কবে আসবে মোদির '১৫ লাখ'! ২০২৪ এর আগে কি ফিরতে চলেছে প্রতিশ্রুতির অর্থ?
Black Money Demonitization: নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর যতটা আক্রোশ তৈরি হয়, প্রথমে সেটাও ঢেকে গিয়েছিল, আচ্ছা শেষমেশ পাওয়া যাবে টাকা- এই ভাবনা থেকেও।
'আশায় আশায় বসে আছি
ওরে আমার মন,
কখন তোমার
আসবে টেলিফোন!'(মায়া, মহীনের ঘোড়াগুলি)
সেকি! এখনও টেলিফোন পাননি? আপনার মুঠোফোনে বার্তা আসেনি এখনও! আটটি বসন্ত থুড়ি মোদি জমানার আটটি বছর কাটিয়ে আসার পরেও এই প্রশ্নেই এখনও মশগুল জনতা! কল্পদেশের স্বপ্নফোনে সেই বার্তাই খুঁজে বেড়াচ্ছেন কেউ কেউ! কিন্তু কোথায় কী! বলিউড কাঁপানো 'মেরে করণ অর্জুন আয়েঙ্গে'র বহু চর্চিত সংলাপের মতোই ভাবনা আর জল্পনা, বিতর্কের মোহজালে বন্দি হয়েছে আশা-ভরসা আর টাকা পাওয়ার তাগিদ। নোট বন্দি (Demonitisation) হয়েছে, কালো টাকা উদ্ধারের স্বপ্ন ঢেউ তুলেছে মাঝরাতে!
কিন্তু কোথায় টাকা? কোথায় দেশের জনতার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ভরছে ১৫ লাখ! অনেকেই বলবেন, একথা সেদিন হয়নি। বিজেপির ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ ছিল না একথার! ভুল ব্যাখ্যা আর রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা পূরণেই মোদির বিরুদ্ধে রটনা হয়েছে শুধু।
কিন্তু প্রশ্ন ওঠে অন্যত্র। নোট বাতিল, কালো টাকা উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি এবং ১৫ লক্ষ পাওয়ার দোলাচলে আসলে ফটিক গোঁসাই হয়েছেন সাধারণ মানুষই! সমস্ত জল্পনা আর মোদি-বন্ধু অমিত শাহের 'জুমলা তত্ত্বে'র মধ্যেও রোদে দাঁড়িয়ে, টাক গরম করে যে সাধারণ মানুষ আঙুলে কালি মেখেছেন, তাঁদের কাছে কিন্তু এইসব প্রোপাগান্ডা ভেদ করে এখনও প্রতিষ্ঠিত টাকা পাওয়ার তত্ত্বই! মোদি বলেছেন, কী বলেননি- এই প্রশ্নের আবহেও একটা বড় অংশের জনতা, (ওই ধরুন খেটে খাওয়া শ্রেণি!) ঘাম ঝরিয়ে, রোদে দাঁড়িয়ে দিনের শেষে ভাত জোটে যাঁদের, যাঁরা প্রতি মুহূর্তে বিবর্তিত হন ভোট দেওয়ার কারিগর হিসেবে, তাঁদের কাছে এই টাকা পাওয়া আর টাকা দেওয়ার কিন্তু কোনও বিভেদ নেই এখনও। আর ঠিক এই কারণেই নোটবন্দির ৭ বছরের জন্মদিনে এসেও শত ব্যস্ততার মধ্যেও তাঁরা হতাশ!
