কেন দু’সপ্তাহের কথা বলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই ইরানে হামলা ট্রাম্পের?

Iran-Israelconflict: হামলায় ইরানের পারমাণবিক ঘাঁটিগুলি কতটা ধ্বংস হয়েছে তা জানতে সময় লাগবে। যদি এই অভিযানে সফল না হয় তবে ট্রাম্পের চাপ বাড়বে।


সম্প্রতি হোয়াইট হাউস বিবৃতি দিয়ে জানায়, ইরানের সঙ্গে বোঝাপড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সে পথে হাঁটবেন কি না, তা আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে জানা যাবে। কিন্তু সেই ঘোষণার ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই ইরানে হামলা চালায় আমেরিকা। প্রশ্ন উঠছে, কেন দু'সপ্তাহ সময় নিলেন না ট্রাম্প?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের উদ্দেশ্য ছিল এ হামলার মাধ্যমে ইরানকে আলোচনায় বাধ্য করা। তারা এও বলছেন যে  ইজরায়েলের হামলার পরও যারা আলোচনায় আসেনি, তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর আরই আলোচনায় বসার সম্ভবনা নেই। ট্রাম্প এই হামলা করে বোঝাতে চেয়েছেন,তাঁর কথায় বৈশ্বিক মান্যতা রয়েছে।

ফোর্দোর অবস্থান কোমো শহরের পাহাড়ের গুহায়। বাইরে থেকে অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে তাকে ধ্বংস করা কঠিন। ২২জুন রাতে সেখানেই হামলা চালায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি হামলা চলে আরও দুই পরমাণু কেন্দ্রেও। হামলার পরেই ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়া বিবৃতিতে জানান, ইরানের ফোর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানে অবস্থিত তিনটি পরমাণুকেন্দ্রে ‘সফল’ হামলা চালিয়েছে আমেরিকার সেনাবাহিনী। ইরানের তরফে অবশ্য বলা হয় ফোর্দো ধ্বংসের দাবি সত্য নয়। তারা বলে, ফোর্দো-সহ অন্যান্য জায়গায় যন্ত্রপাতি তারা আগেই সরিয়ে ফেলেছিল।

আরও পড়ুন- কাতারের আল উদেইদ ঘাঁটিতে কী রয়েছে?

প্রশ্ন উঠছে, ‘দুই সপ্তাহ’-র  কথা বলে কেন তৎক্ষণাত হামলা অনুমোদন করলেন ট্রাম্প? ইরানের প্রস্তুতির জন্য দুই সপ্তাহ সময় আছে,  ইরান যাতে ঘর গোছাতে না পারে তা নিশ্চিত করতেই কি এমনটা বলা হয়েছিল? নাকি ট্রাম্পের নিযুক্ত মধ্যস্থতাকারী স্টিভ উইটকফের নেতৃত্বে গোপন আলোচনাগুলোয় ভরসা করতে পারছিলেন না।

প্রসঙ্গত ইজরায়েলি সংবাদমাদ্যম টাইমস অব ইজরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলায় কোনো বিপজ্জনক পদার্থ ছড়িয়ে পড়েনি। এ ঘটনায় এখনও আইডিএফ কোনো মন্তব্য করেনি। হামলায় ইরানের পারমাণবিক ঘাঁটিগুলি কতটা ধ্বংস হয়েছে তা জানতে সময় লাগবে। যদি এই অভিযানে সফল না হয় তবে ট্রাম্পের চাপ বাড়বে। এ হামলা ট্রাম্পের রাজনৈতিক ঝুঁকি বাড়াবে। মুখে প্রচার করা ট্রাম্প কেন জর্জ বুশের পথেই হাঁটলেন, প্রশ্ন উঠবে। ইরানে হামলার নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের পাশাপাশি ট্রাম্পের নিজের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ প্রচারশিবির থেকেও সমালোচনা সম্মুখীন হচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। 

আরও পড়ুন-যুদ্ধবিরতি বুমেরাং! ইজরায়েলের ফের আক্রমণ স্রেফ সময়ের অপেক্ষা?

ইরান-ইজরায়েল সংঘাতে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জমিন নেতানিয়াহু যে যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে চান, তা আগে থেকেই দাবি করে আসছেন বিশ্লেষকেরা। মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক শক্তিও বাড়াচ্ছিল ওয়াশিংটন। আগেই মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল দাবি করেছিল, ইজরায়েলের ইরানে হামলার পরিকল্পনায় ট্রাম্পের অনুমোদন ছিল। 

উল্লেখ্য, ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে কোনো নতুন যুদ্ধ শুরু করেননি। নির্বাচনী প্রচারেও বারবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগের নেতাদের বৈদেশিক সংঘাতে জড়ানোর নীতি নিয়ে সমালোচনা করেছেন। ট্রাম্প নিজেকে ‘শান্তির দূত’ বলে দাবি করেন। এই পরিস্থিতিতে তিনি যদি আবার হামলা চালান তবে এবার দলের ভেতরেই তাঁকে বিদ্রোহের মুখে পড়তে হতো। ট্রাম্পের হামলার পর ইরানের কাতার হামলায় আরও উদ্বেগ বাড়ছিল। এই সকল পরিস্থিতি কথা মাথায় রেখেই হয়তো সোমবার (২৩ জুন) রাতে ট্রাম্প সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে ইরান-ইজরায়েলের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করেন। ইজরায়েল সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হওয়ার কথা জানালেও এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানায়নি ইরান। এরপর কী হবে, তাই এখন দেখার।

More Articles