কেন ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন সন্দেহজনক?
Special Intensive Revision : ওই খসড়া তালিকা অনুযায়ী, বিহারের জামুই জেলায় চৌডিহা পঞ্চায়েতের আমিন গ্রামের ২৩০ জন বাসিন্দার ঠিকানা ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৩ নম্বর বাড়ি।
বিহারে বিশেষ নিবিড় সংশোধনের পর ভোটার তালিকা থেকে প্রায় ৬৫ লক্ষ নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। যা নিয়ে তোলপাড় সারাদেশ। এই ঘটনায় সংসদেও সরব হয়েছেন বিরোধীরা। এত কম সময়ে তালিকা প্রকাশের বিরোধিতা করেছেন তাঁরা। রিভিশনে ভুল থাকার সম্ভাবনা দেখছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ এবং সচেতন নাগরিক সমাজ।
১২ অগাস্ট সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, 'নাগরিকত্ব প্রমাণে আধার কার্ড যথেষ্ট নয়'। কার্যত নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকেই মান্যতা দিল সুপ্রিম কোর্ট। নির্বাচন কমিশন আগেই দাবি করেছিল, 'তালিকা ত্রুটিমুক্ত করাই ভোটার তালিকায় বিশেষ সংশোধনের উদ্দেশ্য'।
সম্প্রতি লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী একই নম্বরে একাধিক ভোটারের নাম থাকার বিষয়টি তথ্য সহ দেখিয়ে দিয়েছেন এবং ‘ভোট চুরি’র অভিযোগ তুলেছেন। সেখানে রাহুল গান্ধীও দাবি করেছেন, এসআইআর প্রাতিষ্ঠানিক চুরি। নির্বাচন কমিশন বিজেপির সঙ্গে মিলিতভাবে এই ভোটচুরি করেছে।
পশ্চিমবঙ্গেও ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের কথা জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, বিহারে করেছে বাংলায় করতে দেব না।
আরও পড়ুন- WB Electoral Roll : নির্বাচন কমিশনের অভূতপূর্ব নির্বাচনী তালিকা সংশোধন এবার বঙ্গেও
বিহারের মতো সারাদেশেই এই বিশেষ নিবিড় সংশোধনের মাধ্যমে নাগরিক অধিকার খর্ব করা হবে বলে মনে করছেন দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। দীপঙ্কর ভট্টাচার্য ইনস্ক্রিপ্টকে বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের এই কর্মসূচীকে এনআরসি-র থেকেও ভয়ঙ্কর।
বিহারে বিশেষ নিবিড় সংশোধনের পর নির্বাচন কমিশন যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে দেখা গিয়েছে, কারও বাড়ির নম্বর ০। কারও ০০, কারোর আবার আবার ০০০। তালিকায় এমন ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ। ওই খসড়া তালিকা অনুযায়ী, বিহারের জামুই জেলায় চৌডিহা পঞ্চায়েতের আমিন গ্রামের ২৩০ জন বাসিন্দার ঠিকানা ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৩ নম্বর বাড়ি। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, রিভিশনের জন্য কোনো নির্বাচনী আধিকারিকই নাকি আসেননি। বিরোধীদের সংশয় কি তাহলে সত্য? নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তালিকা কি শুধুই মনগড়া? প্রশ্ন হলো, যদি তাই হয়, তাহলে তা কীসের স্বার্থে করা?
এই প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেন এক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, তড়িঘড়ি ভোটার তালিকার সংশোধনে বড়সড় ভুল থেকে যেতে পারে। দেশের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। কারণ, তাঁদের পক্ষে চটজলদি নথি জোগাড় করা কঠিন। এবং এই ভুল সংশোধনে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে আরও ভুল ঢুকে পড়লে পরিণতি ভয়ঙ্কর হতে পারে।
এসআইআর নিয়ে প্রশ্ন উঠছে কেন? এতদিন ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হতো না। কিন্তু বিহারে ভোটার তালিকায় সংশোধনের ক্ষেত্রে ভোটার তালিকায় নাম তোলার ক্ষেত্রে নাগরিকত্বের প্রমাণ চাওয়া হয়েছিল। স্বাধীনতার পর আজ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়ায় ভোটার তালিকা সংশোধন হয়নি বলে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের। এমনকি ২০০৩ সালেও এই পদ্ধতি মেনে কাজ হয়নি। এছাড়া আজ পর্যন্ত ১৮ বছর বয়সি কোনো ব্যাক্তি ভোটার তালিকায় তাঁর নাম তুলতে চাইলে, ফর্ম নম্বর ৬ জমা করতে হতো। অন্যদের করতে হতো না। অথচ এই বিশেষ নিবিড় সংশোধনীতে প্রতিটি ভোটারকেই ফর্ম নম্বর ৬ জমা করতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন- কেন রাজ্যের সরকারী আধিকারিকদের বরখাস্ত করছে নির্বাচন কমিশন?
রিপোর্টাস কালেক্টিভ প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে, উত্তরপ্রদেশে ১,০০০-এরও বেশি ভোটারকে বিহারের বাল্মীকিনগর আসনের নতুন তালিকায় অবৈধভাবে তালিকাভুক্ত করেছে। দেখা গিয়েছে, ভোটারদের নাম, তাঁদের বয়স দুটি ডাটাবেসেই হুবহু এক ছিল। শুধুমাত্র, তাদের ঠিকানা আলাদা ছিল। হাজার হাজার ভোটারের নামের বানানে ১-৩টি অক্ষর পরিবর্তন করে নতুন তালিকায় নিয়ে নেওয়া হয়েছে। একই ভাবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে, দুটি ডাটাবেসের বয়সেও সামান্য এদিক ওদিকে করে নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। রিপোর্টার্স কালেক্টিভের ওই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, নতুন ভোটার তালিকায় বেশিরভাগ নামই কোনো প্রমাণপত্র ছাড়া যুক্ত করা হয়েছে। ওই সংবাদমাধ্যম এমন ৫,০০০-এরও বেশি সন্দেহজনক, জাল ভোটারের প্রমাণ পেয়েছে বলে দাবি করেছে।
সম্প্রতি কিছু সংবাদমাধ্যম ইলেকশন কমিশনের বিরুদ্ধে আরও কিছু গুরুতর অভিযোগ তুলেছে। যেমন, ৯ আগস্ট ২০২৫ সালে স্ক্রোলের একটি প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, রাহুল গান্ধীর ভোট চুরি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের পর, নির্বাচন কমিশন বিহারের ভোটার তালিকা অনলাইনে স্ক্যান করা যাবে এমন ছবি সরিয়ে শুধুমাত্র দৃশযোগ্য ছবি দিয়ে রেখেছে। যাতে কেউ স্ক্যান করে তথ্য জানতে না পারে। নিউজলন্ড্রি-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিহারের ভোটার তালিকায় ১০ জনের নাম শুধু একটি যতিচিহ্ন দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছিল।
এর জন্যই ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন নিয়ে জমছে প্রশ্নের পাহাড়। কার স্বার্থ রাখতে এই কর্মসূচী নিয়েছে নির্বাচন কমিশন? প্রশ্ন উঠছে দেশজুড়ে।

Whatsapp
