প্রশ্ন করলেই রাজরোষ! স্বাধীন মিডিয়াকে কেন ভয় পাচ্ছে মোদি সরকার?
News Click Vs Central Govt : সরকারের সমালোচনা করলেই হয় সিবিআই, নয় ইডি না হলে আয়কর দফতরের হানা।
কিছুকাল আগেই গুজরাত হিংসার উপর বিবিসি-এর তথ্যচিত্র ভারতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। টুইটার-ইউটিউব থেকে লিঙ্ক সরাতে বলে কেন্দ্র সরকার। একটি তথ্যচিত্র, যাতে গুজরাতে ও দেশের অন্যতম ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হানাহানির কথা বলা আছে, তা সরিয়ে ফেলতে একেবারে সরকারি তরফে এত কেন তোড়জোড়? বিবিসি-র মতো আন্তর্জাতিক মিডিয়ার উপর কেন কোপ মোদি সরকারের? কারণ একটিই। ওই তথ্যচিত্রে গুজরাতের হিংসার পিছনে মোদিকেই দায়ী করা হয়।
বিবিসি লিঙ্ক সরিয়ে নেয়। কিন্তু তাতেও রেহাই মেলেনি। মুম্ৱই এবং দিল্লিতে বিবিসির অফিসে আয়কর দফতর হানা দেয়। ৭২ ঘণ্টা ধরে কর্মী, সাংবাদিকদের জেরা করা হয়, একাধিক তথ্য, নথি, ই-মেল পরীক্ষা করে দেখা হয় খুঁটিয়ে। মোবাইল এবং ল্যাপটপ ক্লোন করে নেওয়া হয়। সব কিছুই চলে আসে কেন্দ্রের মুঠোতে। বিবিসি থেকে কলকাতা টিভি বা নিউজ ক্লিকের দফতর। সরকারের সমালোচনা করলেই হয় সিবিআই, নয় ইডি না হলে আয়কর দফতরের হানা।
অগাস্টে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে নিউ ইয়র্ক টাইমস। আ গ্লোবাল ওয়েব অফ চাইনিজ প্রোপাগান্ডা লিডস টু আ ইউএস টেক মুগল...এই রিপোর্টের সূত্র ধরেই মঙ্গলবার কাকভোরে নিউজ ক্লিক-এর একাধিক সাংবাদিকের বাড়িতে কেন্দ্রীয় এজেন্সি হানা দেয়। এই সাংবাদিকদের মধ্যেই রয়েছেন বাংলা যা ভাবছে-র নিয়মিত মুখ সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা।
নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর মতো কাগজও ছাপছে, নেভেল রায় সিংঘম এবং তাঁর নিউজ ক্লিক চিনের একটা ভয়ঙ্কর হাতিয়ার, যা নাকি চিনের রাজনৈতিক এজেন্ডা বিশ্ব জুড়ে প্রচার করে। নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর অনেক আগে থেকেই অবশ্য ভারত বলে আসছে নিউজ ক্লিক বিপজ্জকনক ওয়েব মিডিয়া। নিউ ইয়র্ক টাইমস নিজেই কখনও প্রোপাগান্ডাধর্মী। কখনও আবার সেই কাগজের রিপোর্টই রাজনৈতিক হাতিয়ার, সেই খবরের ভিত্তিতেই সাংবাদিকদের বাড়িতে এজেন্সির তল্লাশি চলে।
প্রসঙ্গত, পরঞ্জয় সাম্প্রতিক অতীতে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন করে দাবি করেন যে, তাঁর ফোন পেগাসাস স্পাইওয়্যার দিয়ে হ্যাক করা হয়েছে। আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে টানা লিখে গেছেন পরঞ্জয়। হিন্ডেনবার্গও তাঁর নাম উল্লেখ করেছে আদানির কীর্তিফাঁসে। মিডিয়া এথিক্স, ফেসবুক মুখ ও মুখোশের মতো বিতর্কিত বইয়ের লেখক সাংবাদিক পরঞ্জয় দীর্ঘকাল ধরেই আদানি গোষ্ঠী, ও তাদের শাসক ঘনিষ্ঠতার বিরুদ্ধে সরব। রবি নায়ার ও পরঞ্জয়ের বই 'দ্য রাফাল ডিল: ফ্লাইং লাইজ?’ নিয়েও প্রভূত তর্ক হয়। শাসকের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নিয়েও নিবিড় কাজ করেছেন তিনি।
পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা নিজেই জানিয়েছিলেন ২০১৮ সালের মে মাস থেকে নিউজক্লিক পোর্টাল পরিচালনা, মালিকানা এবং পরিচালনাকারী সংস্থার পরামর্শদাতা (কনসালট্যান্ট) ছিলেন তিনি। এই পাঁচ বছর ধরে তাঁর সাম্মানিকই তিনি গ্রহণ করেছেন। তিনি করও দেন, নিয়মিত আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন। পরঞ্জয়ের দাবি, তিনি PPK নিউজক্লিক স্টুডিও প্রাইভেট লিমিটেডের কর্মচারী নন, সম্পাদক মণ্ডলী বা পোর্টালে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ার অংশও তিনি নন।
নিউজক্লিকের অফিস এবং এর প্রধান সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থর বাড়িতে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট অভিযান চালায়। গত বছর, দক্ষিণ দিল্লির সাকেত এলাকায় অবস্থিত ৪.৫২ কোটি টাকার একটি ফ্ল্যাট এবং ৪১ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট ঘিরে অভিযোগ ওঠে প্রবীর পুরকায়স্থর বিরুদ্ধে। প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট (PMLA) অনুযায়ী, এই সাড়ে চার কোটি টাকার সম্পত্তি সোজা পথে উপার্জিত আয়ের অংশ নয় বলে অভিযোগ। ইডির মতে, ২০১৮ থেকে ২০২১ পর্যন্ত নিউজক্লিক জাস্টিস অ্যান্ড এডুকেশন ফান্ড ইনক ইউএসএ, দ্য ট্রাইকন্টিনেন্টাল লিমিটেড ইনক ইউএসএ, জিএসএএন এলএলসি ইউএসএ, সেন্ট্রো পপুলার, ডি মিডাস থেকে ৭৬.৮৪ কোটি, ১.৬১ কোটি, ২৬.৯৮ লাখ এবং ২.০৩ লাখের 'এক্সপোর্ট রেমিট্যান্স' গ্রহণ করেছে। অথচ এই সংস্থাগুলিতে নিউজক্লিক কোনও পরিষেবাই দেয়নি। ইডির সন্দেহ, জাস্টিস অ্যান্ড এডুকেশন ফান্ড ইনকর্পোরেটেড ইউএসএ-এর মাধ্যমে পাঠানো অনুদানগুলি আসলে সিংঘমের। সিংঘম প্রবীর পুরকায়স্থের 'ঘনিষ্ঠ' এবং 'চিনের বিশ্বস্ত'। ইডির অভিযোগ, সিংঘম এই নিউজ পোর্টালের বিষয়বস্তুকে প্রভাবিত করছে এবং 'পেইড নিউজ' প্রচার করা হচ্ছে। সাকেতের ওই ফ্ল্যাটের রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংস্কারের জন্য বিপুল অনুদানও নাকি চিনেরই সৌজন্যে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতাদের হেনস্থা করছে যারা তাঁরাই কেন ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল রিপোর্টের পর ফেসবুকের পাবলিক পলিসি ডিরেক্টর আঁখি দাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি? কেন আদানির বিরুদ্ধে ওঠা ভূরি ভূরি অভিযোগ নিয়ে সরকার এখনও নীরব? আঁখি দাস বিজেপির হয়ে ভোট প্রোপাগান্ডায় সাহায্য করেছিলেন বলে?
উত্তর খুঁজবে বাংলা যা ভাবছে। দেখুন আজ সন্ধ্যায়। সাংবাদিক, বিশ্লেষকরা কী বলছেন? আজকের পর্ব, প্রশ্ন করলেই রাজরোষ? প্রতি সোম, বুধ, শুক্র সন্ধে ৭ টা থেকে - কলকাতা ২৪x৭ এর ইউটিউব চ্যানেল এবং inscript.me এর ফেসবুক পেজে চোখ রাখুন।