে। দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি ইউন সুক ইওল গত বছর নির্বাচনের সময় এই পরিবর্তনের পক্ষে ছিলেন। তাঁর মতে, দেশের ঐতিহ্যগত বয়স ব্যবস্থা অপ্রয়োজনীয় সামাজিক ও অর্থনৈতিক খরচ তৈরি করেছে।
পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশে প্রচলিত বয়স গণনা পদ্ধতি প্রচলিত ছিল, কিন্তু বেশিরভাগই এখন আন্তর্জাতিক মানের সমতুল্য হয়েছে। জাপান ১৯৫০ সাল পর্যন্ত এই পুরোনো পদ্ধতিগুলির উপরই নির্ভর করত। উত্তর কোরিয়া তো এই সেদিন, ১৯৮০-এর দশকে আন্তর্জাতিক পদ্ধতি গ্রহণ করেছে।