মঙ্গলগ্রহে ইন্টারনেট বসাতে উদ্যোগী এলন মাস্ক! কারা ব্যবহার করবে এই নেটওয়ার্ক?
Elon Musk Mars Internet Connection: মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্স মঙ্গল গ্রহে ইন্টারনেট সংযোগ বসাতে চাইছে স্টারলিংকের মাধ্যমে।
ছুটি কাটাতে গেলেও এখন ইন্টারনেট সংযোগের কথা আগে থেকেই খোঁজ করেন মানুষ। ভ্যাকেশনে গিয়েও 'ওয়ার্ক' পিছু ছাড়ে না। তাই ছুটিরই নাম পাল্টে হয়ে গিয়েছে ওয়ার্কেশন! তবু, এখনও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরতে গেলে মনে হয়, ভালো বিশুদ্ধ পানীয় জল এবং খাবার পেলেই অনেক! বাইরে গেলে, বিশেষ করে দুর্গম বা প্রত্যন্ত এলাকায় মনের মতো আরাম বা খাবার বা বিশ্রাম যে মিলবে না, এমনটা আগে থেকেই ভেবে যান অনেক পর্যটক। তবে ওয়াইফাই বা মোবাইল নেটওয়ার্ক বিষয়টি নিয়ে বদল আসছে দ্রুত। বছর খানেক আগেও যেসব জায়গায় মোবাইল নেটওয়ার্কই পাওয়া দুঃসাধ্য ছিল, সেখানে এখন মেলে ওয়াইফাই সংযোগ। তবে ধরুন, চাঁদে গেলেন, মহাকাশে গেলেন, প্লেনে করে যাচ্ছেন কোথাও, সেখানেও ওয়াইফাই? আপাতত অবিশ্বাস্য মনে হলেও আর কিছুকালের মধ্যেই তাও হয়তো বাস্তব হতে চলেছে।
মানুষ যাচ্ছে চাঁদে, চাঁদে জমিও কিনছে। মঙ্গলেও মানুষকে পাঠানোর চেষ্টা চলছে। তাই অন্যান্য মৌলিক সুবিধার পাশাপাশি লাল গ্রহে ইন্টারনেট সংযোগ তৈরির কথাও এখন ভাবা হচ্ছে। ভাবছেন কে? প্রযুক্তি উদ্যোক্তা, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি এলন মাস্ক। সম্প্রতি আমেরিকায় ট্রাম্প প্রশাসনের খাস লোকও হয়েছেন তিনি। মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্স মঙ্গল গ্রহে ইন্টারনেট সংযোগ বসাতে চাইছে স্টারলিঙ্কের মাধ্যমে। স্টারলিঙ্ক যেমন আমেরিকা এবং বিশ্বব্যাপী অসংখ্য দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহ করে, তেমনই স্পেসএক্স নাকি মঙ্গল গ্রহের জন্য অনুরূপ পরিকাঠামো গড়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
আরও পড়ুন- মঙ্গল গ্রহে এখনও লুকিয়ে রয়েছে জলের অস্তিত্ব! যে আবিষ্কার চমকে দিল বিজ্ঞানীদেরও
মঙ্গলে প্রাণ আছে কিনা এই নিয়ে এককালে চরম তর্ক হতো। তারপর দেখা গেছে প্রাণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক উপকরণই সেখানে আছে। তবে ভিনগ্রহে এলিয়েন আছে কিনা তা নিশ্চিত নয়। তাহলে কবে কোনকালে কোনও মানুষ মঙ্গলে যাবে তার জন্য ইন্টারনেট বসানোর কী প্রয়োজন! এলিয়েনরাও তো পৃথিবীর ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবহার করবে না। মাস্কের মতে, এই ইন্টারনেট মঙ্গল গ্রহে ভবিষ্যতের নানা অভিযানের জন্য যোগাযোগের নানা সুবিধা প্রদান করবে। মার্সলিংক নামের এই প্রস্তাবটি নাসার নেতৃত্বে মার্স এক্সপ্লোরেশোন প্রোগ্রাম অ্যানালিসিস গ্রুপের সাম্প্রতিক সভায় উপস্থাপিত হয়েছিল। বলা হচ্ছে, স্পেসএক্স মঙ্গলগ্রহের কক্ষপথে স্পেসএক্স স্যাটেলাইট স্থাপন করবে যার মাধ্যমে ডেটা বিনিময়ের জন্য একটি সিস্টেম স্থাপন করা সম্ভব হবে।
