পরিবারে টানাপোড়েন চরমে! কেন পরিবার ছাড়ার ঘোষণা লালু কন্যা রোহিনির?

Lalu Prasad’s family politics: রোহিনির অভিযোগ, “যারা সঞ্জয় আর রামিজের নাম নেন, তাঁদের পরিবারে থাকতে দেওয়া হয় না। অপমান করা হয়।”

বিহার নির্বাচনের ফল ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই আরজেডি শিবিরে যেন একের পর এক ধাক্কা। দল বড় ধরনের পরাজয়ের মুখে দাঁড়িয়ে আছে, আর সেই আঘাতের মাঝেই সবচেয়ে বড় বিস্ফোরণ ঘটালেন লালুপ্রসাদ যাদবের মেয়ে রোহিনি আচার্য। সরাসরি ঘোষণা করলেন, “আমি রাজনীতি ছাড়ছি। আর আমি এই পরিবারেও থাকছি না।” এই কথাই যথেষ্ট ছিল তোলপাড় ফেলে দেওয়ার জন্য।

বিহার বিধানসভা নির্বাচনে আরজেডি মাত্র ২৫টি আসন পাওয়ার পরই রোহিনি এক্স-এ পরপর কয়েকটি পোস্ট করেন। একটি পোস্টে তিনি স্পষ্ট বলেন, পরিবারে তাঁর আর কোনো জায়গা নেই। রাজনীতি থেকেও সরে দাঁড়াচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করেন, দলের ভেতরে কয়েকজনের ইচ্ছেতেই তাঁকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তাঁর পোস্টে উঠে আসে দু'টি নাম— ১) সঞ্জয় যাদব: তেজস্বী যাদবের ঘনিষ্ঠ, আরজেডির রাজ্যসভার সাংসদ, ২) রামিজ: তেজস্বীর পুরনো বন্ধু ও প্রভাবশালী সহচর। রোহিনির অভিযোগ, “যারা সঞ্জয় আর রামিজের নাম নেন, তাঁদের পরিবারে থাকতে দেওয়া হয় না। অপমান করা হয়।” এমনকি তিনি লেখেন, “যা কিছু হচ্ছে, আমি সব দোষ নিজের কাঁধে নিচ্ছি। এটাই তাঁরা চেয়েছিলেন।”

আরও পড়ুন

এত বড় পরাজয় আগে একবারই দেখেছিলেন লালুপ্রসাদ যাদব

তিনি পেশায় একজন ডাক্তার। ২০২২ সালে তিনি নিজের কিডনি দান করেছিলেন লালু প্রসাদ যাদবকে। সিঙ্গাপুরে থাকেন স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে। ২০২৪ সালে সারণ থেকে লোকসভায় লড়েছিলেন, তবে সে বার তিনি হেরে গিয়েছিলেন। পরিবারের প্রতি তাঁর অবদান সবসময়ই আলোচনায় ছিল, তাই তাঁর আজকের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

লালু পরিবারে ভাঙনের খবর নতুন নয়। এর আগে বড় ছেলে তেজপ্রতাপ যাদবের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই অশান্তি চলছিল। এবার সেই ফাটল আরও স্পষ্ট করে দিলেন রোহিনি। কিছুদিন আগেই তিনি তেজস্বী-সহ পরিবারের কয়েক সদস্যকে সোশ্যাল মিডিয়ায় আনফলো করেছিলেন। নির্বাচনের সময়েও তাঁকে প্রচারে খুব একটা দেখা যায়নি।

তেজপ্রতাপ তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একদিন একটি ছবি পোস্ট করেন একজন মহিলার সঙ্গে এবং দাবি করা হয়, তাঁদের নাকি ১২ বছরের সম্পর্ক। ছবিটি ছড়িয়ে পড়তেই রাজনৈতিক মহলে হইচই পড়ে যায়। এর পর পরই লালুপ্রসাদ যাদব বলেন, তেজপ্রতাপের আচরণ আর পরিবারের মূল্যবোধ একসঙ্গে যায় না। এই কারণেই তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং পরিবারের তরফেও দূরে রাখা হয়। তেজপ্রতাপ অভিযোগ করেন, তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হয়েছিল। ওই ছবি এডিট করা। তাঁকে মানহানি করার জন্য ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমাকে আর আমার ভাই তেজস্বীকে নিয়ে কিছু লোক মিথ্যে গুজব ছড়াচ্ছে।”

আরও পড়ুন

মহিলাদের ভোটই বিহারের ‘গেমচেঞ্জার’?

তার আগে বিগত কয়েক মাস ধরেই তেজপ্রতাপকে পরিবার ও দলের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে দেখা যাচ্ছিল। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক ভাইবোনকে আনফলো করেছিলেন। এমনকি দলের কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েও তিনি প্রকাশ্যে ক্ষোভ দেখিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, নির্বাচনের ফলের পর এমনই এক সময়ে যখন দল পুনর্গঠনের ভাবনা শুরু করেছে, তখন রোহিনির মতো প্রভাবশালী মুখের প্রকাশ্যে পরিবার ত্যাগ ঘোষণা রাজনীতির মাঠে বেশ প্রভাব ফেলতে চলেছে। বিহারের রাজনীতিতে লালু পরিবার সবসময়ই খবরের কেন্দ্রে থাকে। কিন্তু এই প্রথম পরিবারের ভেতরকার কলহ এক সদস্য নিজেই প্রকাশ্যে এনে দিলেন। আরজেডির পরাজয়ের চেয়েও বড় আলোচনার বিষয় এখন রোহিনির এই সিদ্ধান্ত। আরজেডি-র ভেতর থেকেই প্রশ্ন উঠছে, তেজস্বীর নেতৃত্ব কি চ্যালেঞ্জের মুখে? এই প্রশ্ন এখন ঘুরছে পাটনা থেকে দিল্লি— সব রাজনৈতিক স্তরেই।

More Articles