বনতারা-য় বন্যপ্রাণ নিয়ে অবৈধ ব্যবসা! যে মারাত্মক অভিযোগ উঠছে আম্বানিদের বিরুদ্ধে
vantara Jamnagar: প্রশ্ন উঠছে, প্রত্যন্ত, অতি-উন্নত, দূষিত এবং অনুপযুক্ত প্রকৃতির জামনগরে কেনই বা বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হলো?
বনতারা। আম্বানি পরিবারের আরেক কীর্তি। সহজ করে বলতে গেলে, গুজরাতের জামনগরে অবস্থিত এই বনতারা-তে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। সদ্য উদ্বোধন হয়েছে বনতারার, তাও আমার নরেন্দ্র মোদির হাতে! সপ্তাহ গড়াতে না গড়াতেই দক্ষিণ আফ্রিকার বন্যপ্রাণী সুরক্ষা ফোরাম জামনগরের বনতারা প্রাণী উদ্ধার ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে বেশ কয়েকটি বন্য প্রাণী রপ্তানির তদন্ত করার জন্য সে দেশের পরিবেশ মন্ত্রককে চিঠি পাঠিয়ে অনুরোধ করেছে।
গভীরে যাওয়ার আগে বনতারার প্রেক্ষাপট সামান্য জানা প্রয়োজন। আম্বানি পরিবারের রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মালিকানাধীন বনতারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত ৪ মার্চ উদ্বোধন করেছিলেন। বিশালাকার বনতারা আসলে প্রাণী উদ্ধার কেন্দ্র, গুহা, সংরক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র। গুজরাতের জামনগরে রিলায়েন্স জামনগর শোধনাগার কমপ্লেক্সের মধ্যে অবস্থিত এই ৩,৫০০ একরের বেশি অভয়ারণ্যে প্রাণী কল্যাণ এবং সংরক্ষণ বিষয়ে কাজ করা হয়। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ এবং রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের বোর্ডের পরিচালক অনন্ত আম্বানির মস্তিষ্কপ্রসূত এই বনতারা।
আরও পড়ুন- আরও ১০০ চিতা আসছে ভারতে! কেন এই চিতা আনার হিড়িক পড়ল দেশে?
বনতারার ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এটি নাকি ২০০ টিরও বেশি হাতি এবং হাজার হাজার অন্যান্য প্রাণী, সরীসৃপ এবং পাখি, গণ্ডার, চিতাবাঘ এবং কুমির সহ অন্য প্রাণীদের অনিরাপদ পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করেছে। আইসিইউ, এমআরআই, সিটি স্ক্যান, এক্স-রে, আল্ট্রাসাউন্ড এবং এন্ডোস্কোপি ইউনিট সহ আধুনিক পশুচিকিৎসা প্রযুক্তিতে সুবিধা রয়েছে। ভারতের বহু প্রাণী অধিকার গোষ্ঠীরা অবশ্য বন্যপ্রাণীদের বেসরকারিকরণের বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। প্রশ্ন উঠছে, প্রত্যন্ত, অতি-উন্নত, দূষিত এবং অনুপযুক্ত প্রকৃতির জামনগরে কেনই বা বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হলো? জামনগর অত্যন্ত উষ্ণ, আর্দ্র অঞ্চল। এখানে বন্যপ্রাণীদের রাখার মতো উপযুক্ত আবহাওয়া নেই। বিশ্বের বৃহত্তম তেল শোধনাগার জামনগর রিফাইনারি থেকে সামান্য দূরে কেন এই অভয়ারণ্য তৈরি করল আম্বানিরা?
WAPFSA বা ওয়াইল্ডলাইফ অ্যানিমাল প্রোটেকশন ফোরাম অফ সাউথ আফ্রিকা দক্ষিণ আফ্রিকার ৩০টি সংস্থার একটি জোট যারা বন্য প্রাণীদের সুরক্ষা এবং তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের মতো বিষয়ে সরকারের সঙ্গে মিলে কাজ করে। গত ৬ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবেশ মন্ত্রী ডিওন জর্জের কাছে একটি চিঠি লিখে WAPFSA বলেছে, প্রচুর পরিমাণে বন্য প্রাণীর বিভিন্ন জীবন্ত প্রজাতি যেগুলি বনতারায় আমদানি করা হচ্ছে, সেই বিষয়ে CITES একটি বৈধ উদ্বেগের প্রসঙ্গ উত্থাপিত করেছে। CITES হচ্ছে কনভেনশন অন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইন এনডেঞ্জারড স্পেসিস। অর্থাৎ এটি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী এবং উদ্ভিদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে।
আরও পড়ুন- পুড়ে খাক জঙ্গল, মরছে বন্যপ্রাণী! কী কারণে ছারখার হিমাচল প্রদেশের প্রকৃতি?
WAPFSA পরিবেশ মন্ত্রককে বলেছে, সচিবালয় ভারতে জীবিত প্রাণী আমদানির তথ্য পেয়েছে, যার মধ্যে গুরুতর বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে, গ্রিনস জুলজিক্যাল রেসকিউ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার বা বনতারার প্রতিনিধিরা CITES সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের বুঝিয়েছিলেন যে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, কেন্দ্র ভারতের বাইরে কঠিন পরিস্থিতি থেকে প্রাণীদের উদ্ধার করেছে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে ভারতে আমদানি করেছে।
প্রশ্ন উঠছে, এই লেনদেন আদৌ বৈধ উপায়ে হয়েছে তো? চিঠিটিতে বিশেষভাবে চিতাবাঘ, চিতা, বাঘ এবং সিংহ দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বনতারায় রফতানি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। WAPFSA-র উদ্বেগ, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পশু ভারতে নিয়ে এসে তাদের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হতে পারে এবং হচ্ছেও! তাহলে, আম্বানিদের দুর্নীতিতে বন্যপ্রাণ তবে সাম্প্রতিকতম সংযোজন? কেন প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও জামনগরে, আম্বানিদের নিজস্ব জায়গাতে বন্যপ্রাণীদের আমদানি করা হচ্ছে? বন্যপ্রাণদের নিয়ে ব্যবসার এমন সাংঘাতিক অভিযোগ থেকেও কি নিরাপদ দূরত্বেই থেকে যাবেন আম্বানিরা?