প্রমাণ নেই, তবু নীতীশের বিজেপি-ওয়াপসি প্রচারে ব্যস্ত কেন গোদি মিডিয়া?
Rumour of Nitish Kumar Joining NDA: বিজেপি নেতা গিরিরাজ সিং বলছেন, "নীতীশের জন্য আমাদের দরজা এখনও বন্ধ। তবে আমি কর্মীমাত্র। দলের কথাই শেষ কথা।"
নির্বাচনের আগে আরও একবার লালুপ্রসাদ যাদব ও নীতীশ কুমারের সম্পর্কে ভাঙন প্রচারে উদগ্রীব গোদি মিডিয়া। এ'পর্যন্ত এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি, যার ভিত্তিতে এই কথা সত্যি বলে দাবি করা সম্ভব। তবু প্রচার করা হচ্ছে, নীতীশ বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন। এই জল্পনার নেপথ্যে লালু-কন্যা রোহিণীর তিনটি ট্যুইট রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। পাটনা রাজভবনে গত শুক্রবার, প্রজাতন্ত্র দিবসে 'হাই টি' অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন নীতীশ। কিন্তু দেখা যায়নি তেজস্বী যাদবকে। এই ঘটনা গোদি মিডিয়ার প্রচারে আরও ইন্ধন জুগিয়েছে।
সম্প্রতি এক্স হ্যান্ডেল থেকে লালু প্রসাদ যাদবের কন্যা রোহিণী আচার্য তিনটি ট্যুইট করেন। যার সারমর্ম, "সমাজবাদী বলে নিজেকে যাঁরা পরিচয় দেন, তাদেরও মতাদর্শ সুবিধা বুঝে পালটে যায় আজকাল। অন্যের সমালোচনা করায় ব্যস্ত এই সব মানুষেরা নিজেদের ত্রুটিগুলি দেখতে পান না। ওঁর কোনও সন্তান যোগ্য উত্তরসূরী হয়নি, এতে অন্যদের উপর রাগ দেখিয়ে লাভ কী?” মনে করা হচ্ছে, কাপুরি ঠাকুরের শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে নীতিশ রাজনীতিতে স্বজন-পোষণ নিয়ে যে কটাক্ষ করেন, তারই জবাবে ট্যুইট তিনটি করেছিলেন রোহিণী। কিন্তু, কিছুক্ষণের মধ্যে সেগুলি মুছে ফেলেন তিনি। এরপরই গোদি মিডিয়া প্রচার শুরু করে নীতীশ বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন। রাহুলের 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা'র আমন্ত্রণ খারিজ করেছেন নীতীশ─বারবার এই কথাকেই তুলে ধরছে তারা।
বিজেপি নেতা গিরিরাজ সিং বলছেন, "নীতীশের জন্য আমাদের দরজা এখনও বন্ধ। তবে আমি কর্মীমাত্র। দলের কথাই শেষ কথা।" এর আগেও এমন গুঞ্জন উঠেছিল। নীতীশকে এ'ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে নীতীশ একে 'ফালতু কথা' বলে উড়িয়ে দেন। বিজেপি নেতা সুশীল মোদি বলেছিলেন, “নীতীশ যদি ক্ষমা চেয়ে নাকখত দেন, তাও তাঁকে ফেরাবে না বিজেপি। ওঁর ক্ষমতা কী? দু'টো ভোট সংগ্রহ করার ক্ষমতা নেই। ফিরিয়ে কী লাভ?” তারপরেও আবার নীতীশ বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন─এমন হাওয়া তৈরি করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বাংলায় ঢুকেই থমকে গেল কংগ্রেসের ‘ন্যায় যাত্রা’! কেন তড়িঘড়ি দিল্লি ফিরলেন রাহুল?
আরজেডি সাংসদ মনোজ কুমার ঝা বলেছেন, ‘‘আমরা বিহারের জনগণের কল্যাণার্থে এবং বিজেপিকে পরাজিত করতে একসঙ্গে সরকার গঠন করেছি। কিন্তু নীতীশকে নিয়ে যে জল্পনা তৈরি হয়েছে, তা জনজীবনকে প্রভাবিত করছে। শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রীই বিভ্রান্তি দূর করতে পারেন। আমরা আশা করি শীঘ্রই তিনি তা করবেন।’’ ২০১৭ সালে আরজেডি-কংগ্রেস জোট ত্যাগ করে বিজেপির সঙ্গে সরকার গঠন করেছিল নীতীশ নেতৃত্বাধীন জেডিইউ। ২০২২ সালে অগাস্টে আবার বিজেপি-বিরোধী জোটে ফেরেন তিনি।
ইন্ডিয়া ব্লক গঠনে নীতীশের বড় অবদান রয়েছে। কংগ্রেস-বিরোধী দলগুলিকেও একত্রে জোটে এনেছিলেন তিনি। কিন্তু সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত না হওয়ায় নীতীশ ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। বিহারে লোকসভা নির্বাচনের ৪০টি আসন রয়েছে। ২০১৯-এ যার ৩৩টি দখল করেছিল বিজেপি-জেইউডি জোট। ফলে নির্বাচনের আগে নীতীশের অবস্থান লোকসভা ভোটে বিহারের ভাগ্য নির্ণয় করবে অনেকখানি। তাই নীতিশকে ইন্ডিয়া জোটের যেমন প্রয়োজন, ঠিক তেমনই প্রয়োজন বিজেপির। প্রয়োজন হলে 'বন্ধ দরজা' খোলার আশ্বাসও দিয়ে রেখেছে তারা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, নীতীশ ইন্ডিয়া জোট ছেড়ে গেলে জোটের ক্ষতি তো হবেই না, উল্টে লাভ হবে। ঘনিষ্ঠ মহলে নাকি মমতা জানিয়েছেন, নীতীশ বিহারের জনতার চোখে অপ্রিয় হয়ে পড়েছেন। বেরিয়ে গেলে তেজস্বীদের কাজ করতে সুবিধা হবে। একসঙ্গে লড়লেও বিহারে ৫-৭টার বেশি আসন পাওয়া যেত না। তাই বিহারে যদি রাজনৈতিক বদলও হয়, তাতে ‘ইন্ডিয়া’র কোনও ক্ষতি হবে না।
এনডিএ জোট আর ইন্ডিয়া জোটের কিছু বৈশিষ্ট্যগত ফারাক রয়েছে। এনডিএ-র একমাত্র মুখ নরেন্দ্র মোদি। তাঁর কথাই শেষ কথা। বিজেপির মতামতের উপরে কথা বলার সাধ্য নেই কারও। ইন্ডিয়া জোটে নানা মতাদর্শের দল রয়েছে। তারা সবাই যে সব সময় কংগ্রেসের সমর্থক, তাও নয়। বিভিন্ন সময়ে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করে থাকে তারা। নীতীশের অবস্থান স্বতন্ত্র হতেই পারে। যে কোনও দলের স্বতন্ত্র চিন্তাভাবনাকে মর্যাদা দেয় ইন্ডিয়া জোট। আর কথা বলার স্বাধীনতা নিয়েই গোদি মিডিয়ার মাথাব্যথা। একে বারবার জোটের দুর্বলতা বলে তুলে ধরতে চায় তারা। জোটের সুস্থ মত বিনিময়কেই ভাঙন হিসেবে তুলে ধরে গোদি মিডিয়া।
নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদি রামমন্দিরে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছেন। ভাষণে তিনি বলেছেন, রামের পুজো করলেই সমস্ত সমাস্যা দূর হবে। রাম যদি সবই দেবেন, তাহলে নীতীশকে চাইছে কেন বিজেপি?