অর্থাৎ মঙ্গল গ্রহে অনুসন্ধানের জন্য নানা অভিযানে সাহায্য করার পাশাপাশি আরেকটি দিকেও এগোচ্ছেন মাস্ক। বরাবরই স্পেসএক্সের লক্ষ্য ছিল মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপন। সেই লক্ষ্য অর্জনের দিকে এই ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন অন্যতম বড় পদক্ষেপ। স্পেসফ্লাইট নিউজ বলছে, মার্সলিংক নেটওয়ার্ক বর্তমানে পৃথিবীতে কাজ করা স্টারলিঙ্ক সিস্টেমের মতোই কাজ করবে। স্টারলিঙ্ক পৃথিবীর কক্ষপথে উপগ্রহ স্থাপন করে সমগ্র গ্রহে ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান করে।
বর্তমানে ১০২টি দেশে হাজার হাজার স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট স্থাপন করা হয়েছে। মাস্ক চান মঙ্গলেও একই ধরনের নেটওয়ার্ক বসানো হোক। মার্সলিংক গঠনের ফলে মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠে শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থাই দ্রুততর হবে না, মঙ্গল ও পৃথিবীর মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থাও উন্নত হবে। মঙ্গলে ইন্টারনেট বিষয়ে স্পেসএক্সই যে প্রথম এমন প্রস্তাব জমা দিয়েছে তা না। ব্লু অরিজিন এবং লকহিড মার্টিনের মতো সংস্থাগুলিও মঙ্গলে ইন্টারনেটের প্রস্তাব জমা দিয়েছিল৷ ব্লু অরিজিন কোম্পানি বলেছিল, ব্লু রিং অরবিটাল টাগ-এর কথা, যা দিয়ে মহাকাশেই ডেটা পাঠানো এবং ক্লাউড কম্পিউটিং প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব। এই প্রকল্পটি পেন্টাগন-স্পন্সর ডার্ক স্কাই-১ মিশনের জন্য ব্যবহার করা হবে বলেও জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন- সুপার আই-কিউ, সপ্তাহে ৮০ ঘণ্টা কাজ! কোন চাকরির জন্য লোক খুঁজছেন এলন মাস্ক?
লকহিড মার্টিন মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডল বিষয়ে আরও গবেষণার জন্য ২০১৩ সালে পাঠানো MAVEN মহাকাশযানটি ব্যবহার করার প্রস্তাবও দিয়েছিল। লকহিড বলেছিল, MAVEN মহাকাশযানের যোগাযোগ কক্ষপথে গিয়ে পৃথিবীতে তৈরি নাসার ডিপ স্পেস নেটওয়ার্কের মতো কাজ করবে। আসলে NASA এখন মঙ্গল অনুসন্ধান অভিযানের জন্য বেসরকারি প্রকল্পগুলিতে আরও জোর দিচ্ছে৷ ভবিষ্যতে মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সংস্থান সরবরাহ করতে পারে এমন সংস্থাগুলির সঙ্গে অংশীদারিত্বের পথে হাঁটতে চায় নাসা। লেজার-ভিত্তিক প্রযুক্তিতেও কাজ করছে নাসা, যা গভীর মহাকাশে দ্রুত এবং আরও দক্ষ যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে।
লক্ষ্যণীয় যে, এখনও পর্যন্ত নাসা এবং অন্যান্য বেসরকারি সংস্থাগুলি কিন্তু মানুষের মঙ্গল গ্রহে দীর্ঘ যাত্রা সহজ এবং সম্ভব করার জন্য সমস্ত চ্যালেঞ্জের সমাধান খুঁজে পায়নি। মানুষকে শুধু মঙ্গলে পাঠালেই তো হলো না। ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থাও করতে হবে, মানুষ সেখানে যাতে দীর্ঘ সময় থাকতে পারবে এবং মঙ্গলে অক্সিজেন, জ্বালানি ইত্যাদি যাতে পর্যাপ্ত থাকে, এসব নিয়ে নিবিড় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চললেও স্থায়ী সমাধান মেলেনি।