ব্রেকআপ হয়েছে সদ্য! জানেন, হার্ট অ্যাটাকের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আপনি?

Broken Heart Syndrome: টাকোসুবো কার্ডিওমায়োপ্যাথি বা ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোম হল একটি হৃদরোগ যা মানসিক চাপ বা চরম অবস্থার কারণে দেখা দেয়।

মন ভেঙেছে সম্প্রতি? প্রেম ছেড়ে চলে গিয়েছে অন্য পাড়ায়? অথবা বন্ধুত্বে বিশ্বাস ভেঙে খানখান? মন ভাঙলে সেই শব্দ বাইরে শোনা যায় না ঠিকই, তবে সেই মানুষের সমস্ত অন্তর জুড়ে উথালপাথাল ঢেউ আছড়ে পড়ে। আছড়ে আছড়ে মনকে আরও ভেঙে দেয়। কেন এত কষ্ট হয় মন ভাঙলে? কেন মন খারাপ বা কষ্ট থেকে এত যন্ত্রণা পান মানুষ? শুধুই কি মনের জটিলতা? নাহ, শুধু মন নয় কুসুম! এখানে জড়িয়ে আছে শরীরও! যদি মন ভেঙে থাকে, কষ্ট পেয়ে থাকেন তীব্র, জানবেন আপনি যে ব্যথা অনুভব করছেন তা কেবল মনস্তাত্ত্বিক নয়, এর একটি শারীরবৃত্তীয় ব্যাখ্যাও রয়েছে।

এক গবেষণা বলছে, প্রেমে পড়লে সাধারণত শরীরে হরমোনগুলির বিপুল পরিবর্তন হয়। দেহজুড়ে বিশেষ হরমোনের ক্ষরণ, হরমোনের ছোটাছুটি মানুষকে উদ্দীপিত রাখে। সেই কারণেই প্রেমে পড়া মন চঞ্চল হয়ে ওঠে। প্রেমে পড়লে মানুষের মন ফুরফুরে, দিন রাত্তির চনমনে থাকে। প্রেমে মানুষের এই ভালো থাকার নেপথ্যে থাকে দু'টি হরমোন। 'কাডল' হরমোন অক্সিটোসিন এবং 'ফিল-গুড' হরমোন ডোপামাইন।

আর যখন ব্রেকআপ ঘটে? যখন বিশ্বাসভঙ্গ হয়, মানুষ তীব্র মন খারাপের মধ্যে দিয়ে যান? এও হরমোনেরই খেল! মন খারাপের সময়, ব্রেকআপের সময় নেতিবাচক আবেগগুলি মানুষকে কাবু করে ফেলে। শরীরে তখন কর্টিসল, অ্যাড্রেনালিন এবং নোরাড্রেনালিনের মতো স্ট্রেস হরমোন ক্ষরিত হয়।

টাকোসুবো কার্ডিওমায়োপ্যাথি নামক একটি শারীরিক অবস্থা ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোম নামেও পরিচিত। এই ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোমে দেখা যায় তখনই যখন একজন ব্যক্তি তীব্র মানসিক এবং শারীরিক চাপের কারণে সামান্য বুকে ব্যথা অনুভব করেন। বিষয়টি তেমন গুরুতর নন বলে অনেকেই মনে করেন। তবে বিরল কিছু ক্ষেত্রে এই সামান্য ব্যথাই অব্যাহত থাকলে ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোম গুরুত্বর শারীরিক সঙ্কট তৈরি করতে পারে।

আরও পড়ুন- জানেন যৌনতায় তৃপ্তি আপনার অধিকার! কিন্তু কতটা সুখী ভারতীয়রা?

টাকোসুবো কার্ডিওমায়োপ্যাথি বা ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোম আসলে কী?

টাকোসুবো কার্ডিওমায়োপ্যাথি বা ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোম হলো একটি হৃদরোগ যা মানসিক চাপ বা চরম অবস্থার কারণে দেখা দেয়। এটি এক এমন অবস্থা যেখানে হৃদপিণ্ডের রক্ত পাম্প করার পদ্ধতিতে সামান্য পরিবর্তন ঘটে। কখনও কখনও আমাদের হৃদপিণ্ড, বেশিই দ্রুত রক্ত পাম্প করতে থাকে, যার ফলে সামান্য বুকে ব্যথা দেখা দেয়।

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল অনুযায়ী, এই অবস্থাটি তখনই ঘটে যখন বাম ভেন্ট্রিকল মানে হার্টের প্রধান পাম্পিং চেম্বার, প্রিয়জনের হারানো, গুরুতর দুর্ঘটনা বা ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরে তীব্র মানসিক চাপের পরিস্থিতিতে দুর্বল হয়ে পড়ে।

ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোমের লক্ষণগুলি প্রাথমিক পর্যায়ের হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলির মতোই। লেফট হার্ট ক্যাথেটারাইজেশন বা করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রামের মাধ্যমে এই অবস্থা নির্ণয় করা যেতে পারে। ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোমের প্রধান লক্ষণই হল বুকে ব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট।

ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোমের জন্য কোনও আদর্শ চিকিত্সা নেই। তবে লক্ষণগুলির তীব্রতার উপর নির্ভর করে এর চিকিৎসা অবশ্যই দরকার। তবে, যেহেতু এটি একটি স্বল্পমেয়াদি অবস্থা, তাই চিকিৎসকরা বলে থাকেন ব্রোকেন হার্ট সামলাতে ডাইইউরেটিকস বা অ্যাসপিরিনই যথেষ্ট। তাই মন ভাঙলে শুধু মনেরই কষ্ট নয়, সারা শরীর জুড়েই দেখা দেয় এই জাতীয় বিবিধ সমস্যা। মন ভাঙলে আসলে স্বাস্থ্যও ভাঙে, দ্রুত সেরে না উঠলে তা অবসাদের দিকে ঠেলে দেয় মানুষকে। মন ভাঙলে তাই তেমন নরম মলম লাগে।

More Articles