ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি থেকে মুছে দিতে হবে তাঁরই পোস্টার! কেন এমন নির্দেশ বাংলাদেশে?
Ritwik Ghatak Bangladesh Home: বাড়িটি সংস্কারের দাবি তুলেছিলেন রাজশাহীর সংস্কৃতিকর্মীরা। অভিযোগ, গত ৬ অগাস্ট বাড়িটি পুরোপুরি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
দেশভাগের ঘা চিরকাল জিরোতে দেয়নি তাঁকে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের নাড়ি ছিঁড়ে যাওয়ার যন্ত্রণাই তাঁকে আপোষহীন এক শিল্পী করে তুলেছিল, যে শিল্পী কখনও মাথা নুইয়ে তাঁত বোনেননি। সেই কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক কুমার ঘটকের পৈতৃক ভিটে, ওপার বাংলার রাজশাহীতে। সেই ভিটের দেওয়াল থেকে তাঁরই তৈরি সিনেমার আঁকা পোস্টার মুছে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে! দেশভাগ হয়েছে, বিশ্বাস করেননি ঋত্বিক। আসলে ভাগ তো কবেই হয়ে গেছে চেতনায়, বিশ্বাসে!
শতবর্ষে পা দিচ্ছেন ঋত্বিক ঘটক। জন্মদিন উপলক্ষ্যে রাজশাহীর সেই বাড়ির দেয়ালে মেঘে ঢাকা তারা, অযান্ত্রিক, বাড়ি থেকে পালিয়ে-এর মতো সব সিনেমার পোস্টার আঁকা হয়েছিল দেওয়ালে। ৯৯তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষে ঋত্বিক ঘটকের সেই সমস্ত সিনেমার পোস্টারের ছবি দেওয়াল থেকে মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ্য, এই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল রাজশাহীর ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি।
আরও পড়ুন- সত্যজিৎ, ঋত্বিক নন; মধ্যবিত্ত সমাজকে থাপ্পড় কষিয়েছিলেন মৃণাল সেনই!
রাজশাহী নগরের মিঞাপাড়ায় ঋত্বিক ঘটকের এই পৈতৃক বাড়িটি অবস্থিত। রাজশাহীর এই বাড়িতেই শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের কিছু বছর কাটিয়েছেন ঋত্বিক ঘটক। এই বাড়িতে থাকারকালীনই রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহী কলেজে পড়েছেন ঋত্বিক। রাজশাহী কলেজ ও মিঞাপাড়ার সাধারণ গ্রন্থাগার মাঠে সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে নাট্যচর্চা করেছেন। ওই সময় ‘অভিধারা’ নামে সাহিত্যের কাগজ সম্পাদনা করেন ঋত্বিক। তাঁকে ঘিরেই তখন রাজশাহীতে সাহিত্য ও নাট্য আন্দোলন নতুন দিশা পায়। এ বাড়িতে থেকেছেন ঋত্বিক ঘটকের ভাইঝি মহাশ্বেতা দেবীও। দীর্ঘকাল ধরেই এই ঐতিহাসিক বাড়িটি সংস্কারের দাবি তুলেছিলেন রাজশাহীর সংস্কৃতিকর্মীরা। অভিযোগ, গত ৬ অগাস্ট বাড়িটি পুরোপুরি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজশাহীর সাংস্কৃতিক কর্মীদের অভিযোগ, রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের লোকজনই বাড়িটি ভেঙে ফেলেছেন।
ঋত্বিকে ঘটকের পরিবার কলকাতায় চলে যাওয়ার পরে ১৯৮৯ সালে তৎকালীন সরকার এই বাড়ির ৩৪% জমি রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালকে ইজারা দিয়েছিল। ঋত্বিক ঘটকের এই বাড়ির উত্তর অংশে গড়ে তোলা হয় হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের নতুন বিল্ডিং, আর দক্ষিণ অংশে থেকে যায় ঋত্বিক ঘটকের স্মৃতিবিজড়িত পুরনো বাড়ি। ২০১৯ সালে বাড়িটির একাংশ ভেঙে সাইকেল গ্যারেজ তৈরির অভিযোগ উঠেছিল কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তখন রাজশাহীসহ সারা বাংলাদেশে এই ঘটনার প্রতিবাদ হয়। ২০২০ সালে বাড়িটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় রাজশাহী জেলা প্রশাসন।
আরও পড়ুন- ‘ভাবা প্র্যাকটিস’ নয়, আজ ঋত্বিককে ভুলতে পারলেই কেন সুবিধা বাঙালির?
প্রথম আলো জানাচ্ছে, রাজশাহীর ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি দীর্ঘদিন ধরেই ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছে আর হাসিনা সরকারও তাতে সাড়াও দিয়েছিল। তবে এর বিরোধিতা করেছিল হোমিওপ্যাথি কলেজ। ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি প্রতিবছরই কিংবদন্তি শিল্পীর জন্মদিনে এই স্মৃতিবিজড়িত বাড়ির উঠোনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। অভিযোগ, গত ৬ ও ৭ অগাস্ট বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ৪ নভেম্বর ওই ভাঙা বাড়ির ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়
ঋত্বিক ঘটকের দক্ষিণ দিকের ভেঙে ফেলা এই বাড়ির দেওয়ালে ঋত্বিক ঘটকের নানা সিনেমার পোস্টার আঁকা হয়েছিল। ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেন মাসুদের অভিযোগ, শেষ দিনের অনুষ্ঠান চলাকালীন হোমিওপ্যাথি কলেজের একজন পিওন এসে তাঁকে জানান, হাসপাতালের অধ্যক্ষ তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন। অধ্যক্ষ তাঁকে বলেন, দক্ষিণের দেওয়ালে 'কীসব' আঁকা হয়েছে, তা যেন মুছে দিয়ে যান সোসাইটির লোকেরা। এই বিষয়ে জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে একটি স্মারকলিপিও জমা দিয়েছে সোসাইটি। প্রথম আলো-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোমিওপ্যাথিক কলেজের অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, মাহমুদ হোসেন বলেছিলেন, অনুষ্ঠান শেষে কলেজ যেরকম ছিল, সেরকমই করে দিয়ে যাবেন তারা। এ ছাড়া নাকি কোনও কথাই হয়নি তাঁদের।