কনকনে শীতেও গায়ে সামান্য হাফহাতা জামা, রাহুল গান্ধীর কি ঠাণ্ডা লাগে না? কী বলছেন বিজ্ঞানীরা?

Rahul Gandhi Bharat Jodo Yatra : যেখানে সবাই মোটা জ্যাকেট, চাদর পরে আছেন, সেখানে প্রবল শীতেও কী করে এমন হাফহাতা জামা পরে আছেন রাহুল?

এই মুহূর্তে গুজরাত ভোট, নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপির ভিড়ে ফের খবরের শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছে জাতীয় কংগ্রেস। আর সেইসঙ্গে তাদের মুখ হিসেবে ফের উঠে এসেছেন রাহুল গান্ধী। সৌজন্যে, ভারত জোড়ো যাত্রা। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে, বিভিন্ন রাস্তায় কংগ্রেসের এই মিছিল ইতিমধ্যেই ভাইরাল। বিভিন্ন প্রান্তে মানুষজন এই মুছিলে হাঁটছেন। সেলেব্রিটি থেকে সাধারণ মানুষ, প্রত্যেকে এই ভারত জোড়ো যাত্রায় যোগ দিয়েছেন।

সেই যাত্রারই পুরোভাগে রয়েছেন রাহুল গান্ধী। এক গাল কাঁচাপাকা দাড়ি, সাদা জামা পরিহিত তাঁর ছবিটির সঙ্গে ইতিমধ্যেই অনেকে পরিচিত হয়ে গিয়েছেন। তবে আজকের এই লেখা রাজনৈতিক কোনও বিশ্লেষণ নয়। একটু অন্য আঙ্গিকে, বিজ্ঞানের হাত ধরে ভারত জোড়ো যাত্রার ছবিগুলোর দিকে একবার তাকানো যাক। আর সেখানে রাহুল গান্ধীর লুক সামনে এলে একটা প্রশ্ন মাথায় আসতে বাধ্য। এই আলোচনাও সেই প্রশ্নটি নিয়েই।

এই মুহূর্তে উত্তর ভারতে চলছে শীতের দাপট। দিল্লিতেও শীতের কামড় ভালোই পড়েছে। তার মধ্যেও রাহুল গান্ধীর ছবিটির কোনও বদল নেই। সেই সাদা হাফহাতা শার্ট, সামান্য প্যান্ট আর জুতো। যেখানে অন্যান্য মানুষরা মোটা জ্যাকেট, চাদর, থার্মাল পোশাক পরে আছেন। তাহলে এই প্রবল শীতেও কী করে এমন হাফহাতা জামা পরে দিন কাটাচ্ছেন রাহুল গান্ধী? বীরভূমিতে বাবা রাজীব গান্ধীকে শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়ার সময়ও গায়ে সেই সাদা জামা। আচ্ছা, রাহুল গান্ধীর কি শীত করে না? নাকি অতিমানব?

অবশ্য বিজ্ঞানীরা বলছেন, রাহুল গান্ধী একাই নন। পৃথিবীতে অনেকেই এমন আছেন, যাঁদের শীত করে না। তাঁদের শরীরে কখনও আসে না ‘শীতকাল’। একটি আমেরিকান জার্নালে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, গোটা বিশ্বে ১৫০ কোটি মানুষের ক্ষেত্রে এমন কেস দেখা গিয়েছে। এদের মধ্যেই অন্যতম রাহুল গান্ধী। একদিকে ঠাণ্ডা পড়লেই জবুথুবু হয়ে বসে পড়ছেন অনেকে, আর তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে এঁরা বহাল তবিয়তে সামান্য কাপড় পরেই কাটিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু কেন?

গবেষকরা বলছেন, এর জন্য দায়ী বিজ্ঞান এবং মানবদেহের জিন। মানুষের শরীরের স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে বেশকিছু বিশেষ নার্ভ রিসেপ্টর রয়েছে। এই রিসেপ্টরগুলোর জন্যই আমরা বুঝতে পারি গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীত। জলবায়ু পরিবর্তন হলে এই রিসেপ্টরই মস্তিস্ককে বিশেষ বার্তা দেয়। সেভাবেই আমরা বুঝতে পারি, গ্রীষ্মকাল এল। কিংবা, খুব শীত করছে, এবার লেপ-তোষক বের করতে হবে। ২০২১-এর একটি গবেষণা বলছে। এই বিশেষ নার্ভ রিসেপ্টরেই জেনেটিক মিউটেশন ঘটেছে। মানে, সেই জিনে বিশেষ কিছু রদবদল হচ্ছে। ফলে তাপমাত্রার অনুভূতিও সেভাবে হচ্ছে না।

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, আমাদের অস্থি পেশিতে এক ধরণের বিশেষ প্রোটিন রয়েছে। জীববিজ্ঞানের পরিভাষায় এর নাম এ-অ্যাসিটিন-৩ না আলফা অ্যাসিটিন ৩। মানুষের অস্থি পেশিও মূলত দুই ধরণের হয়। এক ধরণের পেশি যার কর্মক্ষমতা তুলনামূলক কম। অন্য প্রকারের ক্ষমতা এর তুলনায় একটু বেশি। এই দুই ধরণের পেশির সৌজন্যেই তৈরি আমাদের অস্থি পেশি। বিজ্ঞানীরা বলেন, এই দুই ধরণের অস্থি পেশির উপস্থিত থাকাই খুব ভালো। কারণ, মানুষের হাঁটাচলা, দৌড়নো, খেলাধুলা ইত্যাদি সবকিছুর জন্যই এই পেশি গুরুত্বপূর্ণ। তারই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এই এ-অ্যাসিটিন-৩ প্রোটিন।

এই বিশেষ প্রোটিনটিরই অভাব দেখা যাচ্ছে কারও কারও শরীরে। দুই ধরণের পেশির জন্য স্নায়ুর রিসেপ্টরগুলিও ঠিকঠাক কাজ করে। উষ্ণতা বজায় রাখে শরীরে। তাই গ্রীষ্ম হোক বা প্রবল শীত – সবেতেই সাড়া দেয় এই প্রোটিন। সেই উদ্দীপনা রিসেপ্টরের মাধ্যমে পৌঁছে যায় মস্তিস্কে। সেখান থেকে মানুষ ঋতু পরিবর্তন বুঝতে পারে। কিন্তু এই নির্দিষ্ট প্রোটিনের অভাবের জন্যই একটা অংশের মানুষ শীত বা গরম সেভাবে অনুভব করতে পারেন না। আখেরে কোনও ক্ষতি হয় না। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলেন, খুব বেশি দৌড়ঝাঁপের ক্ষেত্রে হয়তো একটু সমস্যা দেখা দিতে পারে। রাহুল গান্ধী কি সেই গোত্রেরই একজন? জোরালো সন্দেহ বিশেষজ্ঞদের।

More Articles