কেন বলছি একথা? নোট বাতিল, কালো টাকা এবং ১৫ লক্ষ টাকা পাওয়ার আশা- সবমিলিয়ে ঠিক কেমন আছেন ওঁরা? কী বলছেন তাঁরা? তারকা-রাজনীতি সরিয়ে এই প্রশ্নের উত্তর পেতে বারাসত থেকে গড়িয়া, ধর্মতলা থেকে চাকদহ, মেদিনীপুর- ইনস্ক্রিপ্ট ঢুঁ মেরেছিল বঙ্গের জেলায় জেলায়, কোণায় কোণায়। সবজি বিক্রেতা থেকে টোটো চালক, শিক্ষিত বেকার থেকে ডেলিভারি শ্রমিক, কথা বলেছে সবার সঙ্গে।
চলতি নভেম্বরের ১ তারিখ থেকে ৭ তারিখ পর্যন্ত নেওয়া এই প্রতিক্রিয়ায় ঠিক যা যা পাওয়া গেল, তা বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট মহলের বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, ''বিতর্ক আর জল্পনা ছিল। নরেন্দ্র মোদির ভোট প্রতিশ্রুতিতে আদৌ এই শব্দবন্ধ ছিল কি না, তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। তবে এটাও সত্যি একেবারে তৃণমূল স্তরের সাধারণ মানুষের মধ্যে কিন্তু এর প্রভাব ছিল মারাত্মক! ২০১৪-এর নির্বাচন, এই বিনামূল্যে বিপুল টাকা পাওয়ার উপরে খানিকটা তো দাঁড়িয়ে ছিলই।'' ওই মহলের আরও দাবি, "নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর যতটা আক্রোশ তৈরি হয়, প্রথমে সেটাও ঢেকে গিয়েছিল, আচ্ছা শেষমেশ পাওয়া যাবে টাকা- এই ভাবনা থেকেও।''
বিষয়টি ঠিক কীরকম? তা বুঝতে গেলে উদাহরণের মুখোমুখি হতে হবে আমাদের।
আরও পড়ুন- হাহাকার, মৃত্যু, কান্না! ফিরে দেখা নোটবন্দির বিভীষিকাময় দিনগুলো
পবিত্র দাস। উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগর অঞ্চলের বাসিন্দা। আগে অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে ঘটিগরম বিক্রি করেন। পবিত্রর মন্তব্য, ''সে তো অনেকদিন আগের কথা! এখন খুব একটা আর ভাবি না। ভেবে কী করব বলুন তো? যে যায় লঙ্কায়, সে হয় রাবণ!'' ১৫ লক্ষ টাকা পাবেন ভেবেছিলেন? ঘটিগরম বানাতে বানাতে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়লেন পবিত্র নিজেই। তাঁর প্রশ্ন, ''আপনি ভাবেননি? টাকা পাব, কষ্ট কমবে, কে ভাববে না বলুন তো!'' এরপর আমাদের জবাব-তলবে সাড়া দিলেন বারাসতের এক টোটো চালক মধু হালদার। যদিও তিনি সুন্দরবন অঞ্চলের আদি বাসিন্দা। এখানে কাজের সূত্রে থাকেন। মধুর বক্তব্য, ''টাকা-টাকা যখন রব উঠল, খুব আনন্দ হচ্ছিল। আমি দিদিকে (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) বেশি পছন্দ করি, তবুও ভাবছিলাম যদি পাওয়া যায়। সরকার কালো টাকা তুলে আমাদের দিয়ে দিলে দারুণ হবে! কিন্তু পরে বুঝলাম এসব আসলে ভাঁওতা!''
