রাস্তায় হাজার হাজার ছাত্র-যুব, কেন ক্ষোভে ফুঁসছে সার্বিয়া?
Serbian Protest 2025: ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে নভি সাদ রেলস্টেশনের প্রবেশদ্বারের ছাউনি ধসে ১৬ জনের মৃত্যু হয়। সরকারি অর্থে সংস্কার করা এই স্টেশনের ভেঙে পড়া গোটা দেশের ক্ষোভ বাড়িয়ে দেয়।
বিশ্বজুড়ে অচলাবস্থা। শাসকের দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশে দেশে গর্জে উঠছে আমজনতা। সেই তালিকায় নাম জুড়েছে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশ সার্বিয়ার। ১০ মাস ধরে শাসকের বিরুদ্ধে রাস্তায় সেদেশের সাধারণ মানুষ। প্রতিবাদকারীদের অভিযোগ, রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার ভুসিচের সরকারের দুর্নীতি এবং অব্যবস্থা দেশকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাস থেকে শুরু এই আন্দোলনে রাজধানী বেলগ্রেড-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
কেন ক্ষোভে ফুঁসছে সার্বিয়া?
২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে নভি সাদ রেলস্টেশনের প্রবেশদ্বারের ছাউনি ধসে ১৬ জনের মৃত্যু হয়। সরকারি অর্থে সংস্কার করা এই স্টেশনের ভেঙে পড়া গোটা দেশের ক্ষোভ বাড়িয়ে দেয়। নাগরিক সমাজের একাংশের অভিযোগ, খারাপ মানের নির্মাণকাজ আর দুর্নীতির কারণেই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেই থেকেই শুরু হয় জনরোষ। এখান থেকেই মানুষের মধ্যে একদিকে ক্ষোভ, অন্যদিকে সরকারের জবাবদিহির দাবি প্রবল হয়ে ওঠে। শুরু হয় আন্দোলন। যার মূল দাবি হলো, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনা।
সার্বিয়ায় বিক্ষোভ (ছবিসূত্র: এক্স হ্যান্ডেল)
প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা নেতৃত্ব দিলেও ধীরে ধীরে স্বতস্ফূর্ত ভাবে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয় সমাজের বিস্তৃত অংশ। মিছিলে শাসকের বিরুদ্ধে স্লোগান থেকে প্ল্যাকার্ড, এমনকি গায়করা মিছিলের সামনের সারিতে গান গেয়েছেন। তবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সহিংস রূপ নিলে, প্রতিবাদকারীদের উপর পুলিশের অত্যাচারে মিছিল থেকে স্লোগান উঠেছে, “এবার দেখিয়ে দাও আমরা বালির বস্তা নই”।
আরও পড়ুন- ফের ফরাসি বিপ্লব? কেন পালাবদল চাইছে ফ্রান্স?
সার্বিয়ায় বিক্ষোভ (ছবিসূত্র: এক্স হ্যান্ডেল)
প্রতিবাদকারীদের দাবি
নভি সাদে দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে সার্বিয়াবাসী রাস্তায় নামলেও, তাঁদের ক্ষোভের বীজ বপন হয়েছিল অনেক আগেই। সার্বিয়ার নির্বাচনী ব্যবস্থার দুর্বলতা ও সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ ক্ষোভ তৈরি করেছিল জনসাধারণের মধ্যে। তাই এই আন্দোলন থেকে দ্রুত ও স্বচ্ছ নির্বাচনের দাবিও তোলেন প্রতিবাদকারীরা। যাতে শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়। একই সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা এবং নাগরিক অধিকার রক্ষার বিষয়েও প্রতিবাদকারীরা সোচ্চার হয়েছেন। বাংলাদেশ-নেপালের মতো এখানেও ছাত্র-যুবরা আন্দোলনের সামনের সারিতে রয়েছেন। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন, শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার, সুলভ শিক্ষা এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার সুরক্ষাকে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে তুলছেন।
সার্বিয়ায় বিক্ষোভ (ছবিসূত্র: এক্স হ্যান্ডেল)
পুলিশের ভূমিকা
শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে। টিয়ার গ্যাস, স্টান গ্রেনেড, নির্বিচারে গ্রেপ্তার— আন্দোলনকারীদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দেয়। সার্বিয়ায় আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় ৬০-৪০০ জন প্রতিবাদকারী গ্রেফতার হয়েছেন— ২০২৫-এর মার্চ মাসে দুর্নীতি বিরোধী র্যালি থেকে ২২কে জন গ্রেফতার করা হয়। ২০২৫-এর জুন মাসে যখন রাজপথ ব্লক করা হয়েছিল, তখন পুলিশ ৭৭ জন প্রতিবাদকারীকে আটক করে। এছাড়া ২০২৫-এর জুলাইতে লাগাতার আন্দোলনের সময় এক রাতে অন্তত ৭৯ জন গ্রেফতার হয়েছিলেন। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, গণতান্ত্রিক দেশে এভাবে ভিন্নমত দমন করা যায় না। তাঁদের দাবি, পুলিশি দমনপীড়ন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং এই ঘটনায় দায়ী কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করতে হবে।

Whatsapp
