২ বছরে ৫ বার প্রধানমন্ত্রী বদল, কেন ক্ষোভে ফুঁসছে ফ্রান্স?
France Protest: বুধবার আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভে কার্যত অচল হয়ে পড়ে ফ্রান্সের জনজীবন। রেন শহরে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।
নেপালে রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝেই বিক্ষোভের চিত্র ফ্রান্সেও। ২ বছরে পাঁচবার প্রধানমন্ত্রী বদল, অর্থনীতির বেহাল দশা ফ্রান্সের মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করে। সোমবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইরু সংসদে আস্থা ভোটে হেরে পদত্যাগ করেন। এরপর প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নুকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসান। যিনি ম্যাক্রোঁর ঘনিষ্ঠ মিত্র বলেই পরিচিত। আর সেই দিনই দেশজুড়ে শুরু হয় বিক্ষোভ।

সেবাস্তিয়ান লেকর্নু ও ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ
‘সবকিছু বন্ধ করে দাও’ (Block Everything) নামের সরকারবিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। বাজেট কাটছাঁট ও রাজনৈতিক অস্থিরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীরা রাস্তায় নামলে সরকারও তাঁদের দমন করতে কড়া অবস্থান নেয়। ব্যারিকেড আটকে, টিয়ার গ্যাস ছুঁড়ে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করে পুলিশ। প্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনই কার্যত সংকটের মুখে পড়েন লেকর্নু। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর জন্য এই বিক্ষোভ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

ছবিসূত্র: এক্স হ্যান্ডেল
বুধবার আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভে কার্যত অচল হয়ে পড়ে ফ্রান্সের জনজীবন। রেন শহরে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তার ছিঁড়ে দেওয়ায় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, প্রায় ২ লক্ষ মানুষ বিক্ষোভে রাস্তায় নামে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রেতাইয়ো জানান, সারা দেশে অন্তত ৮০০টি বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৪৫০-র বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বহুজন হেফাজতে রয়েছে।
আরও পড়ুন - ১৭ বছরে ১৪ বার সরকার বদল, কেন কোনো স্থায়ী সমাধান খুঁজে পেল না নেপাল?
বুধবারই প্রায় ৩০০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে টিয়ার গ্যাস ছুড়ে ভিড় ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করা হয়। আন্দোলন দমাতে প্রায় ৮০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল, যদিও ফরাসি সংবাদমাধ্যম দাবি করছে প্রকৃত সংখ্যা ১ লক্ষের কাছাকাছি। এই ঘটনায় এক ডজনেরও বেশি পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন বলে জানা যায়। মার্সেই, মঁপেলিয়ে, নঁত, লিঁও-সহ বিভিন্ন শহরে মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। উত্তরের শহর রুবেতে (Roubaix) একটি আর্ট স্কুলের প্রবেশপথ অবরোধ করে রাখা হয়, একজন গিটার বাজাচ্ছিলেন, আর ব্যানারে লেখা ছিল— “আমাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে কাটছাঁট চলবে না।”

ছবিসূত্র: এক্স হ্যান্ডেল
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে ম্যাক্রোঁ প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। প্রথম থেকে দেশবাসী তাঁর পদত্যাগের দাবি করে এসেছে। ফ্রান্সের মানুষের দাবি, ম্যাক্রোঁর জন্যই যত সমস্যা। বিতর্কিত পেনশন সংস্কার থেকে শুরু করে ২০২৩ সালে প্যারিস শহরতলিতে এক কিশোরকে পুলিশের হত্যা— সব মিলিয়ে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে আমজনতা।
আরও পড়ুন - নেপাল ২০০৮-২০২৫ || কী ভাবে পড়ব এই সময়কে?
শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, নেপালের পর ফ্রান্স। সব ক্ষেত্রেই জনসাধারণের ক্ষোভের কেন্দ্রে রয়েছে অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা। দুর্নীতিমুক্ত যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে কার্যত এই প্রতিটি দেশেই মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং প্রধানমন্ত্রী পদে সদ্য নিয়োজিত সেবাস্তিয়ান লেকর্নু দুজনকেই চাইছে না ফ্রান্সের মানুষ। এখন দেখার, জনসাধারণের দাবি মেনে তাঁরা সরকার থেকে সরে আসবেন নাকি মানুষের ক্ষোভের আগুনে আরও ঘি ঢেলে পরিস্থিতি আরও জটিল করবেন।

Whatsapp