মঞ্চে এবার কমলেশ তেলি। তিনি বাঙালি নন। তবে রাজস্থান থেকে এসেছেন ছোটবেলায়। এখানেই আইসক্রিম বিক্রি করেন কমলেশ। ১৫ লাখ শুনতেই চমকে উঠে বললেন, ''কী বলছেন! ঢুকেছে (ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে)?'' জবাবে না শুনতেই কমলেশের আক্ষেপ, "আমরা তো ভোট দিয়েই গেলাম, দাদা-দিদি কেউ তো কিছু ফিরিয়ে দিতে পারেন! ১৫ লাখ না পারুন, অল্প করে হলেও তো পারতেন দিতে। সবই ফাঁকা আওয়াজ।''
একটু এগোতেই পেলাম নিমাই মণ্ডলকে। ইঞ্জিন ভ্যানের যুগে এখনও পা ভ্যান টানেন নিমাই। বাড়িতে স্ত্রী, দুই কন্যা সন্তান। নিমাই বলছেন, ''টাকা আর আমরা! ওসব কী গরিবের হয়, যার আছে তার অনেক হয়। যার নেই সে তো ভিখারি। ভোট আছে, ভোট দিয়ে যাব। টাকা পেলাম না এটা ভাবলে কষ্ট বাড়বে!'' নিমাইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন আলামিন। কিশোর। সবেমাত্র ১৮ বছরে পা দিয়েছে সে। ভ্যান চালান তিনিও। ২০১৮ সালে বাবা হারিয়েছেন আলামিন। তাঁর এই প্রশ্নে উত্তর, ''যখন এই সব টাকা বাতিল হচ্ছিল আমি তো ছোট, স্কুলে পড়ি। এখন ছাড়তে হয়েছে সব। আমার বাবা বলত, আমরা নাকি লটারি পাব! পরে বুঝেছিলাম হয়তো এই কথা বলছিলেন।''
হৃদয়পুর এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন পিতা-পুত্র অমিত দাস এবং বিশ্বজিৎ দাস। দিন গেলে খুব একটা খারাপ আয় হয় না ওঁদের। অমিতের দাবি, "সবাই এক। মোদী বলেছেন, ভোট দিয়েছি। বুঝেছি এসব মিথ্যা কথাই আসলে থাকে। দিদিও আলাদা কই। আমরা যা আছি তাই থাকব। মন্ত্রীরা বড়লোক হবেন!''
বারাসত থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত যায় এমন এক বাসে কন্ডাক্টরের কাজ করেন শিবু মাহাতো (নাম পরিবর্তিত)। পশ্চিম মেদিনীপুরের যুবক। তাঁর মন্তব্য, ''আমাদের দিকে এই ব্যাপারটা খুব খেয়েছিল। আমরা তো ধরেই নিয়েছিলাম ১৫ লাখ আসছে। ঢেলে ভোট দিয়েছিলাম। কিন্তু সেসব যে কী হল, আপনি ভালো জানেন।'' গড়িয়া মেট্রোর কাছে একটি চায়ের দোকানে কাজ করেন রঞ্জন সাউ (নাম পরিবর্তিত)। আদি বাড়ি বিহারে। রঞ্জনের দাবি, ''এসব বললেও বিশ্বাস করতে হবে নাকি! হবে না জানতাম, তবুও ভোট দিয়েছি। আমাদের কিছু হবে না, সকালে উঠে সেই চা দিতে হবে।''
১৫ লাখের মায়ায় এখনও স্বপ্ন দেখেন ৭৫ বছরের বিলাসী দাস। কাজীপাড়ার বৃদ্ধার দাবি, ''এত টাকা পেয়ে করব কী! কিন্তু আমাদের মতো গরিবের জন্য এমন একটু তো করা যেত! কী জানি কেন এসব হল না আর।'' বাবুদের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন সন্ধ্যা সাঁতরা। তাঁর দাবি, "টাকা যখন বন্ধ হল (বাতিল) অবস্থা তো খারাপ! কাজ ছুটি করে মাত্র আড়াই হাজার টাকা জমা করেছি ব্যাঙ্কে। বাবুদের বাড়ি থেকে সব পুরনো টাকায় মাইনে দিল। সেটাও একটা সমস্যা ছিল।'' আর ১৫ লাখ? সন্ধ্যার উত্তর, ''আমরা পড়াশোনা জানি না, লোকজন যা বলবেন সেটাই তো মানব। সবাই বলেছেন, আমিও বিশ্বাস করেছি। এখন তো দেখছি পুরোটা ফাঁকা!"
