খাস কলকাতাতেই ‘বাংলাদেশি’ তকমা! বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের সঙ্গে যা ঘটল

Sealdah Incident: এই ঘটনায় ১২ জন পড়ুয়া আহত বলে জানান মাসুম মিঞা। তাঁদের মধ্যে এক পড়ুয়া মাথায় গুরুতর চোট পেয়েছেন।

“বাংলায় কথা বলছিস, তোরা তো বাংলাদেশি।” খাস কলকাতার বুকে ‘বাংলাদেশি’ অভিহিত করে শিক্ষার্থীদের উপর আক্রমণ হিন্দিভাষী দোকানদারদের। বুধবার রাতের ঘটনা। শিয়ালদহ স্টেশন সংলগ্ন দোকানে ফোনের কভারের দরদাম করা নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ার সঙ্গে ঝামেলার সূত্রপাত শিয়ালদহের এক দোকানদারের। কথা কাটাকাটি থেকে গায়ে হাত তোলার ঘটনায় চরম পরিস্থিতি তৈরি হয় শিয়ালদহে।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএলএলবি চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়া মাসুম মিঞা ইনস্ক্রিপ্টকে জানিয়েছেন, ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক পড়ুয়া শিয়ালদহ ফ্লাইওভারের নিচের একটি দোকানে ফোনের কভার কিনতে গেলে দরদাম করা নিয়ে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। দোকানদার ওই পড়ুয়াকে গালিগালাজ করে বলে অভিযোগ, মারতেও উদ্যত হয় দু-তিনজন মিলে। এরপর সেই পড়ুয়া কারমাইকেল হোস্টেলে ফিরে ঘটনাটি জানালে প্রথমে হোস্টেল থেকে চারজন শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে যায়। পরে আরও শিক্ষার্থী আসে। সব মিলে প্রায় ২০জন পড়ুয়া ঘটনাস্থলে গিয়েছিল বলে জানান মাসুম মিঞা। তাঁরা দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলার জন্য গিয়েছিলেন বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন- ‘বাংলাদেশি’ তকমা! ওড়িশায় কেন নির্যাতনের শিকার বাংলার শ্রমিকেরা?

কিন্তু দোকানদাররা তাঁদেরও গালিগালাজ করেন এবং মারধর করে। দোকানদারদের কাছে হকিস্টিক, ছুরি, ব্যাট-উইকেট ইত্যাদি ছিল বলে অভিযোগ মাসুমের। তিনি আরও জানান, দোকানদাররা হিন্দিতে কথা বলছিল তাঁদের কথা বুঝতে না পারায়, বাংলায় কথা বলতে বললে দোকানদাররা বলেন,বাংলায় কথা বলছিস, তোরা তো বাংলাদেশি।” এর প্রতিবাদ করলে দোকানদাররা পাল্টা বলেন, “বেশ করেছি, বাংলাদেশিই বলব।" এই ঘটনার ভিডিও করছিল এক পড়ুয়া। তাঁর ফোন কেড়ে নিয়ে ভিডিও ডিলিট করে দেওয়া হয় এবং তাঁকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ।

এই ঘটনায় ১২জন পড়ুয়া আহত বলে জানান মাসুম মিঞা। তাঁদের মধ্যে এক পড়ুয়া মাথায় গুরুতর চোট পেয়েছেন। কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান তাঁরা। মুর্শিদাবাদ, মালদা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, দক্ষিণ দিনাজপুর পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা ওই পড়ুয়ারা

আরও পড়ুন- হিন্দিও এক ‘বাংলাদেশি’ ভাষা

উক্ত ঘটনার খবর পেয়ে মুচিপাড়া থানায় পৌঁছন ‘বাংলা পক্ষ’-এর সাধারণ সম্পাদক গর্গ চট্টোপাধ্যায়। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারির দাবি তোলেন তিনি। তারই সঙ্গে বলেন, "ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও বাঙালি মার খাচ্ছে। ইউপি, গুজরাট, ওড়িশায় বিজেপির সরকার বলে গ্রেফতার করা হয়না। কিন্তু বাংলায় তো বিজেপি-র সরকার নেই, তাহলে কেন এই ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাঁদের গ্রেফতার করা হবে না?" অতি সত্ত্বর দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করে প্রাণহানি করার চেষ্টার পাশাপাশি জাতি বিদ্বেষের ধারায় মামলা রুজু করার দাবি তোলেন গর্গ চট্টোপাধ্যায়।

Muchipara Police Station

মুচিপাড়া থানার বাইরে কারমাইকেল হোস্টেলের ছাত্ররা 

সাড়ে দশটায় মেডিকেল কলেজে আহত পড়ুয়ারা যান চিকিৎসার জন্য সেখান থেকে বেরিয়ে মুচিপাড়া থানায় পৌঁছে অভিযোগ দায়ের করতে করতে প্রায় সাড়ে তিনটা-চারটা বেজে যায় বলে জানান মাসুম ইতোমধ্যেই পুলিশ ২জনকে আটক করেছে বলেও খবর

প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাসে ভারত জুড়েই চলছে বাঙালির অপরায়ন। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে, বিশেষত বিজেপি শাসিত রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের আটক, মারধর, ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো, এমনকি 'বাংলাদেশে ঘাড়ধাক্কা' দেওয়ার ঘটনায় উত্তাল রাজ্য-রাজনীতি। এবার খাস কলকাতার বুকে এই ঘটনা প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে, বাঙালি জাতির অস্তিত্ব এবং আগামীর সংকট নিয়ে।

More Articles