বেশ কয়েকবছর আগে স্নাতকোত্তর, বিএড পাশ করে বসে আছেন চুঁচুড়ার তিমির বিশ্বাস। ১৫ লাখের কথকতায় তাঁর বক্তব্য, "১৫ লাখ! হাসব না কাঁদব? চাকরি নেই। এখনও গৃহশিক্ষকের কাজ করি। বয়স বাড়ছে। ১৫ লাখের মিথ্যা স্বপ্ন না দেখিয়ে যদি একটা চাকরি দিত, বাঁচতাম। রাজ্য-কেন্দ্র কেউ তো আর ভালো নয়!"
প্রায় একই কথা বলছেন দুর্গানগরের সুমন দে। তাঁর কথায়, "আমার মনে হয়, এটা যে ভোটের জন্য বলা বা প্রতিশ্রুতি যা পূরণ হওয়া সম্ভব নয়, একথা আমরা অনেকেই জানতাম। তাই, পরে তিনি দিলেন না এটা ভাবা ভুল। রাজনৈতিক দলের নেতারা যে দেবেন না, এটাই স্বাভাবিক!''
একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন, হাবড়ার দীপঙ্কর শিকদার। তাঁর কথায়, ''নোট বাতিল, কালো টাকা উদ্ধার এবং ১৫ লাখ। এগুলো একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এটাও সত্যি এই টাকা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি যদি দেওয়া হয়, সেটার ফাঁদে একেবারে প্রান্তিক কিছু মানুষ পড়েছেন। কিন্তু আসলে তো এসব বিশ্বাস করা বোকামি। নির্বাচনের জন্য বলা আর কাজের কাজ, সেটা সকলেই একই করেন!''
বর্তমানের পড়াশুনার জন্য তামিলনাড়ুতে থাকেন কৌশিক দাস। আদতে নিউ ব্যারাকপুর এলাকার বাসিন্দা তিনি। বাংলা সাহিত্য এবং শিক্ষাবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা তাঁর। কৌশিকের এই বিষয়ে যুক্তি, ''আমি আপনি বা বাকিরা, বরাবর আলপাটকা, অর্থাৎ সোশ্যাল মিডিয়ার ভাষায় ট্রেন্ডিং বিষয়ের উপর বেশি আকৃষ্ট হই। আর রাজনৈতিক নেতারা তো সেটাই করেন। নির্বাচন এবং মানুষের মনযোগ টানতে একটা কিছু বলে দিতে হয়, স্বপ্ন দেখাতে হয়, সেটাই করে দেন। কিন্তু এর পর? দেখা যায়, ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই এই প্রতিশ্রুতি বা জনসভার বাণী হিসেবেই থাকে সবটা। কাজের কাজ হয় না কিছুই! তাই, ১৫ লাখের প্রসঙ্গ যে নির্বাচনী চমক ছিল না, একথা নিশ্চিত করে কীভাবে বলা হচ্ছে জানি না।'' একই সুরে এই 'জুমলা' প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বারাসত এলাকার বাসিন্দা শুভময় মল্লিক। তাঁর দাবি, "১৫ লাখের প্রতিশ্রুতি অবশ্যই কাজে লেগেছিল। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের পর একাংশের মানুষ ধীরে ধীরে মোদি বা বিজেপি বিমুখ হয়েছেন, আরেক অংশের মানুষ বিজেপির রাম মন্দির ইস্যু, সার্জিকাল স্ট্রাইক ইস্যুতে বিজেপির সঙ্গেই রয়ে গিয়েছেন। তাছাড়া যেকোনও প্রতিশ্রুতি এখন মানুষ খুব কম দিন মনে রাখে, ছ'বছর তো অনেক বড় সময়।''
আরও পড়ুন- লক্ষ কোটি টাকা ফিরল না আজও! নোটবন্দির ছ’বছর পর কী অবস্থা ঋণখেলাপিদের
কলকাতার বাঘাযতীনের বাসিন্দা, একটি বহুজাতিক অ-ব্যাঙ্কিং সংস্থার কর্মী সহেলী চক্রবর্তী বলছেন, ''২০ শতাংশ গরিব মানুষের ভোট এই ১৫ লক্ষ টাকার প্রতিশ্রুতিতেই মোদির ঘরে গিয়েছে। যদিও বাকি ৮০ শতাংশই যোগ্য বিকল্প না থাকার ফলে ঘটেছে। আর প্রতিশ্রুতি যেহেতু ভঙ্গের জন্যই, তাই এটা নিয়ম বলেই মনে হয়।'' সহেলীর দাবি, ''নোটবন্দির ফলে একটাই উপকার হয়েছে তা হল, এখন বাচ্চাদের কাছে পয়সার ব্যাগ বেশ আকর্ষণীয় লাগে কাগজের রামধনু দেখতে পায় বলে৷ তাছাড়া সাধারণ মানুষের ওই প্রথম ক'টা দিনের চরম ভোগান্তি আর ছোট কারবারিদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়া ছাড়া কোনও বদল আসেনি।'' একই সুরে আক্ষেপ বেসরকারি কোম্পানির আধিকারিক মোহন মণ্ডলের। তাঁর দাবি, "১৫ লাখ পাব, এ জিনিস আমি আশা করিনি, এমন বলব না। একটা প্রভাব তো ছিলই।''
কিন্তু সত্যিই সেদিন কী বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি? ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মুখ গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একাধিক জনসভায় বলেন, ''বিদেশের ব্যাঙ্কে দেশের যে পরিমাণ কালো টাকা রয়েছে, তা উদ্ধার করে আনলে প্রত্যেক নাগরিককে ১৫-২০ লাখ টাকা এমনিতেই দেওয়া যায়! কালো টাকা ফেরত আসবেই।'' দাবি, সরাসরি তিনি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি না দিলেও পরোক্ষে কালো টাকা উদ্ধার এবং বিপুল টাকার পরিমাণ ভাগ করে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে মানুষের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি করেছিলেন এই টাকা পাওয়ার জন্য। অর্থাৎ নিজের মুখে না বলেও ভোটের আগে মানুষকে বিশ্বাস করতে শিখিয়ে দেওয়া যে, দেশের কালো টাকা উদ্ধার আর ১৫ লাখ পাওয়া শুধুই সময়ের অপেক্ষা।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, এই বিশ্বাস আর পাইয়ে দেওয়ার একটা পরোক্ষ ইঙ্গিতই দেশজুড়ে ফল দিয়েছিল। যেখানে ঘরে ঘরে মোদির জয়গান এবং মোদি বিরোধিতার যোগ্য মুখের অভাবে দুইয়ে দুইয়ে চার হয়েছে পরিস্থিতি। যেখানে না বলেও সেই জল্পনায় ভোটের আগে জল ঢালেননি মোদি নিজেও। যা প্রায় কয়েক বছর পরে ক্ষমতায় এসে অমিত শাহ ভোটের প্রতিশ্রুতি হিসেবেই স্বীকার করে নেন।
যদিও এই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নের আগুনে ঘি ঢালে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর, রাত ৮টায় সেই মোদি বয়ান এবং ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের মধ্যেও ছিল কালো টাকা ফিরিয়ে আনার কৌশল। অর্থাৎ মুখে বলছি না দেব, কিন্তু হাবে ভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছি, একের পর এক পদক্ষেপে আরও নিশ্চিত করতে সাহায্য করছি পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতিতে। যে পাওয়ার দিকেই ছুটে চলেছেন খুড়োর মতো একের পর এক জনতা। কিন্তু নিটফল?
''অন্ধের আবার দিনরাত। পাওয়ার আশায় বসে থাকলেই কি আর পাওয়া যায় গো বড়দা?'' বসিরহাট স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা এক অন্ধ যুবকের এই মন্তব্যেই শেষ হয়েছিল আমাদের অনুসন্ধান পর্বও!